ইসলামে আর্থিক সুবিধা পুত্রের চেয়ে কন্যার বেশি

শাহ্ আব্দুল হান্নান: আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করা হয় যে, কন্যার উত্তরাধিকার পুত্রের সমান নয় কেন? প্রকৃতপক্ষে পুত্র ও কন্যার সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুবিধা বিচার করলে দেখা যাবে, ইসলামে যে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে, তা পুত্রের চেয়ে কন্যার জন্য বেশি সুবিধাজনক। আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত।
প্রকৃতপক্ষে ইসলামে পুত্রের চেয়ে কন্যার আর্থিক অধিকার ও সুবিধা বেশি। নিম্নের বিশ্লেষণই তা প্রমাণ করবে।
আমার নিজের কথাই বলি। আমরা অনেক ভাই-বোন ছিলাম। আমার মরহুম আব্বার সমগ্র সম্পত্তির মূল্য আজকের বাজারদরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা হবে। আমরা প্রত্যেক ভাই ১৫ লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বোন সাড়ে সাত লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিল। অর্থাৎ, আমার সুবিধা বোনের তুলনায় সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি ছিল। অন্য দিকে, ইসলামি বিধানমোতাবেক (কুরআনে সূরা বাকারা, সূরা নিসা ও সূরা তালাক) আমাকে আমার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার ভরণপোষণ ব্যয় বহন করতে হয়েছে। আজকের মূল্যে তা অন্তত ৩০ হাজার টাকা মাসিক খরচ হবে। আমার স্ত্রী ৩০ বছর বিবাহিত জীবনের পর মারা গেছেন। এ সময়ে আমাকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে ৩০ বছর ধরে ব্যয় করতে হয়েছিল, যার পরিমাণ (৩০০০০×১২×৩০)= এক কোটি আট লাখ টাকা। এরপরও পিতা হিসেবে আমার কন্যার জন্য আমাকে অনেক খরচ করতে হয়েছে।
অন্য দিকে, আমার বোনের কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয়নি তার স্বামী, পুত্র বা কন্যার ভরণপোষণের জন্য। কেননা, কুরআন ও সুন্নাহমোতাবেক তারা এর জন্য দায়িত্বশীল নয়। অর্থাৎ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে আমাকে এক কোটি আট লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেখানে এ পরিমাণ অর্থ আমার বোনকে ব্যয় করতে হয়নি। এ ক্ষেত্রে বোনের সুবিধা এক কোটি আট লাখ টাকা। যদি আমার সাড়ে সাত লাখ টাকা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অধিক সুবিধা বাদ দেয়া হয়, তাহলে বোনের নিট সুবিধা হয় (১০৮০০০০০-৭৫০০০০=১০০৫০০০০) এক কোটি পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ হিসাবের মধ্যে তার মোহরানা ধরিনি। অসংখ্য ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখেছি, সার্বিক আর্থিক সুবিধা ইসলামি বিধানে পুত্রের চেয়ে কন্যার বেশি।
পিতামাতার উত্তরাধিকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমান। ভাইবোনেরা, যে ক্ষেত্রে তারা উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমান পান। এসব ক্ষেত্রেও সব শ্রেণীর পুরুষের আর্থিক দায়িত্ব নারীর চেয়ে একইভাবে বেশি।
হিসাব করে দেখেছি, আমেরিকার জনগণ যদি ইসলামি আইন অনুসরণ করে, তাহলে নারীরাই অধিক সুবিধা পাবে। সেখানে উত্তরাধিকার খুব সামান্যই পাওয়া যায়। কেননা, বেশির ভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ডে চলে; তাদের সঞ্চয় নেই বা থাকলেও তা খুবই সামান্য ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে। সে দেশে মাসিক খরচ যদি মাত্র দুই হাজার ডলারও ধরি, তাহলে ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে ইসলামি আইন মোতাবেক নারীর সুবিধার পরিমাণ হবে (২০০০×১২×৩০)=৭২০০০০ ডলার; অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় ৭২০০০০×৭০=৫০৪০০০০০/- বা পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা।
এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আশা করি এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, পুরুষ ও নারীর আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম মূলত নারীদেরকেই অধিক সুবিধা দিয়েছে। তাই ইসলামের উত্তরাধিকার আইন বদলের যেকোনো প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। তদুপরি ৯০ শতাংশ মুসলিম অধিবাসীর বাংলাদেশে এ ধরনের সরাসরি কুরআনবিরোধী বিধান প্রবর্তন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button