সাত মুসলিম দেশকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

Visaসাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই সাত দেশের নাগরিকদের ভিসা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাতটি দেশ হচ্ছে- সিরিয়া, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, সুদান ও সোমালিয়া।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে ওই সাতটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘বিপজ্জনক’, ‘সন্ত্রাসপ্রবণ’ এবং  ‘দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।
ডেইলি মেইল অনলাইন জানিয়েছে, আজ-কালের মধ্যেই বিষয়টির জন্য দেওয়া নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক টুইট-বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বড় পরিকল্পনার দিন আগামীকাল। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমরা দেয়াল নির্মাণ করব।’ দেয়াল বলতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে অর্থাৎ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বিষয়টিই জানিয়েছেন। এ ছাড়া সিরিয়ার শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা বন্ধ করতে চান ট্রাম্প।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৩৮ হাজার ৯০১ জন মুসলিম শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ওই সংখ্যাটাই সর্বোচ্চ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ইরাকের অস্থিতিশীলতা, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার সরকার পতনের পর মুসলিম শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে।
গত বছর মুসলিম শরণার্থীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করে সিরিয়ার লোকজন। ১২ হাজার ৪৮৬ জন সিরীয় নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ কর। দ্বিতীয় ধাপে আছে সোমালিয়া। গত বছর নয় হাজার ১২ জন প্রবেশ করে। এরপরই আছে ইরাক। দেশটির সাত হাজার ৮৫৩ জন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।
সাত দেশের অবস্থা নিয়ে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে বিদ্রোহীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দেশটিতে নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন একটি তালিকা করা আছে যুক্তরাষ্ট্রের। ওই তালিকায় ১৯৭৯ সালেই অন্তর্ভুক্ত হয় সিরিয়া।
২০০৩ সালের পর থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে আছে ইরাক। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন আর তাঁর দলের পতনের পরও অস্থিতিশীলতা কাটেনি। বরং ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে জঙ্গি সংগঠনের উদ্ভব হয়।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ইরান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। যুক্তরাষ্ট্র বলছে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের শিয়া গ্রুপকে সশস্ত্র সহায়তা করছে ইরান।
২০১১ সালে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর দেশটি স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, সব ধরনের সশস্ত্র গ্রুপ দেশটিতে সক্রিয়। এ ছাড়া দেশের একটি অংশে আইএস সক্রিয়।
গত বছর একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়, সোমালিয়া একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র। দেশটির সরকারব্যবস্থা অকার্যকর। আর দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। আল শাবাব নামে একটি গোষ্ঠী ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের করা সন্ত্রাসীর পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় সুদানের নাম এসেছে ১৯৯৩ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দেশটি সহযোগিতা করছে না। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের হামাসকে সুদান সরকার সাহায্য করে বলেও অভিযোগ মার্কিন প্রশাসনের।
কয়েক বছর ধরে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির সেনাদের সংঘর্ষ চলছে। হুতি শিয়া ধর্মাবলম্বীদের একটি দল যারা ২০১৪ সালে ইয়েমেনের রাজধানী দখলে নিয়ে নেয়। এখন পর্যন্ত দেশটির সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৩৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি ক্লিনটনকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদ্য বিদায়ী বারাক ওবামার বেশ কয়েকটি আদেশ বাতিল করে দেন। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘ওবামাকেয়ার’। এ ছাড়া মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। নর্থ ডাকোটায় তেল পাইপলাইন নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও বিক্ষোভের মুখে বারাক ওবামা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
এদিকে, ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সিএনএনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে ২০০৯ সালে বারাক ওবামার অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার সংখ্যা বেশি দেখা যায়। তবে হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেস সেক্রেটারি বলেন, সংবাদমাধ্যম মিথ্যাচার করছে। এমনকি ট্রাম্পও তাঁর টুইটারে সংবাদমাধ্যমের দিকে অভিযোগের তীর তোলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হিলারির পক্ষে জাল ভোট পড়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনের আগেও তিনি এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। নির্বাচনে ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বেশি পেলেও হিলারি জনপ্রিয় ভোট বেশি পেয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ভোট ব্যবধান প্রায় ৩০ লাখ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার দিনই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এদের বেশির ভাগই নারী। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। ভোটগ্রহণের আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। অনেক নারী সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে এক নারী যৌন হয়রানির মামলা করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button