জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইন্টারপোলের পরামর্শ

নানা আগ্রাসনে ধ্বংস হচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন

Sundorbanবিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবন ও বনের জীববৈচিত্র্য দস্যু-দুষ্কৃতকারী ও পাচারকারীদের আগ্রাসনে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। সুন্দরবনে অগ্নিসংযোগ, বন্যপ্রাণী নিধন ও দস্যুতার বিষয়ে বিশ্ব সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাচারকারীদের ধরতে এবার বন মন্ত্রণালয়কে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। দেশের অভ্যন্তরে সুন্দরবনের সম্পদ ধ্বংস ও অপরাধীদের একটি তালিকাও দিয়েছে তারা। তালিকা হাতে পাওয়ার পর অপরাধীদের ধরতে নড়ে চড়ে বসেছে বনবিভাগ। ইতিমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের। সুনির্দিষ্ট তালিকা পাওয়ায় শিগগিরই দস্যু ও পাচারকারী নিধনে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে।
বনবিভাগের সূত্রমতে, গত ৭ এপ্রিল খুলনায় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ইন্টারপোলের দেয়া সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের নামের তালিকা প্রকাশ না করলেও, অপরাধীদের নির্মূলে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়। সভায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের সুন্দরবন উপকূলীয় বাসিন্দাদের বননির্ভরতা কমানোর উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সর্বশেষ বাঘ শুমারিতে সুন্দরবনে মাত্র ১০৬টি বাঘ আছে এমন চিত্র উঠে আসার পর থেকেই বাঘ ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। শুধু বাঘ নয়, কমেছে হরিণ, কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণী ও মূল্যবান উদ্ভিদের সংখ্যাও। চোরাশিকারীদের দৌরাত্ম্যই এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায়। আন্তর্জাতিক মহল এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে চোরাকারবারীদের একটি তালিকা দিয়েছে বন মন্ত্রণালয়কে। সাথে কিছু দিক নির্দেশনাও রয়েছে। বনদস্যু, কাঠ পাচারকারী, বাঘ, হরিণ, কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণীর চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারকারীদের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। আর তাই হাতে পাওয়া তালিকাকে গুরুত্বের সাথে দেখছে খোদ বনবিভাগ। বন বিভাগের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে ১০টি বাঘের চামড়া আর হরিণের ৪৭টি চামড়া উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় আটক হয়েছে ১০৭ জন আর মামলা হয়েছে ১১০টি।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মোঃ জহির উদ্দিন আহমদ বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় বলে ওই সভায় ইন্টারপোল থেকে পাওয়া আংশিক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। টাস্কফোর্স, র‌্যাব-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বনবিভাগ যৌথবাহিনীর কাজ চলছে। এমনকি নৌবাহিনীরও সহায়তা থাকতে পারে। খুব শিগগিরই প্রকাশ্যে যৌথ অভিযান শুরু হবে।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পূর্ণ তালিকা তাদের কাছে রয়েছে এবং এই তালিকা ধরে অচিরেই অভিযান শুরু হবে। সুন্দরবনে বাঘ ও সম্পদ রক্ষায় নিয়মিতই অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব। উদ্ধারও হয়েছে বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রাণীর মূল্যবান চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ধরা পড়ছে চোরাকারবারীরা। দুর্বৃত্তদের হালনাগাদ একটি তালিকাও করেছে তারা।
র‌্যাব মনে করছে, ইন্টারপোলের তালিকা অপরাধী দমনে আরো সুবিধা হবে। ইন্টারপোলের দেয়া তালিকায় বনবিভাগ ও পুলিশের কতিপয় অসাধু কমকর্তা-কর্মচারীর নামের পাশাপাশি মৎস্য ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী, বনদস্যু, প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিকদের নাম থাকায় সতর্কতার সাথে সকল দপ্তরের সমন্বয়ে অভিযান পরিকল্পনা করার কথা জানান, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তারা।
ইন্টারপোলের প্রতিবেদন পেশের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী খুলনা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে শিকার হওয়া বাঘের চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শেষ গন্তব্য মিয়ানমার-থাইল্যান্ড-লাওস সীমান্তেও চোরাচালান সাম্রাজ্য গোল্ডেন ট্রায়াংগেলের বিদেশী গডফাদারদের নামও রয়েছে। রয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের কিছু অপরাধীর নামও।
জানা গেছে, সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার অপরাধীদের সংখ্যা পূর্ব বিভাগের চেয়ে বেশি। তবে ইন্টারপোলের তালিকায় অপরাধীর ‘সঠিক সংখ্যাটি’ জানাতে আগ্রহী নয় বনবিভাগ। বন বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বন বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইন্টারপোলের তালিকা হাতে পাবার পর নড়েচড়ে বসেছে বনবিভাগের ঊর্ধ্বতনরা। গত ৭ এপ্রিল সকালে খুলনায় সার্কেলের বনবিভাগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সংরক্ষক অসিত রঞ্জন পালসহ খুলনা সার্কেলের সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা, উপকূলবর্তী পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, বিজিবি কমান্ডারবৃন্দ।
যৌথ বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে র‌্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ চলছে, প্রকাশ্যে আসলে তো সবাই দেখতে পাবেন। আর ইন্টারপোল যে সম্পূর্ণ নতুন কোন তথ্য দিয়েছে তা নয়, আমাদেরও একটা হালনাগাদ তালিকা রয়েছে। সব মিলিয়েই কাজ চলছে।
সুন্দরবনে আগুন ঠেকাতে ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’: সুন্দরবনে আগুন ঠেকাতে পাঁচটি ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’ গঠন করেছে বন বিভাগ। এই ফায়ার ওয়াচার টিমগুলো নাশকতা রোধে সুন্দরবন এলাকায় সার্বক্ষণিক টহলসহ নজরদারি করবে। এদিকে সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ছয় আসামীকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে শরণখোলা থানা পুলিশ। মাত্র চার দিনের মধ্যে একই স্থানে দ্বিতীয় বার আগুনের ঘটনাকে পরিকল্পিত নাশকতা দাবি করেছে বন কর্মকর্তারা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ এপ্রিল সকালে একই এলাকার বনে চোরাই পথে মাছ চাষ করার জন্য যারা পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়েছিল তাদের ছয়জনকে শনাক্ত করে মামলা করা হয়েছে। রোববার আদালতের বিচারক আসামীদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছয় আসামী বা তাদের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে আবারো সুন্দরবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৫ জনকে আসামী করে আরো একটি মামলা দায়ের করে বনবিভাগ। প্রথমিক তদন্তে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। কথিত ইজারার নামে সুন্দরবনের বিলে অবৈধ মাছ চাষে বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ্ আলম মিয়া জানান, সুন্দরবনের বিলে মাছ চাষ করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের আটকে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। সুন্দরবন বিভাগের দায়েরকৃত মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ছয় আসামী উপজেলার রাজাপুর গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারী, আলআমীন হাওলাদার, ইউনুস হাওলাদার, সাহেব হাওলাদার, খলিল হাওলাদার ও ছগির হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের আওতাধীন বেশ কয়েক একর বনভূমি তুলনামূলকভাবে নিচু। শুষ্ক মওসুমে ওই বনভূমিতে পানির দেখা না মিললেও বর্ষার সময় পানি জমে থাকে সেখানে। সে সময় ওই এলাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। মাছ ধরার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে বনের পাশের লোকালয়ের ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এ ছাড়া ভূমি দখলের সুদূরপ্রসারী কৌশলের অংশ হিসেবে এ ধরনের নাশকতা করা হচ্ছে। বন ও বনের আশপাশের একাধিক সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, প্রভাবশালীরা বনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হাত করে বর্ষা মওসুমে সুন্দরবনের এই এলাকায় মাছধরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অন্তত ৫০০ জেলে সেখানে মাছ ধরে, যারা বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নেয় না। বরং প্রভাবশালীরা নির্ধারিত অঙ্কের টাকা নিয়ে জেলেদের সেখানে মাছ ধরার সুবিধা করে দেয়।
ধানসাগর ও রাজাপুর এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেখানে কারেন্ট জাল পেতে শিং, মাগুর, কইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে। প্রতি মওসুমে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও সরকার কোনো রাজস্ব পায় না। অসাধু বন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে এলাকার প্রভাবশালীরা সুন্দরবনের খালবিলে কথিত ইজারার মাধ্যমে মাছ চাষ করা, বন এলাকায় অবাধ যাতায়াত করা এবং জমি দখলের সুদূরপ্রসারী কৌশল নিয়ে বারবার আগুন লাগানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ বছরে সরকারি-বেসরকারি হিসাবে ২৩টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত সোমবার এই স্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের পাশের আব্দুল্লার ছিলা এলাকায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বুধবার পচাকোড়ালিয়া এলাকায় আগুন দেওয়া হয়। দুটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এর আগে আর কোনো ঘটনায় মামলার নজির নেই। এসব ঘটনার কারণে বন বিভাগ ধানসাগর স্টেশনের ওই এলাকা থেকে বনের সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে।
নাংলী ক্যাম্প এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকাটি ভোলা নদী দিয়ে বন থেকে বিচ্ছিন্ন। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বনসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা হরহামেশা সুন্দরবনে আসা-যাওয়া করছে। এমনকি তারা গবাদি পশুও চড়াচ্ছে সুন্দরবনে। ভোলা নদী পার হয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার বনের ভেতর ঢুকতে দেখা গেল বিভিন্ন সময়ে আগুনে পোড়ার ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সুন্দরবন। কয়েক একর বনভূমি আগুনে পুড়ে সুন্দরবনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। পুড়ে যাওয়া ওই বনভূমিতে নতুন করে ম্যানগ্রোভ জন্ম নিচ্ছে না।
সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন সহব্যবস্থাপনা কমিটির শরণখোলা রেঞ্জের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিলন জানান, সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের আওতাধীন বনে দশটি নিচু (বিল) এলাকা রয়েছে। ওই বিলগুলোতে বর্ষা  মওসুমে প্রচুর পরিমাণ কই, শিং ও মাগুর মাছ পাওয়া যায়। জেলেদের কাছে ওই বিল অনেক লোভনীয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলনের দেওয়া তথ্য মতে, উত্তর রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লগের সহ-সভাপতি শাহজান শিকারিসহ আট থেকে দশজনের একটি প্রভাবশালী চক্র বনের ওই বিল এলাকায় বর্ষা মওসুমে মাছধরা নিয়ন্ত্রণ করে। বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হাত করে তারা জেলেদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে সেখানে মাছ ধরার সুবিধা করে দেয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আরো জানান, ভোলা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ওই নদীর চর এখন দখল হয়ে গেছে। কতিপয় প্রভাবশালী ওই চর দখলে রেখেছে। তিনি ওই চর উদ্ধার করে পরিকল্পিত বনায়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। পাশাপাশি বনের ওপর থেকে চাপ কমাতে বনসংলগ্ন বাসিন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানান তিনি।
উত্তর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক জাকির হোসেন খান বলেন, সুন্দরবনে আগে কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি জানে না। তবে সর্বশেষ সোমবার আব্দুলার ছিলা এলাকার আগুন দেখে তিনি নিশ্চিত, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেখানে আগুন দেয়া হয়েছে। বর্ষা মওসুমে কয়েকশ’ জেলে অবৈধভাবে রাতে সুন্দরবনের নিচু এলাকায় জাল পেতে মাছ ধরে থাকে। অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ করা গেলে সুন্দরবনকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনসংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের এক জেলে জানান, যারা বনের ওই এলাকায় মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মধ্যে রায়েন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উত্তর রাজাপুর গ্রামের মো. শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজান শিকারি একজন। বন বিভাগ গত ১৩ এপ্রিল আগুনের ঘটনায় যে ছয়জনকে আসামী করে মামলা দিয়েছে এর মধ্যে শাহজান শিকারি অন্যতম।
পর পর তিনবার সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া মোরেলগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের অফিসার স্বপন কুমার ভক্ত জানান, পানির উৎস কাছাকাছি না থাকায় সুন্দরবনের ওই অংশে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভোলা নদীতে যন্ত্র বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি টেনে নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। বনের কাছে পানি থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নেভানো সহজ হতো।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনে যারা আগুন দিয়েছে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে। একের পর এক আগুনের ঘটনায় ধানসাগর স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি এক আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই স্টেশনের আওতাধীন এলাকা থেকে সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করেন বলে ডিএফও জানান। ডিএফও মো. সাহিদুল ইসলাম আরো জানান, বনের ওই এলাকায় বিনা অনুমতিতে সব ধরনের মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বনসংলগ্ন মানুষ যাতে বনে ঢুকতে না পারে সে জন্য তিনজন করে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে ওই কমিটির সদস্যরা পর্যায়ক্রমে সুন্দরবনের ওই অংশে দিন-রাত পাহারা দেবেন। বন কর্মকর্তাদের টহলও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বনসংলগ্ন বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া বন বিভাগের কোনো স্টাফ যদি কোনো জেলেকে অবৈধভাবে মাছ ধরার সুবিধা দিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ওই স্টাফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button