দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমান মর্যাদা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

pmপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাওরায়ে হাদিস সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমান প্রদান করেছেন। কওমী মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্ধের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি করে এই সমমান প্রদান করা হলো বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাতে গণভবনে কওমী মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই স্বীকৃতি প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে এর একটা প্রজ্ঞাপন হবে। তারপর আপনারা যেভাবে চান সবকিছু মিলিয়ে একটা আইনী ভিত্তি যেন হয় সে বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো। অনেকেই এ বিষয়ে প্রস্তাব রেখেছেন। আমি এটুকুই বলবো কওমী মাদ্রাসার সনদকে আমরা স্বীকৃতি দিতে চাই- এখানে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইমন্ত্রী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী রয়েছেন, সচিবরা রয়েছেন, আমার দপ্তরের মুখ্য সচিব রয়েছেন এবং অন্য কর্মকর্তারা রয়েছেন, আমি আশা করি তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। যাতে এই সনদের স্বীকৃতি দ্রুত হতে পারে। আপনাদের মতামত যেটা আমার কাছে এসেছে, সকলের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে এবং দেওবন্ধের যে মূলনীতি সেটার ওপর ভিত্তি করেই এটা হবে।
অনুষ্ঠানে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং হাটহাজারি দারুল উলুম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমেদ শফি, জাতীয় দ্বিনি শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি মাওলানা ফরিদউদ্দিন, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী, ওলামা মাশায়েখ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল হালিম বোখারি, মাওলানা নূর হোসেন কাশেমী বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের লোকেরা আমাদের কওমী মাদ্রাসা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতো। আমি সবসময় এটার প্রতিবাদ করতাম। আমি সবসময় এটাই বলতাম আমাদের দেশে শিক্ষার শুরুই হয়েছে এই কওমী মাদ্রাসা দিয়ে। এটা যদি শুরু না হোত তাহলে আমরা কেউ শিক্ষিত হতে পারতাম না। যারা দেওবন্ধ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তাদের বিরাট ভূমিকা ছিল। তারাই প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। কাজেই আজকে যে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি সেখানে তাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। কারণ সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকেই এই যাত্রা শুরু হয়। আমি সবসময় মনে করি, আমাদের কওমী মাদ্রাসার একটা সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া একান্তভাবেই দরকার। সেজন্য আমরা আগে আল্লামা শফিকে প্রধান করে আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম- যে কিভাবে এই কারিকুলামটা করা যায়। প্রায় ৬টা মাদ্রাসা বোর্ড আমাদের রয়েছে- তাদের সকলের মতামতটা কি, সেটাকেও আমাদের গুরুত্ব দেয়া। এটাও আমরা করতে চাই এবং সেইসাথে অন্তত, একেবারে সর্বনিম্ন যে পয়েন্টে আপনারা একমত হতে পারেন সে বিষয়ে আপনারা যেন একমত হতে পারেন সেটা আমরা চেয়েছিলাম, যাতে আমরা সনদের স্বীকৃতিটা অন্তত দিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন আমি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। আমাদের যে ছেলে-মেয়েরা এই সনদটা পাবে অন্তত তাদের ভবিষ্যতটা আলোর পথে যাত্রা শুরু করবে। তারা দেশে বিদেশে চাকরী করতে পারবে, বিভিন্ন জায়গায় কাজ পাবে। তারা আরো উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তাদের জীবনে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাদের এতদিন শিক্ষার কোন সরকারি স্বীকৃতি ছিল না, সনদের স্বীকৃতি ছিল না। এজন্য তারা কোথাও কোন সুযোগ পেত না। এই সনদ হয়ে যাওয়ার পর সেই সুযোগ তারা পাবে। তাদের জীবন আর ব্যর্থ হবে না। সফল হবে।
এখানে একটি বিষয় এসেছে আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোষাক ছিল একরকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাও একটা হাস্যকর ব্যাপার করা হয়েছে। এটা কেন করা হলো, কারা করলো, কিভাবে- আমি জানি না। ইতোমধ্যেই আমাদের প্রধান বিচারপতিকে আমি এই খবরটা দিয়েছি এবং খুব শীঘ্রই আমি ওনার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসবো। আলোচনা করবো এবং আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।
তবে, আমি আপনাদের বলবো আপনারা ধৈর্য ধরেন। কারণ এটা নিয়ে কোন হৈ চৈ নয়। একটা কিছু যখন করে ফেলেছে সেটাকে আমাদের সরাতে হবে। কারণ সেটার জন্য আপনারা একটুকু ভরসা অন্তত রাখবেন যে, এ বিষয়ে যা যা করার আমি তা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি ভূমি আইন করছি সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন এসেছে-এখানে আমরা যে ভূমি আইনটি করছি সব ভূমি আইনেই সবসময় এটা ছিল-যখন কোন ভূমি উন্নয়নের কাজ হয় তখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আর এই অধিগ্রহণ করতে গেলে সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘর, স্কুল কলেজ অনেক কিছুই পড়ে। কাজেই এখানে মসজিদ সরানোর আলাদা কোন আইন কিন্তু করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় মসজিদে নববী এবং হারাম শরীফের উদাহরণ দেন। এই মসজিদ দুটিকে সম্প্রসারণের জন্য অনেক ছোট ছোট মসজিদ কিন্তু ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। কাজেই এটা নিয়ে অন্য কিছু যদি কেউ বলে থাকে তাহলে সেটা সঠিক বলছে না।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদের কোন স্থান হবে না। তিনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরতে আলেমদের প্রতি অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি আর কেউ যেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথে যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি সরকারের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম জোরদারে সকলকে অংশগ্রহণেরও আহবান জানান।
তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করবেন যেন দেশের খেদমত করতে পারি। পিতা-মাতা, ভাইদের হারিয়েছি। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না আপনজন হারালে, আর আমি আর আমার ছোট বোন একদিনে মা-বাবা, ভাই, ভাইদের নবপরিনীতা বধু, আমার একমাত্র চাচা, ফুপাতো ভাই, বোন থেকে শুরু করে পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে আমরা হারিয়েছি। বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। এইদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমি জানি এই শোক সহ্য করা খুবই কঠিন। শুধু আমি এটুকুই বিশ্বাস করি নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তিনি আমার হাত দিয়ে দেশের জন্য, দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু কাজ করাবেন বলেই আমাকে দেশ সেবার এই সুযোগ এবং শক্তি দিয়েছেন। আর সেই সাথে আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামেরও খেদমত করার একটু ছোট্ট সুযোগ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button