আশুরার ফজিলত

Islamড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মাদানী: আয়েশা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজান মাসের রোজা ফরজ করার আগে মুসলমানেরা আশুরার দিন রোজা রাখত। আর এ দিন কাবাঘরের গিলাফ পরানো হতো। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন রাসূল রা: এ ঘোষণা দিলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে এ দিনের রোজা রাখার সে রোজা রাখবে। আর যে রোজা পরিহার করতে চায় সে তা পরিহার করবে (বুখারি-১৫১৫, ১৭৯৪)
এ দিনের মর্যাদা উপলব্ধি করে ইহুদি সমাজও এ দিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করত এবং বিশেষভাবে এ দিনের রোজাব্রত পালন করত। রাসূল সা: থেকে প্রসিদ্ধ সাহাবি ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সা: যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তিনি ইহুদিদের দেখতে পেলেন তারা আশুরার দিবসে সিয়াম পালন করছে, তাদের জিজ্ঞেস করা হলো; এ দিনের রোজা সম্পর্কে তারা বলল- এ দিন আল্লাহ তায়ালা মুসা আ: ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের ওপর বিজয় দান করেছেন, তাই আমরা এ দিনের সম্মান ও মহত্ত্বের জন্য রোজা পালন করি। তাদের প্রতিউত্তরে রাসূল সা: এরশাদ করলেন- আমরা তোমাদের চেয়ে মুসার উত্তম অনুসারী, অতঃপর তিনি এ দিনের রোজা রাখতে সাহাবিদের নির্দেশ দেন (বুখারি-৩৭২৭)।
আশুরার দিনে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত হচ্ছে, রাসূল সা:কে এ দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনের রোজা পালন গত এক বছরের গুনাহগুলোর কাফফারাস্বরূপ’ (সহি মুসলিম-১১৬২)।
ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে এসেছে, আশুরার দিবসের রোজা প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই রাসূল সা: এ দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন ফজিলতের উদ্দেশ্যে রোজা পালন করতেন। আর এ মাস অর্থাৎ রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে তিনি রোজা পালন করতেন।’
সহি মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘আশুরার দিবসের রোজা পালনে আমি গত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে আশা পোষণ করি’ (সহি মুসলিম-২৮০৩)।
সহি বুখারি ও মুসলিমে সালামাহ ইবনে আকওয়া রা: হতে বর্ণিত, নবী সা: বনি আসলাম গোত্রের এক লোককে নির্দেশ দিলেন সে যেন লোকদের মাঝে এ ঘোষণা করে দেয়, যে আজ সকালে খেয়েছে সে যেন দিবসের বাকি অংশ রোজা পালন করে, আর যে ব্যক্তি কিছু খায়নি সে যেন রোজা রাখে। কেননা আজকের এ দিন আশুরার দিন।
অপর বর্ণনায় রুবাই বিনতে মু’আওয়ামের সূত্রে এসেছে, রাসূল সা: আশুরার দিন সকালে মদিনার আশপাশে আনসারদের গ্রামগুলোতে লোক পাঠিয়ে এ ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি আজ রোজা রেখেছে সে রোজা সম্পন্ন করবে, আর যে ব্যক্তি রোজা রাখেনি সে দিবসের বাকি সময় রোজা পালন করবে। অতঃপর আমরা এ দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের ছোট সন্তানদেরও রোজা রাখতে বাধ্য করতাম।
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পর রাসূল সা: আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ তুলে নেন এবং এ ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করেন। বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: আশুরার রোজা রেখেছেন এবং রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তবে যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তিনি এ নির্দেশ পরিহার করেন। তাই আবদুল্লাহ ইবনে উমর তার নির্ধারিত নফল রোজার দিন না হলে আশুরার এ দিনের রোজা রাখতেন না।
এসব হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, নবী সা: রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার সিয়াম পালননের নির্দেশ শিথিল করে নেন। এরপর এ দিনের রোজা বাধ্যতামূলক ছিল না। এ দিনের রোজা পালন মুস্তাহাব বা সুন্নাতের পর্যায়ে রয়ে যায়। তার পরও উমর ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আউফ আবু মূসা, কায়স ইবনে সাদ, ইবনে আব্বাস প্রমুখ থেকে এ দিনের রোজা রাখা প্রমাণিত হয়।
নবী সা: তাঁর জীবনের শেষ দিকে এ দিনের সাথে অন্য এক দিনসহ রোজা রাখার সঙ্কল্প করেন। যেহেতু ইহুদি সম্প্রদায় শুধু এ দিনের রোজা পালন করে থাকে, তাই তিনি তাদের বিরোধিতা করণার্থে এ দিনের সাথে আরো এক দিন রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। সহি মুসলিমে ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সা: আশুরার দিবসে রোজা রাখলেন এবং এ দিনের রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন, সাহাবিরা তাকে জানালেন : হে আল্লাহর রাসূল সা:, এ দিনটিকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা মর্যাদা দিয়ে থাকে। তখন রাসূল সা: বললেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ আগামী বছর এলে আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখব। বর্ণনাকারী বলেন, আগামী বছর আসার আগেই রাসূল সা:-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস রা: থেকে তিনি বলেন, রাসূল রা: এরশাদ করেছেন, যদি আমি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি অবশ্যই আশুরার সাথে নবম দিনও রোজা রাখব।
মুসনাদ ইমাম আহমাদে এসেছে, ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত আছে, নবী সা: এরশাদ করেছেন, আশুরার দিবসে তোমরা রোজা রাখো, আর এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতাকারী আশুরার আগে এক দিন এবং পরে এক দিন রোজা রাখো।
ইবনুল কাইয়্যেম রহ: জাদুল মা’আদ-এ উল্লেখ করেন, ‘আশুরার দিবসের রোজার তিনটি গ্রেড রয়েছে। সর্বোচ্চ গ্রেড হচ্ছে এর আগে ও পরে মোট তিনটি রোজা রাখা; তারপর হচ্ছে ৯ ও ১০-এ দুই দিনের রোজা রাখা। বেশির ভাগ হাদিস এভাবে এসেছে। এরপর হচ্ছে কেবল ১০ তারিখের রোজা রাখা। এ বক্তব্য থেকে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, কেবল ১০ তারিখের রোজা রাখা মাকরুহ নয়।
লেখক : প্রবন্ধকার

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button