ইউরো যুগের অবসান ঘটাতে পারে গ্রিসের অর্থনৈতিক ধস

EU zone১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি চালু হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) রাষ্ট্রগুলোর অভিন্ন মুদ্রা ইউরো। ১৬ বছর নির্বিঘ্নে পার করে দেয়ার পর ২০১৫ সালে এসে যেন শক্তিশালী এই মুদ্রার কানে বাজতে শুরু করেছে ভাঙনের সুর। এর অন্যতম কারণ গ্রিস। অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া দেশটি ঋণখেলাপের দায় মাথায় নিয়ে ইউরোজোন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে। তাকে ধরে রাখার ইইউ রাষ্ট্রগুলোর শত চেষ্টা ব্যর্থতার অন্ধকারে এখন প্রায় নিভু নিভু। চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসেন গ্রিসের বামপন্থি রাজনৈতিক দল সিরিজা পার্টির নেতা অ্যালেক্সি সিপরাস। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না হতেই তার সরকার মুখোমুখি হয় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক সংকটের। এই মুহূর্তে দেশটি পার করছে তার ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় অধ্যায়। সর্বশেষ খবর, আজ মঙ্গলবারের (৩০ জুন) মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলকে (আইএমএফ) ঋণের ১৬০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে গ্রিসকে। এছাড়া ১০ জুলাইয়ের মধ্যে ২ বিলিয়ন ইউরো (১৭ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা প্রায়), ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ইউরো (৩০ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা প্রায়) মূল্যমানের বন্ড ও ২০ আগস্টের মধ্যে ৩.২ বিলিয়ন ইউরো (২৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি) মূল্যমানের বন্ড পরিশোধ করতে হবে। আর এসব ঋণ পরিশোধ তখনই সম্ভব হবে যখন অ্যালেক্সি সিপ্রাসের সরকার আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সঙ্গে অন্তত ৮১০ কোটি ডলারের (৬৩ হাজার ৪৪ কোটি টাকা প্রায়) নতুন বেলআউট চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। ধসে পড়া অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগকেই মূলত বেলআউট হিসেবে অভিহিত করা হয়। অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে গ্রিসের ব্যাংকগুলোও। গত দুই সপ্তাহে দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে একশ’ কোটিরও বেশি ইউরো (৯ হাজার কোটি টাকা প্রায়) তুলে নেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে গত শনিবার গণভোটের ঘোষণা আসার পরই তুলে নেয়া হয় অর্ধ সহস্রাধিক কোটি ইউরো (৫ হাজার কোটি টাকা প্রায়)।
অর্থনীতিকদের ধারণা, ঋণখেলাপের দায়ে ইউরোজোন থেকে গ্রিসের বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশটির জনগণ। এ আশঙ্কায় তারা তাদের অর্থ ফেরত নিচ্ছেন যতো দ্রুত সম্ভব। গত শনিবার এ পরিস্থিতি এতোটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে, দেশের সাড়ে পাঁচ হাজার এটিএম বুথের মধ্যে দুই হাজারটিতে মজুত থাকা অর্থ ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় নতুন বেলআউট চুক্তি করতে হলে সিপ্রাসকে মেনে নিতে হবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের বেশ কিছু শর্ত। এর মধ্যে নতুন পেনশন কাঠামো নির্ধারণ, সেলস ট্যাক্স বৃদ্ধি ও শ্রমবাজার সংস্কার অন্যতম। তাদের এ দাবি আবার মানতে নারাজ গ্রিক প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যেই তিনি গণভোটের আহ্বান করেছেন। আগামী ৫ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এই গণভোটে সমর্থন দিয়েছে দেশটির এমপিরাও। গত রোববার ৩০০ আসন বিশিষ্ট সংসদে ১৭৯ জন সদস্য গণভোটের পক্ষে রায় দেন। ফলে এ সিদ্ধান্তের পক্ষে সিপ্রাসের সিদ্ধান্ত আরো দৃঢ় হলো বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে অ্যালেক্সি সিপ্রাসের একটাই উদ্দেশ্য। যেভাবেই হোক, গ্রিক জনগণকে না-ভোটে উৎসাহিত করা। বিশ্লেষকদের ধারণা, এতে করে তিনি ঋণদাতাদের বলতে পারবেন, আমার পেছনে গ্রিসের জনগণ আছে, এবার আপনাদের নতুন কোনো শর্ত খোঁজা উচিত। এদিকে, আইএমএফকে অর্থ ফেরতের ব্যাপারে শেষ তারিখ ৩০ জুন থেকে আরো কয়েকদিন পেছানোর অনুরোধ করেছিলেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীরা। গ্রিক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভ্যারোউফাকিসও অর্থমন্ত্রীদের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক ত্যাগ করেন। কঠোর এ সিদ্ধান্তের ফলে ৩০ জুনের মধ্যেই দেশটিকে নতুন কোনো বেলআউট চুক্তিতে যেতে হবে। এদিকে নতুন খবর, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) গ্রিসকে জরুরি অর্থ ঋণ দেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। গত রোববার এ ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনাও সেরেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button