বিশ্বের প্রায় এক কোটি দশ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু

Syriaসন্ত্রাসের ঘায়ে সর্বহারা বিশ্বের প্রায় এক কোটি দশ লাখ মানুষ ! ভিটেমাটি ছেড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে পড়েছেন কেউ। কেউ আবার কোনও মতে দু’বেলার খাবার জোগাচ্ছেন উদ্বাস্তু শিবিরে। অনেকে যাত্রিবোঝাই নৌকোয় সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছেন আস্তানার খোঁজে। বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে উদ্বাস্তু সমস্যার এই ভয়াবহ চেহারা সামনে এনেছে জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এমন ভয়ানক শরণার্থী সমস্যা আর হয়নি। শুধু ২০১৪ সালেই ঘর ছেড়েছেন এক কোটি দশ লাখ মানুষ।
ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) লড়াইয়ে গৃহহারা লক্ষাধিক। ইউক্রেন, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসে সর্বহারার সংখ্যাও কম নয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশে টানা সংঘর্ষ আর অর্থাভাবে নিঃস্ব  হাজার হাজার মানুষ। ইসরাইল-গাজার লড়াইয়ে গোটা শহর এখন ধ্বংসস্তূপ। কর্মহীন, স্বজনহীন, সহায় সম্বলহীন মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে শরণার্থী শিবিরগুলো।
উদ্বাস্তু সংখ্যা বৃদ্ধি প্রভাব ফেলছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে। বিশেষ করে পড়শি দেশগুলোতেও। যেমন, সিরিয়া ও ইরাকে দু’বছর ধরে টানা রাজনৈতিক টালমাটাল এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর দাপট চলতে থাকায় সে দেশের মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন তুরস্ক, জর্দান ও লেবাননের মতো দেশে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে জর্দানে দ্বিগুণ হয়েছে বেকারের সংখ্যা। বিশেষত শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। পড়শি দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা এখন লেবাননের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দখল করেছে। গত মার্চ মাসে তুরস্কের সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সিরিয়ার সঙ্গে যে দু’টি মূল সীমান্তরেখা রয়েছে তা-ও অবিলম্বে বন্ধ করবে তারা।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উদ্বাস্তু নৌকা নিয়ে সরব হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, আফ্রিকার উপকূলেই ঠেকাতে হবে চোরাচালানকারীদের। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি এবং যাবতীয় বাধাবিপত্তি পেরিয়ে যারা তীর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন, তাদের কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে। জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গিদৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় বাড়াচ্ছেন পড়শি দেশগুলোতে। একটা সময়ে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো তুলনামূলকভাবে কম জনসংখ্যার দেশগুলোতে বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের নিয়ে সমস্যা না হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরছাড়াদের ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে তারাও।
এই শরণার্থী সমস্যা যে বিশ্বের অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে তা নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরাও। মানবিকতার খাতিরে ঠিকানাহীন মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে তাতে অভাব মিটছে না। সর্বহারার জীবন থমকেই রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button