ব্রিটেনে হালাল খাবার বন্ধে পিটিশন

Meatব্রিটেনে হালাল খাবার বন্ধে এক লক্ষ সাক্ষর সম্বলিত একটি পিটিশন জমা দিয়েছে হালাল বিরোধীরা। এই পিটিশনের প্রেক্ষিতে হালাল খাবার বন্ধ করা উচিত কি-না এ বিষয়ে পার্লামেন্টে ২৩ ফেব্রুয়ারি আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে হালাল মান নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন এইচএমসি। হালাল বন্ধের এ উদ্যোগকে প্রতিহত করতে হালালের অনুসারীরা পাল্টা ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। হালাল খাবার রক্ষার আবেদন জানিয়ে শুরু করা এই ক্যাম্পেইনে ১৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার লোক স্বাক্ষর করেছেন।
বেথনাল গ্রীন এন্ড বো আসনের এমপি রুশানারা আলী বলেন, হাউজ অব কমন্সে এ বিষয়ে বিতর্ক হবে এমনটি কার্যতালিকায় নেই। তবে তিনি বলেন, হালাল ইস্যু নিয়ে চলমান বিতর্কে তিনি সবসময় নজর রাখছেন। পার্লামেন্টে হালাল বন্ধে কোনো প্রস্তাব আনা হলে তিনি এর বিপক্ষে অবস্থান নেবেন। রুশানারা আলী বলেন, বহু সাংস্কৃতিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার এবং স্বাধীনতাকে প্রত্যেকের উচিত সম্মান করা এবং সেই অধিকার রক্ষায় কাজ করা।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিষয়ে দাবি জানিয়ে কিংবা উদ্বেগ প্রকাশ করে এক লক্ষ্য সাক্ষর সম্বলিত কোনো পিটিশন জমা দেয়া হলে বেকবেঞ্চ এমপিরা বিষয়টি প্রথমে তাদের কমিটিতে আলোচনা করেন। এরপর গুরুত্ব বিবেচনা করে তারা বিষয়টি হাউজ অব কমন্সের মূল বিতর্কে যাবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
ব্রিটেনে হালাল খাবারের বিরুদ্ধে প্রচারণা দীর্ঘ দিনের। প্রাণী অধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন সংগঠনগুলো পশু জবাইয়ের বিরোধী। তাদের মতে, এর ফলে পশুর কল্যাণ নিশ্চিত হয়। জবাইকে একটি নিষ্ঠুর এবং  কষ্টদায়ক পদ্ধতি বলে মনে করে তারা। প্রাণী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলো মনে করে ইলেক্ট্রিক শকের মাধ্যমে প্রাণহানি কম কষ্টদায়ক। তারা ব্রিটেনে সকল প্রকার পশু জবাই বন্ধের আহবান জানিয়ে আসছে।
অন্যদিকে মুসলিম এবং ইহুদি সম্প্রদায় ধর্মীয় কারণে হালাল খাবারের অনুসারী। ধর্মীয় নিয়ম মেনে পশু জবাই না হলে তা হালাল হয় না। ফলে এসব সম্প্রদায়ের পক্ষে পশু জবাই বন্ধ করা সম্ভব নয়। হালালের অনুসারীদের মতে, পশুর প্রাণ নিশ্বেষ করার জন্য জবাই হচ্ছে সবচেয়ে কম কষ্টদায়ক পদ্ধতি।
সম্প্রতি একটি পশু জবাইখানায় পশুর ওপর নির্মম নির্যাচনের চিত্র ফাঁস করে এনিমেল এইড নামে একটি সংগঠন। তাদের গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, জবাইয়ের পূর্বে বিনাকারণে পশুর ওপর নির্মম নির্যচিন করা হচ্ছে। ব্রিটেনের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এনিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠে। যার প্রেক্ষিতে হালাল বন্ধের বিতর্ক নতুন মাত্রা লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন, আরএসপিসিএ, এনিম্যাল এইড এবং ন্যাশনাল স্যাকুলার সোসাইটি হালাল বন্ধে এক লক্ষ্য সাক্ষর সম্বলিত একটি পিটিশন পার্লামেন্টে জমা দেয়া। যার প্রেক্ষিতে ২৩ ফেব্রুেয়ারি এ বিষয়ে এমপিরা বিতর্ক করবেন।
হালাল নিয়ে বিতর্ক শুধু প্রাণী অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠনগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রাণী অধিকার না সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার কোনটিকে প্রাধাণ্য দিতে হবে, সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কট্টর জাতিয়তাবাদী দল ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকিপ) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় আসলে ব্রিটেনে নন স্টান্ট সকল প্রকার পশু জবাই বন্ধ করে দেবে। সংশ্লিষ্ট বলছেন, হালাল নিয়ে এই বিতর্কে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করা হলেও পুরো বিতর্কটি যে মুসলিমদের বিপরীতে যাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের মতে, পশু জবাই বন্ধের অর্থ হলো ধর্মমাণ্যকারী মুসলিমরা ব্রিটেন ছেড়ে যেতে বাধ্য হবেন।
হালাল অথোরিটি বোর্ডের (এইচএবি) মতে, ব্রিটেনে দুই ধরণের হালাল জবাই চালু আছে। একটি কোনো প্রকার স্টান্ট (অবশ) ছাড়া পশু জবাই আর অন্যটিতে জবাইয়ের পূর্বে অবশ করা হয়। তবে এইচএবি কোনো প্রকার স্টান্ট ছাড়া পশু জবাইকে সহি হালাল পদ্ধতি বলে মনে করে। সংগঠনটির শায়ক তৌকির ইসহাক বলেন, দুইটি পদ্ধতি পশু প্রাণহানির সবচেয়ে মানবিক পদ্ধতি। এর বিপরীত কিছু চিন্তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, পশুর প্রতি খারাপ আচরণ ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। পশুর কষ্ট পুরোপুরি লাঘব করা না গেলেও, কষ্ট যাতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন হালাল অথোরিটি হিসেবে, তাদের অনুমদিত কোনো সরাইখানায় তারা পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা সহ্য করেন না। এ ব্যপারে তাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
এদিকে হালাল বন্ধের উদ্যোগ প্রতিহত করতে পাল্টা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে হালাল মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান এইচএমসি। তারা ২৩ ফেব্র“য়ারির আগেই প্রয়োজনীয় সাক্ষর সম্বলিত আরেকটি পিটিশিন পার্লামেন্টে জমা দিতে চায়। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট সকলকে এই পিটিশনে সাক্ষর করার আহবান জানিয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত এ ক্যাম্পেইনে প্রায় ৭৫ হাজার লোক সাক্ষর করেছে। এইচএমসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হালাল রক্ষায় হালাল খাবারের অনুসারী সকলকে এই পিটিশনে সাক্ষর করা জরুরি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের উচিত নিজ নিজ এলাকার এমপিদের কাছে হালালের গুরুত্ব তুলে ধরা। আগামী ২৩ ফেব্র“য়ারি পার্লামেন্ট বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই এটা করতে হবে। যাতে এমপিরা হালাল বন্ধের বিষয়ে মুসলিমদের উদ্বেগকে তুলে ধরতে পারেন।
ব্রিটেনে প্রায় ৩০ লক্ষ মুসলমান হালাল খাবারের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ৩ লক্ষ ইহুদি জনগোষ্ঠী কোশের খাবার খেয়ে থাকেন। যা হালাল উপায়ে পশু জবাইয়ের মত একটি পদ্ধতি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button