ভারতে ধর্মান্তরিত তরুণীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট

hadiyahভারতে একই দিনে সুপ্রিম কোর্টে জোড়া ধাক্কা খেল কেন্দ্র ও দু’টি রাজ্যের উগ্র হিন্দুবাদী বিজেপি সরকার। এক দিকে, আলাউদ্দিন খিলজিকে কেন্দ্র করে নির্মিত মুভি ‘পদ্মাবত’-এর মুক্তি রোখা গেল না। যার আর্জি জানিয়েছিল রাজস্থান ও হরিয়ানার বিজেপি সরকার। অন্য দিকে, কেরলের মেয়ে হাদিয়ার বিয়ে নিয়ে তদন্তের অধিকার হারাল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। হাদিয়া ইসলাম গ্রহণ করে এক মুসলিম তরুণকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তিনি জেনেবুঝে এই বিয়ে করেছেন, ধর্মত্যাগ করেছেন। আদালত তার মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে, ‘লাভ জিহাদ’ মামলায় কেরলের মেয়ে হাদিয়ার বিয়ের বিষয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি বেঞ্চে হাদিয়া মামলার শুনানি চলছে। এ দিন শুনানির সময় এনআইএ-কে ওই বেঞ্চ বলে, ‘‘আপনারা তদন্ত করতেই পারেন, তবে তাদের বিয়ে নিয়ে নয়। ‘ল ভ জিহাদ’ নিয়ে তদন্ত চলুক বা, অন্য যেকোনো বিষয়ে তদন্ত হোক। কিন্তু তাদের বিয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। বিয়েকে ফৌজদারি অপরাধ, চক্রান্ত থেকে আলাদা করে দেখতে হবে। না হলে সেটা খারাপ নজির হবে।’’ আদালত বড়জোর হাদিয়ার বিয়ের বয়স সংক্রান্ত আইনি দিকটি খতিয়ে দেখতে পারে বলে, মন্তব্য শীর্ষ আদালতের বেঞ্চের।
এ দিন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি খানউইলকর এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এও বলেছে, ‘‘বিয়ের পাত্র হিসেবে কে ভালো আর কে খারাপ, সেটা ঠিক করতে পারেন শুধু হাদিয়াই।’’
২০১৬-র ডিসেম্বরে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন কেরলের বাসিন্দা অখিলা অশোকন। নিজের নাম বদলে রাখেন হাদিয়া। তার পর দক্ষিণ কেরলের কোল্লামের বাসিন্দা শাফিন জাহানকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু, সেই বিয়েকে অস্বীকার করেন হাদিয়ার বাবা অশোকন। মামলা দায়ের করেন কেরল হাইকোর্টে। আদালতে অশোকনের অভিযোগ ছিল, মেয়েকে জোর করে ধর্মান্তরকরণ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট-এ যোগ দিতে তাকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়ায় পাঠানো হতে পারে। তার মেয়ের বিয়ে বাতিলের নির্দেশ দেয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অশোকন, আদালতে। গত বছরের মে মাসে সেই বিয়ে বাতিল ঘোষণা করে কেরল হাইকোর্ট। তার পর সুপ্রিম কোর্টে যান হাদিয়ার স্বামী। কেরল হাইকোর্টের রায়ের পর হাদিয়ার বিয়ের ঘটনা আসলে ‘লাভ জিহাদ’ কি না, গত অগস্টে তা নিয়ে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ‘লাভ জিহাদ’ বিতর্কে কেরল-সহ গোটা ভারতেই আলোড়ন তোলে সেই হাদিয়া মামলা।
শীর্ষ আদালতে হাদিয়ার বয়ান-সহ একটি রিপোর্ট গত বছরের শেষে জমা দেয় এনআইএ। সেখানে হাদিয়া বলেন, নিজের ইচ্ছাতেই তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। মুসলিম হতে কেউ তাকে বাধ্য করেননি। তাঁর উপর কোনো জোরজবরদস্তি হয়নি। পরে সরাসরি হাদিয়ার মুখ থেকে তার বক্তব্য জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে তার জীবনের স্বপ্ন, উচ্চাশা ও ভবিষ্যতের ভাবনার কথা জানান ২৫ বছরের হাদিয়া। তিনি জানান, মুসলিম ধর্ম পালন করে চলার পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে থাকার ব্যাপারেও ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ চান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button