কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন প্রত্যাখ্যান বেফাকের

কওমি মাদরাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে একটি কর্র্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার বিধান করে সরকারের তৈরি প্রস্তাবিত একটি বিল প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)। সোমবার মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার শামসুল উলুম মাদরাসায় অনুষ্ঠিত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার বেফাকের মজলিসের আমেলার সভায় বিলটি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় প্রস্তাবিত বিলটিতে কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা তথা সামগ্রিক ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র এবং ধ্বংসের পাঁয়তারা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। স্বীকৃতির নামে কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তা মোকাবিলায় দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও মাদরাসার প্রধান এবং বোর্ড প্রধানদের সমন্বয়ে ‘কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ’ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সন্ধ্যায় বেফাকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিলটির ব্যাপারে অতি গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী সংসদের আসন্ন অধিবেশনে পাস করার বিষয়টি জানিয়ে বিলটির ব্যাপারে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) কাছে গোপনে মতামত চেয়েছিলেন শিক্ষাসচিব। এরপর বেফাক নেতারা বিলটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠক করেন। এ নিয়ে বেফাকের সভাপতি আল্লামা শফীর সাথেও দেখা করে মতামত নেন। তারই পরামর্শ অনুযায়ী বেফাকের সর্বোচ্চ পরিষদ মজলিসে আমেলার জরুরি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা চলাকালে বেলা আড়াইটার দিকে ডিবি পুলিশ বেফাকের নেতা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাসকে সভাস্থল থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে ৫ মে’র ঘটনার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বেফাকের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বারের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মোস্তফা আজাদ, মাওলানা আবুল ফাত্তাহ মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মুফতি আব্দুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হালিম বোখারি, সুলতান যওক, মাওলানা আব্দুল বাসেত বরকতপুরী, মাওলানা মাফজুল হক, মুফতি তৈয়্যব, মুফতি মিজানুর রহমান, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী প্রমুখ।
সভায় গঠিত ‘কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ কমিটির’ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা মুস্তফা আজাদ, মাওলানা আব্দুল জব্বার, মুফতি আব্দুর রহমান, মাওলানা সুলতান জওক, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছসহ সারা দেশের কওমি মাদরাসার শীর্ষ আলেমরা।
জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩’ শিরোনামে খসড়া বিলটিতে কওমি শিক্ষার সনদ দেয়ার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখার প্রস্তাব রয়েছে। ২০টি ধারা সংবলিত বিলে একজন আলেমকে চেয়ারম্যান, কওমি মাদরাসাগুলোর পাঁচজন সদস্য, মহিলা কওমি মাদরাসার একজন সদস্য, যুগ্মসচিব মর্যাদার সরকার মনোনীত একজন সদস্য এবং কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলোর প্রধানরা ও পদাধিকার বলে বোর্ডের সচিবকে নিয়ে কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। অ্যাফিলিয়েটেড ক্ষমতাসম্পন্ন আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কর্তৃপক্ষ পরিচালিত হবে। স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিধানসংবলিত একটি বিলও সংসদে বর্তমানে পাসের অপেক্ষায় আছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) সাথে সম্পর্কিত কওমি আলমদের বাদ দিয়ে বিলটি তৈরি করা হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বিলের একটি খসড়া কপি বেফাককে দেয়া হয়। গত ১৭ আগস্ট বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসেরের একটি অনুষ্ঠানিক বৈঠকে বিলের কপি হস্তান্তর করে গোপনে মতামত চাওয়া হয়। নায়েম ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নায়েমের মহাপরিচালক প্রফেসর শেখ ইকরামুল কবির ও অন্য এক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়টি উভয়পক্ষ গোপন রাখার অনুরোধ করা হয়।
প্রসঙ্গত, কওমি মাদরাসা শিক্ষার সনদ দেয়ার লক্ষ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল বেফাকের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কওমি শিক্ষা কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনের একটি বৈঠকে কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা পরিবর্তনে জালিয়াতির অভিযোগে আল্লামা শফীসহ বেফাক সংশ্লিষ্ট সদস্যরা কমিশন থেকে সরে আসেন। পরে সরকারসমর্থিত আলেম হিসেবে পরিচিত কমিশনের কো-চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ও সদস্যসচিব মাওলানা রুহুল আমিন কমিশনের কার্যক্রম চালিয়ে যান। তারা প্রায় এক বছরের মাথায় গত ১৩ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সুপারিশ পেশ করেন। এই সুপারিশের আলোকেই কওমি শিক্ষার সনদ প্রদানে বিলটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button