সালাতে সুফল লাভের উপায়

Ramadanমোঃ লুৎফর রহমান এমএ, বিএড: সালাতকে আমরা নামাজ হিসেবেই জানি। এর অর্থ নত হওয়া, অবনত করা, বিস্তৃত করা। শরীয়তের পরিভাষায় রাসূল (সা.) নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে, বসে, উপুড় হয়ে- বিভিন্নভাবে কুরআন পড়া ও দোয়া করাকে সালাত বলা হয়।
নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায়: আল্লাহপাক বলেন, ‘নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর সময়ের ভিত্তিতে ফরয করা হয়েছে’, নিসা ১০৩।
সালাত দিনে পাঁচবার ফরজ: আল্লাহপাক বলেন, ‘জমিন ও আসমানের সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। অতএব তোমরা আল্লাহর তাসবীহ কর (সালাত পড়) সন্ধ্যায় (মাগরিব ও এশা) ও প্রত্যুষে (ফজর) এবং বৈকালে (আসর) ও দ্বিপ্রহরে (জোহর)’, রোম ১৭-১৮। তিনি আরো বলেন, ‘সালাত কায়েম কর দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে। অবশ্যই পুণ্য কাজ পাপকে দূর করে দেয়। যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের জন্য এটি উত্তম উপদেশ’, হুদ ১১৪।
সালাত হেদায়াতের পথ দেখায়: আল্লাহপাক বলেন, ‘কুরআন সেই মুত্তাকীদের মুক্তির পথ দেখাবে, যারা জীবনে সালাত কায়েম করে’, বাকারা ২-৩। তিনি আরো বলেন, ‘এটা হেদায়াত ও সুসংবাদ ঐ মুমিনদের জন্য; যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাতের ওপর দৃঢ় ইয়াকীন রাখে’, নামল ২-৩। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আশা করা যায় তোমাদের ওপর রহম করা হবে’, নূর ৫৬।
সন্তানদের সালাতের নির্দেশ দান: হযরত আমর বিন শুয়ায়িব (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সালাতের নির্দেশ দাও যখন তারা সাত বছরে উপনীত হয়। আর দশ বছর হলে সালাতের জন্য প্রয়োজনে প্রহার কর এবং বিছানা পৃথক কর’। (আবু দাউদ ১ম খণ্ড, সা: অ: পৃ ২৭২)
মুসলিম ২য় খণ্ড সালাত পৃ ৩৮ : হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা হতে অন্য জুমা, এক রমযান হতে অন্য রমযান- কাফফারা হয় সে সব গুনাহের জন্য যা এ সবের মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে থাকে, যদি কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকা হয়।
সালাত না পড়ার পরিণতি চেহারা মলিন হবে : আল্লাহপাক বলেন, ‘কিয়ামাতের দিন তার চেহারা উদাস ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে- যে কুরআনকে মেনে নেয়নি এবং সালাত আদায় করেনি’, কিয়ামাহ ৩১।
আখেরাতে সালাতের হিসাবই প্রথমে হবে: হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, কিয়ামাতে বান্দার আমলের মধ্যে সালাতের হিসাবই সর্বপ্রথম নেয়া হবে। যদি তা সঠিক হয় তাহলে সে সফল হবে, নাজাত পাবে। আর তা যদি খারাপ হয় তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে- তিরমিজি।
ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী: হযরত জাবির (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘আনুগত্য ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত’, মুসলিম। উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস হতে আমরা বুঝতে পারি যে, মানব জীবনে সালাতের গুরত্ব অপরিসীম। কুরআন মাজীদে অন্তত বিরাশি জায়গায় সালাতের নির্র্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে পড়ার কথা না বলে সর্বত্রই সালাত কায়েম করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য সালাত কায়েমের তাৎপর্যটি বুঝে নেয়া আমাদের জন্য একান্ত জরুরি।
কুরআন ও হাদিস ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহপাক ও তাঁর রাসূল (সা.) সালাত প্রসঙ্গে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, তার পূর্ণ বাস্তবায়নকেই বলা হয় ’সালাত কায়েম’। নির্দেশনাগুলো বিবেচনায় নিলে আমরা বুঝতে পারব যে, অন্তত নিম্নের ছয়টি কাজ করলে সালাতের উদ্দেশ্য সফল হয় তথা সালাত কায়েম হয়।
১. জামায়াতের সাথে সালাত আদায়।
২. সহি-শুদ্ধভাবে সালাত আদায়।
৩. ধীরে ধীরে সালাত আদায়।
৪. বিনীত বিনম্রভাবে সালাত আদায়।
৫. বুঝে বুঝে সালাত আদায়।
৬. সালাতের আলোকে জীবন গড়া।
আলোচনা :
১. জামায়াতের সাথে সালাত আদায়: আল্লাহপাক বলেন, ‘সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর’, বাকারা ৪৩। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘একার সালাতের তুলনায় জামায়াতে সালাত ২৭ গুণ মর্যাদা বেশি’, বুখারী ও মুসলিম।
হযরত উসমান (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এশার সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধ রাত্র ইবাদত করল। অতপর সে যদি ফজরের সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করে, সে যেন পূর্ণ রাত্র সালাত আদায় করল- মুসলিম : ২য় খণ্ড পৃ ৩৪৪। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা.) কোনো এক সালাতে একজনকে অনুপস্থিত পান। তখন তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা হয় কাউকে সালাত পড়াতে বলে আমি তাদের খোঁজে যাই যারা সালাতে আসেনি। তারপর আমি তাদের গৃহ জ্বালিয়ে দিতে বলি’, মুসলিম ২খ পৃ ৩৪০।
আসলে সালাত জামায়াতের সাথে ফরয হয়েছে, একা একা নয়। যাতে সমাজে চিন্তার ঐক্য সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক যোগাযোগ, ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। অবশ্য মহিলাদের জন্য জামায়াতের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।
২. সহি-শুদ্ধভাবে সালাত আদায়: হযরত আনাস (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা কাতারগুলো সোজা করে নেবে। কেননা তা শুদ্ধভাবে সালাত কায়েমের অঙ্গ’, বুখারী। তারই আর এক বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা কাতারগুলো ঠিক করে নাও, পরস্পরের নিকটবর্তী হও এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলাও’, আবু দাউদ।
হযরত আবু কাতাদাহ (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর ঐ ব্যক্তি যে সালাতে চুরি করে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো সালাতে কীভাবে চুরি করা হয়? তিনি বললেন, সালাতের রুকু-সেজদা পূর্ণভাবে আদায় না করা’, আহমাদ। সুন্দর সালাত ক্ষমার কারণ। হযরত উবায়দা বিন সামেত (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি সময় অনুযায়ী উত্তমরূপে অজু করে, রুকু সেজদা পূর্ণ করে, মনোনিবেশ সহকারে সালাত আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। যে তা করবে না, তার প্রতি আল্লাহর কোনো দায়িত্ব নাই। ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন আবার নাও পারেন। আবু দাউদ ১ম খণ্ড। সালাত অধ্যায়- পৃ ২৩৬। পূর্ণ পবিত্রতা, সঠিক নিয়ম শৃঙ্খলা ও শুদ্ধ উচ্চারণ এর চেষ্টা ছাড়া সালাতের কল্যাণ পাওয়া যায় না।
৩. ধীরে ধীরে সালাত আদায়: আল্লাহপাক বলেন, ‘জীবনে সুখে দুঃখে বিচলিত হয় না তারা- যারা সালাতের মধ্যে ধীর, স্থির ও স্থায়ী। যারা সালাতের শিক্ষাকে সংরক্ষণ করে’, মাআরিজ ২৩-৩৪। হাদিস হতে জানা যায়, হযরত আবু বকর খুঁটির মতো নিশ্চল হয়ে সালাতে দাঁড়াতেন। আসলে আয়াত ও দোয়াগুলোর উচ্চারণ এবং রুকু-সেজদা- সব কিছুই ধীরে ধীরে ও প্রশান্তির সাথে করাই রাসূল (সা.) এর শিক্ষা। এ অভ্যাস না করলে সালাতের কল্যাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
৪. বিনীত বিনম্রভাবে সালাত আদায়: আল্লাহপাক বলেন, ‘মুমিন তারাই- আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর ভীত বিহব্বল হয়। কুরআনের দ্বারাও তারাই সতর্ক হয়’, আনফাল ২। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি শুধু তাদেরই সতর্ক করতে পারেন যারা না দেখে তাদের রবকে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে’, ফাতির ১৮। তিনি আরো বলেন, ‘মুমিন তারাই আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর ভীত বিহব্বল হয়, কুরআনের আয়াত শুনলে ঈমান বৃদ্ধি হয়, আল্লাহরই ওপর ভরসা করে, জীবনে সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ অনুমোদিত পন্থায় আয় ও ব্যয় করে’, আনফাল ২।
তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের সত্যিকার বন্ধু একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং ঐ সব মুমিন, যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে ও আল্লাহর সামনে নত হয়- মায়িদা ৫৫। তিনি আরো বলেন, ‘সফলতা লাভ করবে সেসকল মুমিন; যারা সালাতের মধে ভীত বিহব্বল হয়’, মু’মিনুন ১।
হযরত আবু আইউব আনসারী (রা) এর বর্ণনায় এক সাহাবীর উপদেশ প্রার্থনার জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে যে দুনিয়া হতে বিদায় নিচ্ছে’, মেশকাত। মুমিনের অন্তরকে গর্ব, অহঙ্কার ও উদাসীনতা থেকে মুক্ত করে কৃতজ্ঞ ও বিনীত করার উত্তম মাধ্যমই হচ্ছে সালাত।
৫. বুঝে বুঝে সালাত আদায়: আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। বান্দা আমার কাছে যা চায় তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। ….আমার বান্দার জন্য তাই যা সে চাইল’।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে গোপনে কথা বলে এবং তার ও কেবলার মাঝেই তার রব বিরাজ করে’, বুখারী। এ হাদিস দুটি থেকে বুঝা যায়, সালাত হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথন। ইমাম অথবা নিজের উচ্চারণে তার বাণী শোনা, তার কাছে প্রার্থনা করা, অনুতপ্ত হওয়া, ক্ষমা চাওয়া, অঙ্গীকার করা ইত্যাদি। রাসূল (সা.) সালাত শুরুর মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যে দোয়া পড়তেন।
‘আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁরই দিকে নিবিষ্ট হলাম যিনি এ বিশ্ব ও মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। যারা র্শিক করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত ও কুরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু তারই জন্য- যিনি এ মহাবিশ্বের মালিক। তাঁর কোনো অংশিদার নাই। এ কথা মেনে নেয়ার নির্দেশই আমাকে দেয়া হয়েছে। আর সবার আগে আমিই তা মেনে নিলাম’, আনয়াম ৭৯।
কখনও তিনি এ দোয়া করতেন, ‘হে আমার প্রভু! পূর্ব ও পশ্চিমের দিগন্ত যেমন দূর, তেমনই ভুল থেকে দূরত্বে আমার অবস্থান দাও। পানি, বরফ ও বৃষ্টি দ্বারা আমার ভুলগুলো ধুয়ে দাও। হে প্রভু! এগুলো দ্বারা ময়লা কাপড় যেমন শুভ্র সাদা হয়ে যায়, ঠিক গোনাহ থেকে আমাকে তেমনই পবিত্র করে দাও’।
বিতিরে দোয়া কুনুত। হে প্রভু! তোমারই কাছে সাহায্য চাই, ক্ষমা চাই। তোমার প্রতিই বিশ্বাস, তোমার প্রতিই ভরসা। সর্বোত্তম গুণাবলী তোমার উপরই আরোপ করি। তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে জীবনযাপন করি, কখনই অকৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন করি না। তোমার অবাধ্যদের সঙ্গ ত্যাগ করি, তাদের পরিহার করে চলি। হে আল্লাহ! তোমারই দাসত্ব করি, এ সালাত ও সাজদা তোমারই জন্য। তোমার পথেই সকল চেষ্টা, তোমার পথেই আমাদের এগিয়ে চলা। তোমার রাহমাতের প্রত্যাশী আর শাস্তির ভয়ে ভীত। নিশ্চয়ই সে শাস্তি তোমার হুকুম অস্বীকারকারীদের জন্যই নির্দিষ্ট।
রাসূল (সা.) রুকুতে যেয়ে পড়তেন, ‘হে আমার প্রভু! তোমারই জন্য রুকু দিলাম, তোমাতেই ঈমান আনলাম, আত্মসমর্পণ করলাম। তোমার ওপরই ভরসা করলাম। তুমিই আমার রব। আমার চোখ, কান, হাড়, মগজ শিরা-উপশিরা তোমারই প্রতি একনিষ্ঠভাবে বিনীত বিনম্র’।
রুকু হতে উঠার সময় পড়তেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার কথা শুনেছেন যে তার প্রশংসা করল। রুকু হতে উঠে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে পড়তেন ‘হে আমার প্রভু! একমাত্র আপনারই জন্য সেই সকল প্রশংসা যা অতীব পবিত্র ও বরকতময়।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করো, যেভাবে আদায় করতে আমাকে দেখ’, বুখারী ও মুসনাদে আহমাদ। এ সকল হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসুল (সা.) বুঝে বুঝে সালাত আদায় করতেন। আমাদরও বুঝে বুঝে সালাত আদায়ের শিক্ষা দিয়েছেন।
আসলে কিছুক্ষণের জন্য দুনিয়ার সকল সম্পর্ক স্থগিত রেখে মুসল্লী আসে সালাতে। উদ্দেশ্য : মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর কথা শোনা ও তা মেনে চলার অঙ্গীকার করা এবং তার কাছে সাহায্য চাওয়া। আর এভাবেই আত্মাকে শক্তিশালী করা যায়। এজন্য সালাত বুঝে পড়া অতীব জরুরি।
৬. সালাতের আলোকে জীবন গড়া: আল্লাহপাক বলেন, ‘তুমি কী দেখেছ মুসলমানদের মধ্যে কে ইসলাম ও আখেরাতকে মিথ্যা প্রমাণিত করছে! যে ইয়াতিমকে অবহেলা করে, আর দুস্থকে খাদ্য দিতে উদ্বুদ্ধ করে না। আর সেই নামাজিদের জন্য ধ্বংস (ওয়ায়েল দোযখ), যারা নিজ সালাতের বিষয়ে উদাসীন, যাদের কাজ লোক দেখানো। যারা মানুষকে স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় জিনিস দানেও বিরত থাকে’, সূরা মাউন।
এ সূরা হতে বুঝা যায়, শুধু সালাত পড়লেই হবে না, তার শিক্ষা মেনে চলতে হবে। সমাজের ইয়াতিম ও দুস্থদের সাহায্য করতে হবে। মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোনো হুকুমকর্তা নাই। অতএব তুমি একমাত্র আমারই দাসত্ব করো এবং স্মরণ রাখার জন্য সালাত কায়েম করো’, ত্বহা ১৪।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি তোমার কাছে যে কিতাব পাঠিয়েছি তা অধ্যয়ন কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই সালাত তোমাকে অন্যায় অশ্লীলতা ও দুষ্কর্ম থেকে রক্ষা করবে’, আনকাবুত ৪৫। তিনি আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতকে জীবনে আঁকড়ে ধর-বাকারা ১৫৩। তিনি আরো বলেন, ‘সফলতা লাভ করবে তারা যারা সালাতের শিক্ষাকে (জীবনে) সংরক্ষণ করে’, মুমিন ৯।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করবে, সালাত তার জন্য আলো ও দলিল হবে এবং কিয়ামাতের দিন নাযাতের সম্বল হবে। আর যে তা করবে না তার জন্য আলো, দলিল বা নাজাতের সম্বল হবে না। ঐ ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন কারুন, ফিরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সঙ্গী হবে’, আহমাদ, দারেমি, বায়হাকী।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতের সালাতের শেষে দোয়া করতেন, ‘হে আমার প্রভু, আমকে আলো (নূর) দাও অন্তরে, জবানে, দৃষ্টিতে ও শ্রবণে। আলো দাও ডাইনে, বামে, উপরে, নীচে, সামনে ও পেছনে। হে প্রভু, আমাকে আলো দাও। সে আলোকে প্রশস্ত ও বিস্তৃত করে দাও’, বুখারী ও মুসলিম। সাজদায় পড়ে অনেক দোয়ার মতো এটিও পড়তেন, হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি রহম করো, তোমার আনুগত্যে আমাকে বাধ্য রাখ। আমাকে সুপথ দাও, আমার মর্যদাকে বৃদ্ধি করে দাও। আমাকে সুস্থ রাখ, জীবিকা দান কর।
লুকমানের উপদেশ: বাবা, সালাত কায়েম কর। মানুষকে কল্যাণের নির্দেশ দাও, অকল্যাণ থেকে ফিরিয়ে রাখ- লুকমান ১৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি প্রবাহমান নদী থাকে এবং প্রতিদিন পাঁচবার তাতে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে কি? সাহাবাগণ বললেন না। রাসূল (সা.) বলেন, এটাই হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর সাহায্যেই আল্লাহ তার যবতীয় গুনাহ দূর করে দেন’, বুখারী, মুসলিম।
এসব আয়াত ও হাদিস অধ্যয়নে যে উপলব্ধিটুকু পাওয়া যায় তা হচ্ছে, কুরআন এসেছে মানুষকে সত্য পথ দেখানোর জন্য, আর সালাত এসেছে সে পথে চলার শক্তি জোগানোর জন্য। তাই সালাত শুধু পড়লেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সালাত থেকে শিক্ষা নিয়ে ও শক্তি সঞ্চয় করে একটি মহৎ জীবন গড়াই সালাতের মূল উদ্দেশ্য। যাতে সমাজটি হয়ে উঠে সুখ, শান্তি ও উন্নতির আবাস। আর এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলেই ‘সালাত’ হবে আমাদের জন্য জান্নাতের চাবি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখক : প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button