ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি এবং ইংল্যান্ডের চলে যাওয়ার কারণ

EUবুরহান উদ্দিন: মুসলিম উম্মাহর সর্বশেষ খিলাফাত উসমানী খিলাফাত দুনিয়ার এত বড় শক্তি ছিল যে, প্রায় ৩০০ বছর সমগ্র দুনিয়াকে একক ভাবে শাসন করেছে। উসমানী খিলফাতের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে ছিল না। সেই সময়ে ইউরোপ ছিল বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত, এবং একে অপরের সাথে সব সময় হানাহানিতে লেগে থাকত। সেই সময়ে তাদের পাদ্রীগণ এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দরা খুব আশা নিয়ে বলত যে একদিন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুনরায় সমগ্র দুনিয়াকে শাসন করব। ১৭০০ সালের তারা তাদের এই আশা ব্যক্ত করত। আর তাদের এই আশা পূর্ণ হয় প্রায় ১৯৫৭ সালে এসে। তারা তাদের এই আশাকে বাস্তবায়নের জন্য হাল ছাড়েনি। আমরা যদি ইউরোপের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, ব্রিটেন, জার্মানি এবন ফ্রান্স এরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে এত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং এত রক্তপাত করেছে যে তার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসও আমাদের সামনে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধেও ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, জার্মানিতে ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞ পরিচালনা করে।
১৯৫৭ সালের ২৫ শে মার্চ রোম চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং ১লা জানুয়ারি ১৯৫৮ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে European economic community তাদের যাত্রা শুরু হয়। এই সম্মেলনে তারা বলেন, “আমরা তিনটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে ইউরোপকে গঠন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর সেই মূলনীতি সমুহ হল :
১। পূর্ণ পুঁজিবাদ (Complete Capitalism)
২। সত্যিকারের গণতন্ত্র (Real Democracy)
৩। খ্রিস্টবাদ (Christianity)
এই ৩ টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে যাত্রা শুরু করে আজকের ইউরপীয় ইউনিয়ন তথা তৎকালীন European economic community।
রোম চুক্তির দ্বিতীয় ধারা মতে যতই বলা হোক না কেন যে, European economic community’র মূল উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি, আসলে তা নয়। বর্তমানের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ এবং বিশ্ব রাজনীতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে একথা দেখিয়ে দেয় যে, European economic community : গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে সমগ্র দুনিয়াকে শাসনের নামে শোষণ করা।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন গঠনের এই চিন্তা প্রায় ৩০০ বছর পূর্ব থেকে। ক্রুসেডাররা সর্বপ্রথম এই চিন্তাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সপ্তদশ শতাব্দীর শুরতে হুগু তার এক বক্তৃতায় বলেন, “অবশ্যই একদিন ইউরোপীয়ানদের নিয়ে একটি ভ্রাতৃসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হবে”।
De Gaulle পরবর্তীতে, “আটলান্টিক থেকে উরাল দ্বীপ পর্যন্ত বৃহৎ ইউরোপ”। এমন একটি শ্লোগান সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে দেন।
রাজনৈতিকভাবে এই ধারনাটি শক্তিশালী রূপ ধারণ করে ১৯৪৬ সালের মার্চে চার্চিলের, ১৯৪৭ সালে মার্শাল এবং ১৯৪৮ সালে বেভিনের বক্তব্যের পরে।
European economic community’র সাবেক প্রেসিডেন্ট Dr. Walter Hallstein তার এক বক্তব্যে বলেন, আমরা মোটেই অর্থনীতিবিদ নই, আমরা রাজনীতিবিদ। আমাদের এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্দেশ্য হল আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করা”। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে European economic community নাম পরিবর্তন করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাখা হয়। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন যে একটি খ্রিস্টীয়ান ইউনিয়ন এবং মুসলমানদেরকে নিঃশেষ করার জন্যই এই ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছে তার আরেকটি প্রমান হল ব্রাসেলসে অবস্থিত তাদের পার্লামেন্ট ভবনটি। এই ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি এই ইউনিয়নের আচরন দেখলেই আমরা বুঝতে পারি তারা বিশ্ববাসীকে কি দিতে চায়?
ব্রিটেন কেন চলে গেল :
ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী Edward Heath এর নেতৃত্বে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে প্রবেশ করে। ব্রিটেন মূলত কিছু শর্তের ভিত্তিতেই ইউনিয়নে ছিল, তার মধ্যে কতিপয় হল, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশসমূহের সকলেই ইউরো ব্যাবহার করলেও ব্রিটেন তা না করে পাউন্ড ব্যাবহার করত, বিভিন্ন দেশে তার যে ঘাঁটি এবং উপনিবেশ আছে সে সকল দেশে ইউনিয়ন কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এমন কিছু শর্ত ছিল।
কিন্তু ইউনিয়নে জার্মানির একচ্ছত্র আধিপত্যকে ব্রিটেন কখনো মেনে নেয়নি। জার্মান অর্থনীতির উত্তরোত্তর উন্নতি এবং শিল্প ও প্রযুক্তিতে আকাশচুম্বী উন্নতির ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে জার্মানির হাতে। যা এক কালের বিশ্বমোড়ল কোটি কোটি মানুষের সম্পদ শোষণ করে তথা কথিত সভ্য মোড়ল এই ব্রিটেন তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী জার্মানির নেতৃত্বকে মেনে নেয়নি। অপর দিকে ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের সাথে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে পেরে না উঠতে পারায় এবং বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেন সংকিত হয়ে উঠে। অপরদিকে ইউনিয়নও চাপ প্রয়গ করে যে, তাকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাউন্ড এর বদলে মুদ্রা হিসাবে ইউরো ব্যাবহার করতে হবে। এই সব মিলিয়ে তারা আজকের এই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়। এই ব্রিটেন এমন ব্রিটেন যার সভ্যতাই গড়ে উঠেছে সাড়া দুনিয়ার মজলুম মানুষের রক্তের উপরে। আফ্রিকার মানুষকে দাস বানিয়ে এবং এশিয়া সহ দুনিয়ার বিপুল অংশকে উপনিবেশ বানিয়ে তারা বিশ্ব মোড়ল হয়েছিল। কিন্তু মহান রব জুলুম নির্যাতনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হতে দেন না। অতীতে বড় বড় সাম্রাজ্য ও মোড়লদের পতন হয়েছে। আজ ব্রিটেন চলে যাওয়ায় সমগ্র মানবতাকে নির্যাতন কারী এই ইউনিয়নে ফাটল ধরল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button