ব্রিটিশদের পোশাক বানায় সিরিয়ার শরণার্থী শিশুরা

child-refugees-in-turkey-making-clothes-for-uk-shopsযুদ্ধ সিরিয়ার সব মানুষকেই এক নির্মম বাস্তবতার সম্মুখিন করেছে। দেশ ছাড়া হয়েছে লাখ লাখ নাগরিক। আর এ বাস্তবতা থেকে রেহাই পায়নি দেশটির নারী ও শিশুরাও। আত্মরক্ষার্থে তারা নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছে ভিন দেশে আশ্রয়ের আশায়। বিবিসির এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, তুরস্কে আশ্রিত সিরিয়ান শিশুদের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নিয়োগ করা হচ্ছে। আর তারা যেসব পোশাক তৈরি করছে সেগুলো প্যাকেট হয়ে সোজা চলে যাচ্ছে ব্রিটেনে।
গতকাল সোমবার বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি ‘প্যানোরোমা’ তুরস্কের কারখানাগুলোতে একটি অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলো। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব ফ্যাক্টরি বিশেষ করে পোশাক শিল্পগুলোতে যেসব শ্রমিক কাজ করছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিরিয়ান শিশুও রয়েছে। পোশাক বানানো থেকে শুরু করে তাদের কেউ কেউ পোশাকে লেবেল লাগানো এবং পাইকারি দোকানগুলোতে নিয়োজিত আছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, শরণার্থী শিশুদের বয়স বিবেচনা না করেই সুপরিচিত জারা এবং ম্যাঙ্গো জিন্স’র মতো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘মার্ক ও স্পেন্সার’ দাবি করেছে তুরস্কে তাদের প্রতিষ্ঠানে একজন সিরিয়ান শিশুও নিযুক্ত নয়।
তবে, প্যানোরোমার দাবি, ব্রিটিশ এই প্রতিষ্ঠানটিতে তারা অন্তত সাতজন সিরিয়ান শিশুর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছে। এইসব শিশুকে প্রতি ঘণ্টায় এক পাউন্ডের চেয়েও কম মাইনে দেওয়া হয়; যা ন্যূনতম তুর্কি বেতনের চেয়েও কম। একজন দালালের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ওই দালালই রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে তাদের পাওনা পরিশোধ করে।
শরণার্থী শিশুদের একজন জানায়, ফ্যাক্টরিতে তাদের সঙ্গে খুবই নাজুক আচরণ করা হয়। সে বলে, ‘যদি কোন সিরিয়ানের ভুল হয়, তবে তারা যেন তাকে এক টুকরো কাপড়ের মতো ছুড়ে ফেলে দিতে চায়।’
প্যানোরোমার অনুসন্ধন অনুযায়ী, ১৫ বছর বয়সী এক সিরিয়ান শিশুকে দিনে ১২ ঘণ্টার মতো কাপড় আয়রন করতে হয়। আয়রনের পরই এইসব কাপড় ব্রিটেনের জন্য প্রস্তুত হয়।
মার্ক এন্ড স্প্যান্সারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘প্যানোরোমার অনুসন্ধান অত্যন্ত গুরুতর, এটা আমাদের কাছে কাম্য নয়। আমরা যেসব সিরিয়ানকে নিয়োগ দিয়েছি তাদের স্থায়ীভাবেই তা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোন শিশুর উপস্থিতি নেই।’
প্যানোরোমার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘এমন কোন ঘটনা যেন আমাদের এখানে না ঘটে তার জন্য আমরা আরও সচেতন থাকবো।’
তবে, সমালোচকরা বলছেন, প্যানোরোমার অনুসন্ধানের পরও প্রতিষ্ঠানটি উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিতে সচেতন হচ্ছে না।
বিজনেস এন্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে দ্যানিয়েল ম্যাকমুলান বলেন, ‘তাদের উচিত তাদের কাপড় কোথায় এবং কিভাবে তৈরি করা হয়।’
তুরস্কে ইউরোপীয়দের জন্য কাপড় বানানোর একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় তিন মিলিয়ন সিরিয়ান শরণার্থী দেশটিতে অবস্থান করছে। এসব শরণার্থীর অধিকাংশরই কোন ওয়ার্ক পারমিট নেই।
প্যানোরোমার প্রতিবেদক ড্যারেঘ ম্যাসিনটায়ার বলেন, ‘সিরিয়ানদের মুজুরির ক্ষেত্রে খুবই বৈষম্য অবলম্বন করা হয়। আর এ থেকে উত্তরণের কী উপায় আছে সে সম্পর্কে জানেনা বেশিরভাগ সিরিয়ানই।’ –বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button