পবিত্র কোরআনের আয়াতের মর্যাদা রক্ষা করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব

মোজাহির আহমদ: আল্লাহর হুকুম মতে রাসূলে পাক (সাঃ)-এর তরিকা অনুযায়ী সৎ কাজের আদশে কর, অসৎ কাজের নিষেধ কর। সকলকে সৎ উদেশ দাও বদ কাজ হতে ফিরাবার চেষ্টা কর। যদি তা না কর শীঘ্রই আল্লাহর গজব নাযিল হবে। গজব নাযিল হলে তখন দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে না। দেশে নানাবিধ গজব নাযিল হচ্ছে। গজব হতে মুক্তি পাবার জন্য কাজে চেষ্টা করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব।
এ জন্য লিখতে বাধ্য হলাম দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন দৈনিক, মাসিক পত্রিকায় পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ হুবহু আরবীতে ও বাংলা অক্ষরে ছাপা হচ্ছে এবং প্রায় সময় দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চের পেছনে কলেমা এবং পবিত্র বিসমিল্লাহ শরীফ তাও পবিত্র কোরআনের আয়াত এবং হ্যান্ডবিলে বিয়ের কার্ডে, পোস্টারে, মাদরাসা, বিদ্যালয়ে (স্কুলে) পাঠ কিতাব ইসলাম ধর্ম শিক্ষাতে ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য পবিত্র কোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ আছে। পরীক্ষার প্রশ্নের মধ্যে পবিত্র কোরআনের আয়াতে প্রশ্ন করা হয় এবং বিভিন্ন কোম্পানীর এবং মাদরাসার পক্ষ হতে ক্যালেন্ডার ছাপা হয় তাতেও পবিত্র কোরআনের আয়াত লিখিত ছাপা হয়। তাও বৎসর শেষে যত্রতত্র ফেলে দেয়, না হয় বিক্রি করে কেজি হিসেবে তা বৎসর শেষে কেজি হিসেবে ওজন দিয়ে বিক্রি করা হয় দোকানদারকে। দোকানদাররা উক্ত কিতাব ছিঁড়ে ছিঁড়ে মালপত্র বেঁধে দেয়। লোকেরা মালপত্র রেখে কাগজগুলো যত্রতত্র ফেলে দেয়। আমাদের বাংলাদেশে শতকরা নব্বই জন মুসলমান। কাজেই প্রত্যেকের জানা দরকার এই পবিত্র কোরআনের আয়াত লিষিত কাগজগুলোকত লোকের পায়ের তলায় আবর্জনার স্তূপের নাপাক স্থানে ঝাড়ু দিয়ে নালায় ফেলে দেয় এবং নালায় পড়ে থাকে। এতে পবিত্র কোরআনের আয়াতের বেইজ্জতি হচ্ছে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে নিশ্চয়ই জবাব দিতে হবে।
পবিত্র কোরআনের আয়াত লিখিত ছেঁড়া কাগজ কবরস্থানে বা পবিত্র স্থানে দাফন করে ফেলার হুকুম রয়েছে। ইসলাম ধর্ম শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণী পাঠ্য কিতাবে নামায শিখবার বিষয় আছে। তা মসজিদে দান করলে ছদকাহে জারিয়া সওয়াব পাওয়া যাবে। পবিত্র কোরআনের তাফসির, মিলাদ, ওয়াজ মাহফিল অনেক হচ্ছে সত্য, কিন্তু উপরোক্ত বিষয়ে মাহফিলে বয়ান হচ্ছে না। এ বিষয়ে বয়ান করার জন্য মাওলানা সাহেবের প্রতি অনুরোধ রইল। মাদরাসা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষিত পরিবারের প্রধান সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে গুণাহ হতে বাঁচা, গজব হতে রক্ষার জন্য সতর্ক হতে অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারের দায়িত্ব রেডিও, টেলিভিশনে উপরোক্ত বিষয়ে প্রচার করে জনগণকে জানিয়ে দেয়া, যাতে গুণাহ, গজব হতে বাঁচা যায়। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ করছি। এক মুসলমান ভাই-ভগ্নির উপর আর এক মুসলমান ভাই-ভগ্নির হক ও দায়িত্ব আছে। আল্লাহর হুকুম জানিয়ে দিয়ে দোজখের অগ্নি হতে রক্ষা করা।
মুসলমানদের ঈমান ও দেশ রক্ষায় করণীয় ও বর্জনীয় প্রসঙ্গে
দয়াময় দয়ালু আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে মানব জাতিকে জানাইয়া দিয়াছেন আল্লাহ তায়ালা কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না। যতক্পষণ মানব জাতির নিজেদের অবস্থা নিজেরাই পরিবর্তন না করে। আল-কোরআন সুলা রাদ-১৩, আয়াত নং-১১।
হাদীস শরীফে আলেমদেরকে নবীর ওয়ারেছ বা উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে জানা যায় এ হাদীসের মাধ্যমে, “তুমি আলেম হও অথবা ইলমের অন্বেষণকারী হও অথবা ইসলামের শ্রোতা হও (আর যদি তুমি মাজুর হও) তবে আলেমদেরকে মুহাব্বত কর, সাবধান বিপরীত হয়ো না তবে ধ্বংস হয়ে যাবে। মেশকাত শরীফ।
অন্যত্র আলেমে বেদ্বীনদের কঠোর হুশিয়ারি রয়েছে এ হাদীসে, “যাকে ইলমের বিষয় সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, আর সে জানা থাকা সত্ত্বেও ভুলিয়ে রাখে তাহলে কিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ি পড়িয়ে দেয়া হবে।” -আবু দাউদ, তিরমিযী।
আজ একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে লক্ষ্য করা যায়, আলেমদের মতপার্থক্যের কারণে মুসলিম জাতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, আক্বীদাগত লড়াই, গোমরাহী ও মানহানিকর উক্তি, অন্যের প্রতি হিংসা, সমালোচনা, আক্রমণ, বেদাত, মোবাহ-মকরুহ নিয়ে উদ্ভট মন্তব্যের কারণে বিশ্বনবীর ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী মুসলমানরা ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হতে চলেছে। প্রত্যেক দল দাবি করে তারাই হক্ব ও সঠিক পথে আছে অন্য সব বাতেল, মুনাফেক, মুরতাদ, গোমরাহ। এতে করে সারা বিশ্বের আম মুসলিম “মেলফল খাওয়া মাছের মত” হতাশ ও পাগল হয়ে ক্রমশ: ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
ফলে মুসলমানদের নিকট জনপ্রিয় হচ্ছে খুন, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, পরকীয়া প্রেম, যাত্রা, থিয়েটার, নাটক, রেডিও টিভি, ডিশ, সিনেমা, গল্প, উপন্যাস, ক্লাব, মদ, জুয়া, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ফ্যাশন-শো ইত্যাদি। আমাদের সমাজের এই নাজুক পরিস্থিতিতে “ঘোলা পানিতে মৎস্য শিকারে” নেমেছে অগণিত হিন্দু-বৌদ্ধ, খৃষ্টান মিশনারী, চার্চ, এনজিও এবং কাফের মুনাফেক মুরতাদ ইহুদীরা। তারা তথাকথিত সেবা সাহায্যে সহানুভূতির আড়ালে অত্যন্ত সঙ্গোপনে তাদের হীন উদ্দেশ্য হাছিল করছে, ফলে মুসলমান জাতি পারিবারিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, মানবিক, শৈল্পিক, বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং ধার্মিকতার ক্ষেত্রে এক সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের স্বীকার। ইসলামের এই নব্য জাহেলিয়াত ৫৭০ খৃস্টাব্দ পূর্ব আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে।
ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তার কারণ হল আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বার বার জানাইয়া দিয়েছে সৎ কাজের আদেশ করা অন্যায় কাজের বাধা দাও। একা না পারলে কয়েকজন মিলিয়া তাহা কর। রাসূল করিম (সাঃ) এরশাদ সকলকে সৎ উপদেশ দাও বদ কাজ হতে ফিরাইবার চেষ্টা কর। যদি তাহা না কর শীঘ্রই আল্লাহ আজাব নাযিল করবেন, আজাব নাযিল হলে তখন দোয়া করিলেও দোয়া কবুল হবে না (তিরমিজী শরীফ) এমন কঠোর আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ একেবারে বাদ দিয়াছি। সৎ কাজের আদেশ করি না অসৎ কাজের বাধাও দেওয়া হচ্ছে না। এটা প্রত্যেক মানব জাতির দোষ। নিজের দোষ নিজে স্বীকার কর আল্লাহর হুকুম মতে ও রাসূলে পাক (সাঃ) তরিকা (শিক্ষা) চলা দরকার। না হয় অন্যায় চলার কারণে মুসলমান জাতি ধ্বংস হতে যাচ্ছে। আরও একটা কারণ আছে কয়েক রকম গুনাহ আছে তার মধ্যে শিরক ও কুফরী গুনাহ মারাত্মক তাহা করিয়া মুসলমান ধ্বংসের পথে যাচ্ছি। যেমন কুফরী গুনাহ হারাম উপার্জন টাকা আল্লাহর রাস্তায় দান করিয়া সওয়াবের আশা করিলে কাফির হইয়া যায়। নবী করিম (সাঃ)-এর কোন সুন্নতকে ঘৃণা বা উপহাস করিলে কাফির হইয়া যায়। এ জন্য কি কি কাজ করিলে কাফির শিরক কবিরা গুনাহ। গুনাহ হতে বাঁচার জন্য শিক্ষা করিয়া আমল করিতে হয়্ কারণ কুফরী শিরক গুনাহ করিলে তার কোন এবাদত দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। এ জন্য দেশের মানুষের উপর গজব নাযিল হচ্ছে। লিখিত হিসাবে দেশের জনগণের দোষ। এ জন্য দেশের মধ্যে নানাবিধ গজব নাযিল হচ্ছে।
কয়েক রকম গুনাহ আছে তন্মধ্যে কুফরী গুনাহ, মারাত্মক গুনাহ কুফরী গুনাহ করলে সওয়াবের সব কাজ বাতিল হয়ে যায। বিবাহ ভঙ্গ বা বাতির হয়ে যায়। এমতাবস্থায় প্রথম তওবা করে কলেমা পড়ে মুসলমান হতে হয় বিবাহ আবার দোহরাইয়া আকদ করিতে হয়্ এই রকম জঘন্য গুনাহ করে বসে থাকলে আযাব নাযিল হয় মানব জাতির উপর। এ জন্য মানব জাতির থেকে তওবা করে আবার কলেমা পড়ে ঈমান এনে মুসলমান হতে হয়। আর আল্লাহর দরবারে আর যে কোন অন্যায় করব না বলে ওয়াদা করতে হয়। এই বিষয়ে ওয়াজ মাহফিলে বলা ’হচ্ছে না বলে লোকে না জানিয়া অন্যায় কাজ করলে গজব নাযিল হয়।
আগে নিজের দোষ সংশোধন কর। গজব হতে বাঁচ। আল্লাহর নীতি মতে চল। এক হয়ে যাও। এটাই জানা দরকার এক বেলা হারাম খাদ্য খাইলে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হবে ন। এ জন্য গজব নাজিল হয়্ নামাযের ফরজ শর্ত হল শরীর পাক কাপড় পাক যদি হারাম খাদ্য খাওয়া যায় নামায কিরূপে কবুল হবে? নামাযের দ্বারা মুসলমানের পরিচয়।
একজন উম্মতে মোহাম্মদীর (সাঃ) দাবীদার হিসাবে আহ্বান জানাই প্রত্যেক মুসলিম গোষ্ঠী দল, সংগঠন যেন স্বল্প পরিসরে প্রথমে অন্যের সাথে কি পার্থক্য তা প্রকাশ করবে, তারপর সংশোধন করবে, অতঃপর প্রকাশ্য ক্ষমা ভিক্ষার মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যের সামিয়ানায় সংঘবদ্ধ করে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-এর পক্ষের সৈনিক হিসাবে যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুখী সুন্দর মুসলিম বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জেহাদের ডাক দিতে হবে। আল্লামা ইকবাল কত সুন্দর ভাষায় ঐক্যের স্বপ্ন দেখেছেন যার অর্থ হলো “এ জাতির লাভ-ক্ষতি তো একই, তাদের নবী, ধর্ম ও ঈমানও তো এক। আর একই তাদের বাবা, আল্লাহ এবং কোরআন। যদি সে মুসলিম জাতি আজ এক হতে পারতো তবে কতই না ভালো হতো।” এই লৌহ ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যের সংকল্প বাস্তবায়নই হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)-এর অঙ্গীকার।
ইয়া আল্লাহ, বিশ্বের সমস্ত মুসলমানের জন্য তোমারে রহমতের দরজা খুলিয়া দাও। সমস্ত মুসলমানকে ঈমানদার, আমলদার নামাযী বানিয়ে দাও। সমস্ত মুসলমানের গুনাহ অপবাদ মাফ করে তোমার হুকুম আহকাম মতে পরিচালিত করুন এবং বিশ্বের সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রকে বাংলাদেশকে রক্ষা করুন। হেফাজত করুন, কোরআনী শাসন কায়েম করুন। আসমানী বালা জমিনের বালা থেকে রক্ষা করুন। আমিন। প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভগ্নির কাছে অনুরোধ এই আল্লাহর হুকুম প্রচার করতে যদি ভুলত্রুটি হয় তাহা হলে দয়া করে মাফ করবেন এবং আরও শুদ্ধ করে লিখে মুসলমান ভাই ভগ্নিগণ আল্লাহর হুকুম মতে চলে যেন। বেহেশ নসিব হয় তার ব্যবস্থা করিবেন। মাফ ও দোয়া চাহিয়া এইখানে বিদায় নিলাম। আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button