ট্রাম্পের বিপজ্জনক খেলা

trumpজেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা একটি বিপজ্জনক খেলা বলে মন্তব্য করেছেন উড্রো উইলসন ইন্টারন্যশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রখ্যাত লেখক অ্যারন ডেভিড মিলার। ‘দ্য অ্যান্ড অব গ্রেটনেস: হোয়াই আমেরিকা ক্যান্ট হ্যাভ (অ্যান্ড ডাজ’নট ওয়ান্ট) অ্যানোদার গ্রেইট প্রেসিডেন্ট’ নামের বিখ্যাত বই লিখেছেন তিনি। এর আগে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সিএনএনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে মিলার বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে আরব-ইসরাইল মধ্যস্থতার ব্যাপারে কাজ করেছি। কিন্তু একটা ইস্যু আমি সবসময়ই এড়িয়ে গিয়েছি এবং প্রত্যেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও সেটা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। সেই ইস্যুটি হচ্ছে জেরুজালেম সমস্যা। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শটা খুবই সোজা, আরব-ইসরাইল মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও অস্থিতিশীল ইস্যু জেরুজালেম সমস্যা নিয়ে খেলা করো না। তা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই জেরুজালেম নিয়েই খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার গত রোববার সতর্ক করে বলেছেন, তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তিনি আরও বলেছেন, সম্ভাব্য সব অপশন নিয়েই কথা বলবেন ট্রাম্প। বুধবারই এ বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য দেয়ার কথা। জেরুজালেমকে রাজধানী দাবি করে আসছে ইসরাইল। তবে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখতে চায় দেশটির জনগণ। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স জানান, বুধবার জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইহুদি-খ্রিস্টান ও মুসলিম; এই তিন সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য পবিত্র ধর্মীয় স্থান জেরুজালেম। তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ৪ ডিসেম্বর সময়সীমা পার হয়ে গেছে। সোমবার দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা না দেয়ায় দেশটির আইন অনুযায়ী আরও ছয় মাসের মধ্যে দূতাবাস সরছে না। দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করলেও আশঙ্কা রয়েছে বুধবারের ভাষণে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন ট্রাম্প। মিলার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো মনে করছে, দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার চেয়ে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি বা নির্দেশনা প্রদান কম ক্ষতিকর হবে। তবে এটা পূর্ব-আলোচিত দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের ভিত্তিতে না হলে, শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে। কেননা জেরুজালেম ইস্যুটি খুবই স্পর্শকাতর ও অস্থিতিশীল। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে যদি প্রকৃত কোনো সমস্যা থেকে থাকে সেটা এই জেরুজালেম। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ জেরুজালেম বহুদিন বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে আছে।
আমরা এরই মধ্যে অসংখ্যবার ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি, ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের পবিত্র ভূমিতে আগুন জ্বলতে দেখেছি। যেমনটা আমরা দেখেছি ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০০ সালে এবং সম্প্রতি ২০১৭ সালে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইসরাইলি পুলিশের মেটাল ডিটেক্টর বাসানোর জেরে। জেরুজালেমের মর্যাদার কোনো পরিবর্তন ব্যাপক সহিংসতার উসকে দিতে পারে। একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ২০০০ সালের জুলাইয়ে ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলনকালে জেরুজালেম ইস্যু নিয়ে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে আমি সফল হইনি। আমি দেখেছি, তখন থেকে অন্যান্য শান্তি প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এই একই সূত্র অব্যাহত রয়েছে। জেরুজালেম সমস্যাটি সমাধানের ক্ষেত্রে এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button