হিজাব দিবসে ঐক্যবদ্ধ নারীরা

Hijab১ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব হিজাব দিবস। ‘বেটার অ্যাওয়্যারনেস, গ্রেটার আন্ডারস্ট্যান্ডিং, পিসফুল ওয়ার্ল্ড’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে এবার এই দিবসটি পালন করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যাপারটিকে আরো বেগবান করার অভিপ্রায়ে যারা মুসলমান নন, তাদেরও এদিন হিজাব পরার আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এই দিবস পালন করা হয়েছিল।
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিম মহিলারা সামাজিক মাধ্যমে হিজাব ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। সিঙ্গাপুর থেকে নূর রাফিকা নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি হিজাব পরি কারণ এটি আমাকে অনেক স্বস্তি দেয়। তা ছাড়া এটা নিপীড়ন থেকেও রক্ষা করে। আমি হিজাব নিয়ে গর্ব করি।’ সিয়েরালিয়ন থেকে হাওয়া নামে এক মহিলা লিখেছেন, ‘হিজাব শুধু মাথা ঢেকে রাখার কাপড় নয়। এটা পর্দা রক্ষা করতে সহায়ক। আমাদের হাতের নখ ও লিপইস্টিকের রঙ দিয়ে মূল্যায়ন করলে চলবে না।’
মিসর থেকে ডা: ইবেস্তাম আল কাদি নামে একজন লিখেছেন, ‘হিজাব আমাকে কখনো চিন্তা ও আকাক্সক্ষা প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করে না। হিজাব মহিলাদের স্বামীরা চাপিয়ে দেন এ কথা সত্য নয়। বরং আমার মনে হয়, নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে।’ ফিলিস্তিন থেকে সামাহ লিখেছেন, ‘সাত বছর আগে আমি জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম।
এর মাধ্যমে আমি নিজেকে একজন ব্যক্তি হিসেবে আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছি। হিজাবকে আমার মনে হয় মুকুটের মতো, যা আমার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।’ কলম্বিয়া থেকে মার্সেলা দাজা লিখেছেন, ‘হিজাব আমার মুকুট, হেলমেট, আমার সবচেয়ে মূল্যবান গহনা, এটি আমাকে নম্র থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ এভাবে আরো অনেকে হিজাব দিবস নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
এ দিবসের আহ্বানকারী নাজমা খান মাত্র ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। হিজাব দিবস পালনের ডাক দেয়ার প্রোপট হিসেবে নাজমা বলেন, তিনি যখন হিজাব মাথায় স্কুলে যেতেন, তখন তাকে অনেক অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় তাকে ব্যাটম্যান এবং নিনজা বলে ডাকা হতো। আর ৯/১১-র পর তাকে ডাকা হতো ওসামা বিন লাদেন এবং সন্ত্রাসী বলে।
তিনি আরো বলেন, হিজাবকে সাধারণত এখানে নারীর প্রতি নিপীড়ন এবং বৈষম্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় এবং এজন্য তাকেও অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হয়। আর এই বৈষম্যের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তার অমুসলিম বোনদেরও হিজাব পরার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বাস্তবেই এটা কি কোনো নিপীড়ন কি না তা পরখ করার আহ্বান জানিয়ে হিজাব দিবসের ডাক দেন।
নাজমা মনে করেন, হিজাব পরিধান করার জন্য যে মুসলিম হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। হিজাব মূলত শালীনতার জন্য পরিধান করা হয়। তাই তিনি এটা পরিধান করায় কোনো সমস্যা দেখেন না। তার এই কথায় ব্যাপক সাড়া মেলে। ফলে দেখা যায়, হাজারো অমুসলিম নারী হিজাব পরে দিবসটি পালন করেন।
হিজাবকে অনেকে দেখেন নারীদের অবদমন ও বিভাজন সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে। নানা বিতর্ক মোকাবেলায় হিজাব দিবসের ডাক দেন নাজমা। অমুসলিম ও মুসলিম নারীদের যারা সচরাচর হিজাব পরেন না, তাদের অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষের পোশাক ও বেশ দেখে বিচার-বিবেচনা করা ঠিক নয়, এ বিষয়টি প্রমাণের জন্য এ দিবস একটা মোম সুযোগ। অমুসলিম নারীরা যদি মাত্র এক দিনের জন্য হলেও হিজাব পরেন, তাহলে মুসলিম নারীদের আর এ ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না।
ইসলাম ধর্মে হিজাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানরা মনে করেন, হিজাব হচ্ছে মর্যাদার প্রতীক। এরপরও আমেরিকায় হিজাব পরাটা একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। এখানে হিজাব পরে কর্মস্থলে যাওয়া যায় না, হিজাব পরলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা থাকে। এমনকি অনেক শিাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরে যাওয়ার বিধান নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি উত্তরণে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্ব হিজাব দিবস ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button