ইইউতে ভিসামুক্ত চলাচলের সুবিধা পেতে তুরস্ককে শর্ত

Turkey EUতুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ভিসা ফ্রি বা উন্মুক্ত চলাচলের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত বেঁধে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ-ক্লাউডি জাঙ্কার এমন শর্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তুরস্ককে এমন সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সংস্কার সহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সম্পন্ন করতে হবে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী ও সাংবাদিকদের বন্দি করে রাখা যাবে না। যদি তারা এসব শর্ত পূরণ করতে পারে তাহলেই শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে তুরস্কের নাগরিকরা অক্টোবর থেকে ভিসামুক্ত চলাচলের সুবিধা পাবেন।
এ মাসের শুরুর দিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, যদি ২৮ জাতির সংগঠন ইইউ অক্টোবর থেকে তুরস্কের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক নিয়ম শিথিল করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার সরকার ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসীর প্রবাহ থামানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। ওদিকে গত ১৫ই জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান ও তার পর পর ব্যাপক দমনপীড়ন নিয়ে ব্রাসেলস ও আঙ্কারার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তুরস্ক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড পুনর্বহাল করার পক্ষে কথা বলে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান পরিস্কার করে বলেন যে, যদি পার্লামেন্ট মৃত্যুদন্ড ফিরিয়ে আনার পক্ষে ভোট দেয় তাহলে তিনি সেই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করবেন এবং তা আইনে পরিণত হবে। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সতর্ক করা হয়। বলা হয়, তুরস্ক যদি মৃত্যুদন্ড পুনর্বহাল করে তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তাদের সদস্যপদ বাতিলও হতে পারে। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ব শর্ত হলো মৃত্যুদন্ড বাতিল করা। অভ্যুত্থান পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান যেভাবে অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে মানুষজনকে গ্রেপ্তার করা শুরু করেন তাতে উদ্বেগ দেখা দেয় যে, তিনি এ সুযোগ ব্যবহার করে ভিন্ন মতাবলম্বী ও সমালোচকদের দমনপীড়ন চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে মৃত্যুদন্ড ফিরিয়ে এনে তাদেরকে নির্মূল করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তোলা ওই প্রস্তাবের জবাব দিয়েছেন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঙ্কার। তিনি অস্ট্রিয়ায় ‘ইউরোপীয়ান আল্পবাচ’ ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে বলেছেন, যদি সব শর্ত তুরস্ক পূরণ করে তাহলে ১লা অক্টোবর থেকে তুরস্ককে ভিসা মুক্ত চলাচলের সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তবে ভিসা মুক্ত চলাচলের এ শর্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত শরণার্থীদের বিষয়টি। একই সঙ্গে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী ও সাংবাদিকদের বন্দি করে রাখা যাবে না। আমরা যেটা বলতে চাই তাহলো, এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ শিথিল করা হোক তুরস্কের কাছে এমনটাই চায় ব্রাসেলস। কিন্তু আঙ্কারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, আইএস ও কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এ আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে কমপক্ষে ২৪০ জন মানুষ মারা যাওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সতর্কতায় উদ্বিগ্ন তুরস্ক। ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে। হাজার হাজার মানুষকে তাদের চাকরি থেকে সন্দেহজনকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই অভ্যুত্থানের জন্য তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার অনুসারীদের দায়ী করেছে। কিন্তু গুলেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button