লাল গোলাপের আড়ালে অভিশপ্ত আঁধার

valentineগত বছর দু’তিনেক আগে আমার মোবাইলে বাংলালিংক থেকে দেয়া একটি এস এম এস দেখে আমি রীতিমত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
“ভ্যালেন্টাইনস ডে’র অমুক অফার জিতে সঙ্গীর সঙ্গে অমুক রিসোর্টে কাটিয়ে আসুন এক রাত।” যে বাংলার লজ্জাবতী মা’রা স্বামীর সামনেও ঘোমটা খুলতে শরম পেত তাদের সন্তানদেরকে সরাসরি লিভ টুগেদারের আমন্ত্রণ!!! হয়তো সেই ছিল প্রকাশ্যে সুযোগ করে দেয়ার সূচনা। তারপর শুরু হল সম্পূর্ণ অভিশপ্ত সম্পর্ককে দু:সাহসিকতা  আখ্যা দিয়ে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উপলক্ষে ক্লোজ আপের ‘কাছে আসার গল্প’ প্রতিযোগিতা। মানে তুমি যা করছ তা গোপন রাখবে কেন? শেখাও,তাতে ভাগীদার কর অন্যকেও। এরপর দেখলাম জঘণ্য এক ইভেন্ট যা ভাষায় প্রকাশ করতে রুচিতে বাঁধে। আর এবার চালু হল কাপ্ল আই মিন্ কপোত কপোতীদের জন্য  ক্লোজ আপের উদ্যোগে  ‘ফ্রী রিকশা রাইড’। অর্থাৎ সারাদিন বিনে পয়সায় মেতে থাকো অভিশপ্ত উল্লাসে। আর দেরী নয়, যারা পয়সার অভাবে এতদিন প্রেমিকা বানানোর সামর্থ্য রাখেনি তারাও নেমে পড় এ খেলায়। এভাবে করে অনভ্যস্ত একটি জাতিকে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ নামের মোড়ক দিয়ে অভ্যস্ত করা হচ্ছে ফ্রী মিক্সিংয়ে, লিভ টুগেদারে।
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। পশ্চিমা থেকে আমদানী করা এমন এক বিষাক্ত সিরিঞ্জের নাম – যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুশ করছে দুষিত সব ব্যাধি।
যে অবৈধ সম্পর্ক ইউরোপ আমেরিকার লাখ লাখ পরিবারকে অভাগা করেছে, পরিবার প্রথার মত প্রশান্ত অধ্যয়কে ভেঙ্গে চূর্ণ বির্চূর্ণ করেছে,পরকীয়ার দাবানলে ছাড়খার করেছে দাম্পত্য সুখ, পিতা-মাতার পবিত্র স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে কোটি কোটি শিশুকে, অবৈধ শিশুর অভিশপ্ত জন্মকে দিয়েছে বৈধতা,যে অনৈতিক বন্ধন অবৈধ গর্ভপাতের হার বাড়িয়ে দিয়েছে,আত্মহত্যাকে সহজ করেছে, বাড়িয়ে দিয়েছে ধর্ষণ-টিজিং-নারী নির্যাতনের বিভীষিকা; সেই অবৈধ অনৈতিক  নিষিদ্ধ সম্পর্ককে উসকে দিতে বাংলাদেশে আজ ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র আমদানী।
বাঙলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আধুনিকতার মোড়কে অশ্লীলতা, আর উচ্ছৃংখলতার উদ্দাম নৃত্যে ভাসাতে ১৯৯৩ সাল থেকে এদেশে আবির্ভূত হয়েছে অনৈতিকতার দিকে হাতছানি দেয়া এ দিবস।
আর এই গত কয়েক বছর ধরে দেশে বিপুল সমারোহে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থাসমূহের আয়োজনে উদযাপন করা হচ্ছে এই দিবস। এখন আবার ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহ  সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে। ৭ই ফেব্রুয়ারী রোজ্ ডে-লাল গোলাপ দাও, ৮ তারিখ প্রোপোজ ডে- উজাড় করে জানাও তোমার মনের কথা, ৯ তারিখ চকোলেট ডে-না তেমন কিছু না ভাগা ভাগি করে চকোলেট খাও, ১০ তারিখ টেডি ডে –  সম্পর্ককে আরেকটু গভীর করতে একটা টেডি বিয়ার গিফ্ট দাও, ১১ তারিখ প্রোমিজ ডে – চুক্তি কর নিজেকে বিকিয়ে দেয়ার, ১২ তারিখ হাগ ডে আর ১৩ তারিখ কিস ডেতে কি হবে তা আর বলার ভাষা নাই। ১৪ তারিখ তো সব শেষ।   ইউরোপ  আমেরিকাকে অশান্তির বিষবাষ্পে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডের’ রঙে আজ এমনই পাগলা মাতামাতি বাঙ্গালী এক শ্রেণীর তরুণ প্রজন্মের। লাল শাদা ড্রেসের অফার, ফোন কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন প্ররোচনাদায়ী অফার, এমনকি বিভিন্ন রিসোর্টগুলোতে রাত্রিযাপনের সরাসরি জঘণ্য অফার দিয়ে জাতীয়ভাবে উসকে দেয়া  হচ্ছে অনৈতিকতাকে উৎসাহিতকারী এই অভিশপ্ত দিবস। আমাদের প্রজন্মও বিলীন হচ্ছে ধার করা সংস্কৃতির রংয়ে। অথচ নারী পুরুষের সম্পর্ক মহান আল্লাহ বিবাহ ব্যতীত সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছেন।
“ঈমানদার ও আহলে কিতাবদের নিষ্কলুষ অবিবাহিত মেয়েরা তোমাদের জন্য বৈধ। তবে বিবাহের মাধ্যমে মোহরানা আদায় করে তোমরা তাদের রক্ষক হবে। তাদের সাথে অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হতে পারবেনা বা লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবেনা”। (সূরা মায়েদা- ৫)
আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত এ সম্পর্কের মধ্যে কোন আধুনিকতা নেই, আছে আদিম বন্যতা। কোন সৌন্দর্য্য নেই, আছে পুতি গন্ধময় নোংরামী। শেষ পরিণতিতে আছে নিদারুণ নির্মমতা হয় ধর্ষণ, না হয় অবৈধ গর্ভপাত, না হয় নবজাতককে  ডাস্টবিনে নিক্ষেপ অথবা জীবনের কাছে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যা। লাল গোলাপের পাপড়ি বেয়ে কিছু মেয়ের জীবনে নেমে আসে সীমাহীন আঁধার,আর কিছু মেয়ে হারিয়ে যায় রাত্রির অতল তলে। পত্র – পত্রিকায় যা আমরা অহরহ দেখতে পাই।  আল্লাহর বিধান অমান্য করার পরিণতি দুনিয়াতেই এমন ভয়াবহ হতে বাধ্য। আর আখেরাতে আছে কঠিন শাস্তি।
ইসলামী সমাজে স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালবাসা বিনিময় করাও হয় গোপনীয় এবং তা হয় গৃহ অভ্যন্তর- আর এটাই ভালবাসার সৌন্দর্য্য। সেখানে এবার ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে অবৈধ ভালবাসা বিনিময়ের প্রকাশ্য এবং জঘণ্য ইভেন্ট খোলা, অফার দেয়া- এদেশের নব ভবিষ্যতকে পুরোপুরি ধ্বংস করার পরিকল্পনারই নামান্তর । কেননা যে জাতি নৈতিক শক্তির দিক থেকে দুর্বল থাকে, তার প্রতিরোধ ক্ষমতা ভিতর থেকে ঘুনের মত ক্ষয়ে যায়। আসলে কোম্পানীগুলো এই সমস্ত অফার আর ইভেন্টের মাধ্যমে আসলে এ জাতির মধ্যে পশ্চিমা বিষের আরো শক্তিশালী দু’টি ফোটাই ঢালতে চাচ্ছেন । ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য এই সমস্ত অফার আর ইভেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।
সচেতন বিবেক!
একবার ভেবে দেখুন তো, ভ্যালেন্টাইন্স ডের আনন্দ উদযাপনের নামে আমরা কোন কোন জিনিসকে সহজ এবং সুলভ করে দিচ্ছি?
১. মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ, সম্পূর্ণ হারাম একটি কাজকে প্রকাশ্যে বৈধতা দান করা হচ্ছে যা সরাসরি কুফরীর শামিল।
‘আর যে ঈমানের সাথে কুফরী করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মায়েদা -৫)
২. ব্যভিচারের সহজ স্বীকৃতি যা হারাম এবং ইতিপূর্বে মানুষ গোপনে করতেও অপরাধবোধবোধে ভুগতো।
৩. একটি অবৈধ সম্পর্কের সূচনা- যার পরিণতি পরবর্তীতে কখনই সুখকর হয়না। পত্র-পত্রিকা আর মিডিয়াতে যার অহরহ প্রমাণ মিলছে।
৪. সমাজে অবৈধ সন্তান জন্মদানের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত রাস্তা-ঘাটে, আহত বা নিহত নবজাতকের খোঁজ মিলছে যা একটি সমাজব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
৫. নারীদেহ সুলভ হয়ে যাচ্ছে, নারী নিজের সম্মান নিজে হারাচ্ছে; ফলে সমাজে ধর্ষণের পরিমাণ মহামারী আকারে বেড়ে যাচ্ছে।
৬. ঘরে  বাইরে নারী আজ শুধুই ভোগের পণ্যে পরিণত হচ্ছে। ১৪ তারিখে বন্ধুর সাথে উদ্দাম আনন্দে আত্মহারা হওয়া, নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করতে চাওয়া তরুণীটি দু’দিন পরেই হয়তো অকেজো হয়ে পড়ছে তার সঙ্গীর নিকট, প্রতারিত হচ্ছে, আত্মহত্যা করছে।
৭. এইডস্ সহ মারাত্মক সব যৌন ব্যাধি মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ছে।
আর তাই সুস্থ বিবেক মাত্রই আধুনিকতা আর আনন্দ উদযাপনের নামে এই নারী সত্ত্বা বিক্রির দিনটিকে অনুমোদন করতে পারেনা।
সমাজের নোংরা এবং করুণ পরিণতির জন্য দায়ী, অশ্লীলতাকে উৎসাহিতকারী এই বিদেশী সংস্কৃতিকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে-আমাদের ঈমানের স্বার্থে, আমাদের জাতির স্বার্থে, আমাদের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার স্বার্থে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button