বাংলাদেশে ৩০ বছরের মধ্যে এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

Hotগত ত্রিশ বছরের মধ্যে চলতি এপ্রিল মাস ছিল বাংলাদেশ সবচেয়ে উষ্ণ। আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মাসে নজিরবিহীন দেশজুড়ে টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলছে দাবদাহ। এপ্রিল মাসে এত দীর্ঘ দাবদাহ গত ৩০ বছরের মধ্যে দেখা যায়নি। আগামী পাঁচদিন কিছু এলাকায় তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া দাবদাহটি গতকাল মঙ্গলবার ২০ দিন অতিক্রম করেছে।
১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গত ৩০ বছরের মধ্যে এপ্রিলে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ২০১০ ও ২০১৪ সালে। ওই দুই বছরই এপ্রিলের গড় তাপমাত্রা ছিল ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাকি বছরগুলোর কোনোটিতেই এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেনি। কিন্তু চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশের গড় তাপমাত্রা হিসাব করা হয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
নজিরবিহীন এই দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে জলাভূমি। ফল-ফসলে দেখা দিচ্ছে ক্ষতিকর উপসর্গ, যা নিয়ে শঙ্কিত কৃষক।
জানা গেছে, গরমের তীব্রতায় খুব দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের মাঠ। ফসল রক্ষায় ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে কৃষককে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ফসলের উত্পাদন খরচ।
গত সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড যশোরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে দেশের ছয়টি জেলায়। ২৮টি জেলায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এ হিসাবে গত ৩০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি কমে গেছে বৃষ্টিপাতও। দেশে ৭৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস শঙ্কা আরো বাড়িয়ে তুলছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও মংলা অঞ্চলগুলোয় তীব্র তাপপ্রবাহ চলবে। এছাড়া চাঁদপুর, মাইজদীকোর্ট, শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরো দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
প্রকৃতির এমন আচরণের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তাসলিমা ইমাম বলেন, এ সময় সাধারণত বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা বাতাস দেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বজ্র বৃষ্টি সৃষ্টি করে। কিন্তু এবার তা দেখা যচ্ছে না। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা পশ্চিমা বায়ু এ সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করে দখিনা বাতাসকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আবার উত্তর গোলার্ধের ওপর খাড়াভাবে সূর্য কিরণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিশাল এলাকাজুড়ে এল নিনোর প্রভাবে এ সময় স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার আন্ডার ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কৃষির এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। কয়েক বছরের ব্যবধানে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে, তেমনি সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফল, শস্য ক্ষেতে দাবদাহের প্রভাব দেখা দিয়েছে। ফলের মুকুল ঝরে যাচ্ছে, শস্যের উত্পাদনশীলতা কমে যাচ্ছে; যার প্রভাব সামনের দিনে ফল ও শস্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে এখনই নজর দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খরা ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত এলেও এখনো পর্যন্ত হিট বা তাপমাত্রাসহিষ্ণু জাত আসেনি। আবার উদ্ভাবনের পর তা সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নীতিগতভাবে পানির সুষ্ঠু ব্যবহারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে তাপদাহের ফলে হাসপাতালগুলোতেও শিশুরোগী ভর্তির হার বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button