তারা কোথায় যাবে ?

Akborআকবর হোসেন
তারা এখন কোথায় যাবে? তাদেরতো যাবার জায়গা নেই। যেখানে যাবে সেখানেই হামলা। কিন্তু যাবেইবা কেনো! এই মাটি তো তাদের। তারা এর বৈধ অধিবাসী। এটা তাদের দেশ, পৈতৃক ভূমি। ইসরাইলী জবরদখলকারীরা তাদের উপর চেপে বসেছে। বৃহৎ শক্তিরা আরেকজনের ভূমি তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। সে অধিকার তাদের কে দিলো? ধীরে ধীরে তারা পুরোটাই দখল করে নিতে চাচ্ছে। চারদিক বন্ধ করে দিয়ে মানুষ মারার নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠেছে তারা। আকাশ, স্থল ও জলপথে আক্রমণ আর আক্রমণ। খই ফোটার মতো মূহুর্মুহু বোমার আঘাতে জর্জরিত একটি ছোট্ট ভূখন্ড – গাজা। ইসরাইলী নৃশংসতা আর পাশবিকতায় প্রাণ দিচ্ছে অসহায় মানুষ। আর অন্যরা পাহাড়ের উঁচুতে উঠে মৃত্যুর আহাজারী শুনে আনন্দ-উল্লাস করছে! তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। টার্গেট করেই যেনো শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের মায়ের কোলে আশ্রয় নেই। ঘুম পাড়ানি গান শোনার সুযোগ নেই। খেলাধুলা আর মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়ানোর মতো কোন পরিবেশ নেই। চারদিকে শুধু বোমা আর গুলি। বুলেটের আঘাতে হায়েনারা গুড়িয়ে দিচ্ছে বাড়িঘর। তারা ধ্বংস করে দিতে চায় সবকিছু। মারা যাচ্ছে মায়েরাও। একই পরিবারের অনেক সদস্যকে একসাথে মেরে ফেলা হচ্ছে। স্বজনদের লাশ খুঁজতে এসেও গুলির শিকার হতে হচ্ছে। ঘর নেই, বাড়ি নেই, খাবার নেই, বিদ্যুত নেই, নেই বিশুদ্ধ পানি। কি মানবেতর জীবন এই রোজার মাসে! এর আগেও তারা রোজা মাসে হামলা চালায়। টিভি স্ক্রীনে তাদের অবর্ণনীয় দুর্দশার এই দৃশ্য বড়ই বেদনাদায়ক! হাসপাতালে রক্তের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে মানুষ। ইসরাইল ঘোষণা দিয়ে মানুষ মারছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহ, আমীর-উমরাদের কাছে ক্ষমতাই আসল! কতো বড় নিষ্ঠুর! হাসপাতালগুলোতেও তারা হামলা চালাচ্ছে। বাধা দিচ্ছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে। হাসপাতালে জায়গা নেই, পর্যাপ্ত ঔষধ নেই, রক্ত নেই, নেই অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরজ্ঞাম। তারপরও ডাক্তারের প্রাণপন দিবানিশি নিয়োজিত রয়েছেন চিকিৎসায়। গাজার হাসপাতালের নরওয়ের সেই ডাক্তারের আবেগঘন চিঠিতো অনেকেই পড়ে থাকবেন।
মিডিয়া কর্মীরাও নির্বিঘেœ কাজ করতে পারছে না। আল জাজিরার মতো বিখ্যাত টিভি ষ্টেশনও আক্রমণের লক্ষ্যস্থল হতে হয়েছে। সত্য সংবাদ প্রচার করার দায়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে সিএনএন সহ আরো বিশ্বখ্যাত মিডিয়ার সাংবাদিকদের। তার মানে হচ্ছে তারা মানুষ মারবে কিন্তু এই কথাটুকুও দুনিয়াবাসীকে দেখানো যাবেনা। তাছাড়া বিবিসিসহ মেইনষ্ট্রীম মিডিয়াগুলো নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যেই তাদের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। যারা তাদের দেশ রক্ষায় শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামরত মুক্তিসেনা তারা কিনা সন্ত্রাসী আর যারা আক্রমণকারী, আগ্রাসী শক্তি তারা হচ্ছে গণতান্ত্রিক। আসলে মুসলমানদের তারা মানুষ হিসেবেই গণ্য করছে না। তাদের রক্তের যেনো কোনই মূল্য নেই! অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই সন্ত্রাসী। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তানে কতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার কি কোন হিসেব আছে? ইরাকেতো আক্রমণই করা হলো উইপেনস্ অব মাস ডিসট্রাকশন এর অভিযোগ তুলে। অথচ সেখানে কোন মানবতাবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া গেলো না। সারা দুনিয়ার মানুষ এর প্রতিবাদ করলো কিন্তু কোন কাজ হলো না। বুশ-ব্লেয়ার সাহেব ইরাক আক্রমণ করলেন। এদেশে ২০০৩ সালে মিলিয়ন মার্চ হলো যুদ্ধের বিরদ্ধে। কিন্তু তাদের দমানো গেলো না। ফেইক ডসিয়ার বানিয়ে ইরাক যুদ্ধকে জাষ্টিফাই করা হলো। বলা হলো ইরাক থেকে সাইপ্রাসের বৃটিশ স্থাপনায় ৪৫ মিনিটের ভেতর আক্রমণ করা যাবে। ইরাক তাদের জন্য হুমকি। সাদ্দামমুক্ত বিশ্ব নাকি অনেক শান্তিময় হবে। বিন লাদেনের জন্যে আফগানিস্তান ধ্বংস করা হলো। অথচ এখন সাদ্দাম নেই, গাদ্দাফি নেই, বিন লাদেনও নেই (!)। কিন্তু শান্তি কোথায়? এতোসব করার পরও ব্লেয়ার সাহেবকে মধ্যপ্রাচ্যের পিস এনভয় করা হলো। জানিনা তার মিশন কি! জেরুজালেমের সাবেক এংলিকান বিশপ রিয়া ফিলিস্তিনের ব্যাপারে খুবই সোচ্চার। তার ভাষায় মধ্যপ্রাচ্যে জাস্টিস না থাকলে সারা দুনিয়ায় শান্তি আসবে না।
ইসরাইল নিজে সন্ত্রাস করে নির্বিচারে নিরীহ সিভিলিয়ানদের মেরে কোন্ সন্ত্রাস দমন করছে? দুনিয়াতে কি কোন বিচার নেই? এটা পরিস্কার গণহত্যা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যুদ্ধাপরাধের। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে ইসরাইল বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজাকে। তারা বার বার জাতিসংঘের রিজলিউশনকে অমান্য করেছে। ভয়ংকর সব অস্ত্র দিয়ে শায়েস্তা করতে চায় গাজাবাসীকে। এর তুলনায় হামাসের রকেট হামলা কিছুই নয়। তারা বলছে, তাদের নাকি ডিফেন্ড করার অধিকার আছে। আর গাজাবাসীর তাদের নিজের মাটিতে থাকার কোন অধিকার নেই! এই অবিচার দুনিয়াবাসী দেখছে। কিন্তু কেউ কথা বলছে না। মুখে তালা দিয়ে বসে আছে শক্তিধরেরা। মুসলিম দেশগুলোও নীরব। তার্কি ছাড়া বাকীদের কোন আওয়াজই নেই। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সৌদিদের বিরুদ্ধেও। তারা নাকি ইসরাইলের সাথে আছে। মিশরে মুরসীকে সরিয়ে সিসিকে বসানো হয়েছে। এ অঞ্চলে কোন গণতান্ত্রিক ও ইসলামিক শক্তিকে কেউই সহ্য করছেনা। ব্রাদারহুড, হামাস তাদের জন্য হুমকি। আরব বসন্ত তাদের মসনদে কাপন ধরিয়েছে। ক্ষমতাকে তারা যেকোনভাবে নিরাপদ রাখতে চায় রক্তের বিনিময়ে হলেও।
বর্তমানের এই সংকটে বৃটেনের মানুষ অকাতরে দান করছে। কমিউনিটি টিভি চ্যানেলগুলোতে দিনরাত ফান্ড রেইজ হচ্ছে গাজার অসহায় মানুষের জন্যে। শুধু তাই নয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভে সারা দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষের সাথে রাস্তায় নেমেছে এখানকার মানুষ। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সবাই এক প্লাটফর্মে। দুনিয়ার বিবেকবান মানুষ এক কাতারে। দাবী উঠেছে ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা চাই। এই প্রতিবাদ চলবে যতক্ষন ইসরাইল অন্যায় আক্রমণ বন্ধ না করবে। অধিকৃত ভূমি ফিলিস্তিনীদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। বসতবাড়ি তৈরি একেবারেই বন্ধ করে দেবে। বন্দী ফিলিস্তিনীদের মুক্তি দেবে। বন্দীদশা থেকে মানুষকে মুক্তি না দেবে। মানুষ হিসেবে তাদের মর্যাদা দেবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলের বিচার করতে হবে। সর্বোপরি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে হবে। ফিলিস্তিনীরা আর কোথাও যাবে না। তারা তাদের মাটিতেই থাকবে।
লন্ডন, ২৩ জুলাই ২০১৪

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button