ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন কেরানীগঞ্জে

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের ২০০ বছরের পুরনো কারাগারের ঠিকানা বদল হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা বন্দীদের কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে নেওয়া শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম চলবে আজ শনিবার পর্যন্ত।
এদিকে বন্দী স্থানান্তরের সময় নিরাপত্তার খাতিরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে জনসাধারণের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়তে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৩২ জন বন্দীকে নতুন নির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জে এবং কাশিমপুর কেন্দীয় কারাগার-২ এ নেওয়া হয়েছে।
কারাগার সূত্র জানিয়েছে, ৬ হাজার ৪০০ বন্দীকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায় কী হবে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। এখানে বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবির জানিয়েছেন, ‘কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায় হবে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর। এলাকাবাসীর বিনোদনের স্থান হিসেবে কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থানে পার্ক হবে। ঐতিহাসিক মূল্য আছে, এমন ভবন সংরক্ষণ করা হবে, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, বন্দীরা কেরানীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে যেতে পেরে খুশি। ঢাকা থেকে সেখানে গিয়ে বন্দীরা বেশ আরামে থাকবেন বলে আমি আশা করছি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী বন্দীরা যেরকম সুযোগ পেয়ে থেকেন আমরাও তা নিশ্চিত করবো। এর আগে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) আবিদ হাসান জানান, বর্তমানে নতুন কারাগারটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সেখানে মানবাধিকার সমুন্নত রেখে বন্দীরা সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কেরানীগঞ্জের কারাগারটি পুরুষ কারাগার হওয়ায় ইতোমধ্যেই প্রায় সব নারী ও শিশুকে কাশিমপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সিনিয়র কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, গতকাল শুক্রবার ঐতিহাসিক দিন। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ১৭৮৮ সালে নির্মিত কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হচ্ছে। কারাগারের ভেতরে ১৭ একর জমি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কারাগারের স্থানে মানুষের বিনোদনের জন্য পার্ক হবে। প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে কারাগারের কিছু ভবন সংরক্ষণ করা হবে।
হেভিওয়েট’ বন্দীদের নেয়া হচ্ছে কাশিমপুর কারাগারে: সাড়ে ৬ হাজার পুরুষ বন্দীকে স্থানান্তর করা হচ্ছে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে। আর রাজনৈতিক ও যুদ্ধাপরাধীর মামলার হেভিওয়েট বন্দীদের নেয়া হচ্ছে কাশিমপুর কারাগারে। বেলা সাড়ে ১১টায় কারা অধিদপ্তরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে ২৫টি প্রিজন ভ্যানে এরই মধ্যে ২ হাজার বন্দীকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৮ হাজার বন্দী রয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪শ’ বন্দীকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সেখানে নারী সেল না থাকায় নারী বন্দীদের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
বন্দী স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে ভোর ৪টা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান জানান, সকাল থেকেই ঢাকা নাজিমুদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জ নবনির্মিত কারাগার পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। রাস্তায় ২০০ গজ পরপর অবস্থান নেয় র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন। তিনি আরও বলেন, ‘ বন্দী স্থানান্তরে কোনো থ্রেট (হুমকি) নেই। তারপরেও যেহেতু এটি ইতিহাসের একটি বড় ঘটনা, তায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েই বন্দী স্থানান্ত র করা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসীন রেজা জানান, কারা বন্দী হস্তান্তর নির্বিঘœ করতে ২৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে সাড়ে চার হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতার নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারাসূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে প্রায় ১৯৪ একর জায়গার ওপর চার শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম এই কারাগারটি।
১৯৮০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় আবাসিক ভবন গড়ে ওঠে। এতে কারাগারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা উভয়ই বিঘিœত হচ্ছে বলে উপলব্ধি করে তৎকালীন সরকার। সে বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাউন্সিলের একটি সভায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সরানোর বিষয়টি প্রথম উঠে আসে। ১৯৯৪ সালে একে চূড়ান্তবে সরিয়ে দুটি কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে একটি গাজীপুরের কাশিমপুরে ও অন্যটি কেরানীগঞ্জে। অবশেষে ২০০৬ সালে একনেকে কেরানীগঞ্জে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরে তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা দেবে জঙ্গি-দুর্ধর্ষ আসামীরা: কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামীরা হাজিরা দেবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজকে (শুক্রবার) সকালে আমার কথা হয়েছে। আসামীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। গতকাল দুপুরে কারা অধিদফতরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তবে কবে থেকে এ কাজ শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, শিগগিরিই এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। বন্দীদের কারাগারে রেখেই হাজিরা নিশ্চিতের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। কী ধরনের বন্দীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যারা দুর্ধর্ষ তাদেরও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখনও অনেক পথ বাকি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
পরিত্যক্ত কারাগারের স্থানে হবে নানা স্থাপনা: কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি স্থানান্ত রের পর অধুনালুপ্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের খালি জায়গার যৌক্তিক ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে সরকারের। তবে এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি বলে কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, কীভাবে এই ১৭ একর জায়গা ব্যবহার করা যায়, কিংবা এখানে কী কী স্থাপনা তৈরি করা যায়, এজন্য জনগণের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘কারাগার স্থানান্তরের পর খালি জায়গার ব্যবহারের পরিকল্পনা আমাদের আছে। কীভাবে এটা ব্যবহার করা যায়, তার জন্য জনসাধারণের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এজন্য একটি অবকাঠামো ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সেখানে যারা সেরা তাদের ডিজাইন অনুযায়ী পরবর্তী নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু দিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, পুরাতন কারাগারকে নিয়ে সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। এর সিংহভাগ জায়গায় তৈরি হবে কারা কল্যাণ ভবন। সঙ্গে থাকবে সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম, বহুতল পার্কিং, অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স ও সিনেপ্লেক্স। অবসর কাটানোর জন্য ভবনের বাইরে থাকবে সবুজ উদ্যান। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হবে একটি কমিউনিটি সেন্টার। নির্মাণ করা হবে কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। তবে পুরাতন কারাগারে সরকারের উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা হলো- কারাগারের অবশিষ্ট স্থানের একটি অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার নেতার পৃথক দুটি স্মৃতি জাদুঘর তৈরি করা হবে। জাতীয় চার নেতাকে যে তিনটি কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেই সেলকে ঘিরেই মূলত জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর তৈরি করা হবে। সেখানেই চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল।
বন্দীরা বলেন আমরা কি ভিআইপি!: বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারায় ও মিডিয়াকর্মীদের তৎপরতা দেখে বন্দীরা প্রিজনভ্যান থেকে বলে ওঠেন, ‘আমরা কি ভিআইপি? আমাদের ছবি তুলছে কেন? এ সময় তাদের হৈ-হুল্লোড় করতেও দেখা গেছে। এদিকে, নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়ার সময় কোনও কোনও প্রিজনভ্যান থেকে রাজনৈতিক দলের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, বন্দীরা কেরানীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে যেতে পেরে খুশি। ঢাকা থেকে সেখানে গিয়ে বন্দীরা বেশ আরামে থাকবেন বলে আমি আশা করছি। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী বন্দীরা যেরকম সুযোগ পেয়ে থেকেন আমরাও তা নিশ্চিত করবো।
কারা ফটকে স্বজনদের অপেক্ষা: এদিকে বৃহস্পতিবার বা আজ শুক্রবার যে সব বন্দীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, সেসব বন্দীর স্বজনরা নাজিম উদ্দীন রোডের কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তাদের জামিনের ব্যাপারে সদুত্তর পাচ্ছেন না তারা। মাদক মামলায় উত্তর খান থানায় গ্রেফতার হওয়া আসামি রানা দেওয়ানের (২৮) বড় বোন নাজনিম কারাগার সংলগ্ন শাহী মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের গতকাল জামিন হওয়ার কথা থাকলেও বন্দী স্থানান্তর করার কারণে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৯ টা থেকে এখানে অপেক্ষা করছি কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না। শুধু পুলিশ এখান থেকে আমাদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না। কলাবাগান থানার আসামী তমাল হোসেন বাবুর বোন জানান, আমার ভাইয়ের আজ জামিনের কথা থাকলেও কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। সে এখন এই কারাগারে নাকি কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে তাও বুঝতে পারছি না। যোগাযোগের জন্য কর্তৃপক্ষের কেউ কোন কথা বলছেও না। বারবার পুলিশ শুধু আমাদের এ স্থান থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে দায়িত্বরত কারাগার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাদের জামিন হয়েছে সেসব বন্দীদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে। তাদের এই কারাগার নাকি কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পাবে তা মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত কারণে কারাগার এলাকায় প্রবেশের চারদিকের পথ অর্থাৎ চানখাঁরপুল, বংশাল, চকবাজার ও বেগমবাজারে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকাল থেকে শুরুহয় বন্দী স্থানান্তর। সকালের সূর্যোদয়ের পরপরই শুরু হয় বন্দী স্থানান্তর।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button