বারবার বাংলাদেশে কারখানায় রক্তক্ষয়ী অগ্নিকাণ্ড

HRWবাংলাদেশে ঈদ উদযাপনকে ছাপিয়ে উঠেছে শ্রমিক মৃত্যুর নৃশংসতা। গত সপ্তাহান্তে, তিন তলা একটি প্যাকেজিং কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দরুন পুরো ভবন ভেঙ্গে পড়ে। টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড নামে ওই কারখানায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩৩ জন শ্রমিক। আহত হয়েছে আরও কয়েক ডজন। ধংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আগে এ কারখানার বহুজাতিক গ্রাহকদের মধ্যে ছিল নেসলে বাংলাদেশ ও বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার ও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মালিক সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ওই মালিক সাবেক সংসদ সদস্য। কিন্তু সর্বশেষে এ বিপর্যয়ের ফলে প্রশ্ন উঠেছে, অনিরাপদ কারখানাগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আর কত মানুষকে মরতে হবে?
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ভবন ধ্বসে নিহত হয়েছে ১১০০-এরও বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক ও আহত হয়েছে ২ সহস্রাধিক। এর দরুন  বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক পোশাক ব্রান্ড ও পশ্চিমা সরকারগুলো শ্রমিক নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
বৈশ্বিক ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক পোশাক ব্রান্ডগুলোর স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক বাংলাদেশ ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি অ্যাকর্ড অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তার জন্য নতুন পরিদর্শন কাঠামো তৈরি করেছে। এতে কিছু মাত্রায় স্বচ্ছতাও রয়েছে, যা এ শিল্পে আগে ছিল না। অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি নামে আরেকটি উদ্যোগ ছিল আমেরিকান ব্রান্ডগুলোর। এসব উদ্যোগ কেবলমাত্র বাংলাদেশ সরকারের ব্যার্থতা নয়, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশ্রমে মারাত্মক ঘাটতিরও এক ধরণের স্বীকারোক্তি। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন নিরীক্ষার বেলায় প্রায়ই তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু রানা প্লাজাও ‘ওয়েক-আপ কলে’র জন্য যথেষ্ট ছিল না। এমনকি আজও, অ্যাকর্ড অর অ্যালায়েন্সে স্বাক্ষর করেনি অনেক আন্তর্জাতিক ব্রান্ড। ফলে বহু কারখানা এসব উদ্যোগের অংশ নয়। আর এই শ্রমিকরা বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ নিয়ে সতর্কতার ব্যাপারে নির্ভর করে বাংলাদেশী শ্রমিক পরিদর্শন কর্তৃপক্ষ কিংবা তৃতীয় পক্ষের নীরিক্ষিকদের ওপর।
টাম্পাকো অগ্নিকাণ্ডের পর, নেসলের একজন মুখপাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে লিখেছেন যে, ২০১১ সালে তৃতীয় পক্ষীয় একজন নীরিক্ষক টাম্পাকো কারখানায় সফর করেছেন। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রাপ্ত সব সমস্যা ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় পরিদর্শনের আগে ঠিক করে ফেলা হয়। বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোকেও একই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, কবে ও কে ওই কারখানা সর্বশেষ পরিদর্শন করেছিল? কিন্তু কোন জবাব দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশের কারখানাগুলো অধিকতর নিরাপদ করতে সরকার ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে। কিন্তু টাম্পাকোর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য করে যে, তৃতীয় পক্ষের নীরিক্ষা কি আসলেই নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যকরী মডেল, নাকি স্রেফ দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button