লন্ডনে আসাদ-পরবর্তী সিরিয়া সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বাদ দেয়া এবং নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তুলে ধরেছে বিরোধী দলগুলোর জোট। লন্ডনে গত বুধবার ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে এই পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এদিন লন্ডনে সিরিয়ার বিরোধী দলগুলোর জোট হাই নেগোসিয়েশন কমিটির (এইচএনসি) পরিকল্পনাটি তুলে ধরা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ছয় মাস সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীরা আলোচনা করবে। এরপরের দেড় বছর একটি অন্তর্বর্তী সরকার সিরিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। ২৫ পৃষ্ঠার এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ওই সরকারে বিরোধী ও বর্তমান সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকবেন। এইচএনসির প্রধান রিয়াদ হিজাব বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ চলে যাক, এটাই এখন সিরিয়ার সবার দাবি। তিনি চলে গেলেই যুদ্ধের অবসান হবে। তবে সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ বিবিসিকে বলেছেন, আসাদের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে আসাদবিরোধীদের এই বৈঠকের আয়োজন করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসাদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বাদ দিয়েই পরিচালিত হবে। তাঁরা সিরিয়ার মানুষের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। প্রস্তাবে বলা হয়, এই সরকারের উদ্দেশ্য এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা; যেখানে স্বাধীনতা রক্ষিত হবে, ব্যক্তির অধিকার থাকবে।
এদিকে, এই বৈঠকের আগে সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেন, তিনি এখনো সিরিয়া সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান আশা করেন। কিছু জায়গায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী জয়লাভ করলেও প্রেসিডেন্ট আসাদ এমন কোনো অবস্থায় নেই যে তিনি চলমান লড়াইয়ে জিতবেন। সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান অবস্থার পরও প্রেসিডেন্ট আসাদ যদি কোনো আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানান, তবে সেখানে সামরিক কর্মকা- আরো বৃদ্ধি পাবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দৃশ্যত এই ঘোষণা একটি আশার আলো। তবে এটি কতটা কার্যকর করা যাবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসান ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্য এইচএনসি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, যুদ্ধবিরতির পর প্রেসিডেন্ট আসাদ ঐক্য সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। যদিও সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ জোর দিয়েই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। বিবিসি’কে তিনি বলেন, দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব রীতিমত পাগলামি এবং অবিশ্বাস্য। আমরা বলতে চাই, সিরিয়ার জনগণের হাতেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণের ভার দেয়া হোক। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তারা তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করুক। কে সিরিয়া শাসন করবে সে বিষয়ে পূর্বশর্ত দেবেন না। গৃহযুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই ক্ষমতা ছাড়বেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। অন্যদিকে, সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবাইর বলেছেন, আমার মনে হয় না, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে একমত হয়ে রাশিয়া ও ইরান প্রেসিডেন্ট আসাদকে সরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় চাপ দিতে প্রস্তুত। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। যদি রাশিয়া ও আমেরিকা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হতে পারে, তাবে মতপার্থক্যের পরও জেনেভায় আলোচনা আবার শুরু করা যাবে। যদিও মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বৈরীভাব এখনো আছে। চীনে সদ্যসমাপ্ত জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে গত সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ওবামা বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের যে ফাঁক রয়েছে তা তারা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button