৬৬ জন আরোহী নিয়ে মিশরের বিমান বিধ্বস্ত

Egyptপ্যারিস থেকে কায়রো যাওয়ার পথে ৬৬ জন আরোহী নিয়ে মিশরের একটি বিমান দক্ষিণ গ্রিসের কার্পাথোস দ্বীপপুঞ্জ লাগোয়া সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়েছে। খবর বিবিসির। ইজিপ্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ৬৬ জন যাত্রী ও ক্রুসহ তাদের কায়রোগামী বিমান নিখোঁজ হয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, কায়রো সময় রাত আড়াইটায় মিশরের আকাশসীমায় প্রবেশের আগ মুহূর্তে তাদের এয়ারবাস এ-৩২০ বিমানটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিমানটিতে তিন শিশুসহ ৫৬ জন যাত্রী ছিলেন। এছাড়া সাতজন ক্রু ও তিনজন নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন।
যাত্রীদের মধ্যে ৩০ জন মিশরের, ১৫ জন ফ্রান্সের ও দু’জন ইরাকি ছাড়াও ব্রিটেন, কানাডা, বেলজিয়াম, কুয়েত, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, সুদান, চাদ ও পর্তুগালের নাগরিক ছিলেন।
এমএস ৮০৪ বিমানটি যখন পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ৩৭ হাজার ফুট ওপর দিয়ে যাচ্ছিল, কর্মকর্তারা জানান, কায়রো সময় ২টা ৪৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় ওই উড়োজাহাজটি মিশরের আকাশসীমা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে আকাশে উড়ছিল।
বিশ্বজুড়ে যাত্রীবাহী বিমানগুলোর গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিমানটি ছিল এয়ারবাস এ-৩২০ বিমান।
প্যারিস সময় রাত ১১টায় ছেড়ে আসা বিমানটি রাত সোয়া ৩টায় কায়রো পৌঁছানোর কথা ছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলান্দ জানান, ভূমধ্যসাগরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের কাছে বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। এগুলো নিখোঁজ মিশরীয় বিমানটির অংশ বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রিসের একজন সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিমানটি যেখানে সমুদ্রে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই তারা কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছেন।
এর আগে গ্রিসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পানোস কামেনোস জানিয়েছেন, প্যারিস থেকে কায়রো যাওয়ার পথে মিশরের বিমানটি ধসে পড়ার আগে আকাশে দু’বার চক্কর খেয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন।
তিনি বলছেন, এয়ারবাস এ-৩২০ বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবার আগে ৯০ ডিগ্রি বামে, আর ৩৬০ ডিগ্রি বামে ঘুরে দু’বার চক্কর বা ডিগবাজি খায়। এরপরে বিমানটি ৩৭ হাজার ফিট থেকে একেবারে ১৫ হাজার ফিটে নেমে আসে। এরপর ১০ হাজার ফিট ওপর থেকে হারিয়ে যায়।
তবে মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কারিগরি ক্রুটির তুলনায় সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনাই বেশি বলে তারা মনে করেন।
মিশরের বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী শেরিফ ফাথাই বলছেন, আমি এখনি নিশ্চিত করে কিছু বলব না, তবে আপনারা যদি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন, তাতে এই ঘটনায় পেছনে সন্ত্রাসী হামলা বা এ ধরনের সম্ভাবনাই বেশি।
গ্রিসের বিমান উড্ডয়ন কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানটি যখন গ্রিসের আকাশসীমা প্রবেশ করে, তখন পাইলটের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।
সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে বলেই তিনি জানিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর তারা আবার পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিমানটি থেকে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এর দুই মিনিট পরেই রাডার থেকে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে আলাপের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলান্দ বলেছেন, এ ঘটনা কেন ঘটেছে, সেটা খুঁজে বের করা হবে।
গ্রিসের কার্পাথোস দ্বীপের কাছে বড় ধরনের তল্লাশি অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। গ্রিস আর মিশরের সেনাবাহিনী এই তল্লাশিতে অংশ নিচ্ছে। বিমান আর জাহাজ পাঠাচ্ছে ফ্রান্সও। কায়রোতে ফরাসী দূতাবাসে খোলা হয় ক্রাইসিস সেল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button