ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে গণভোটের সিদ্ধান্ত

EUইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্রিটেনের থাকা না থাকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত গণভোটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আগামী দুই বছরের মধ্যেই ২০১৭ সালে এই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠেয় ওই গণভোটে ব্রিটেনবাসীর কাছে প্রশ্ন থাকবে ‘ব্রিটেনের কি উচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকা?’ যারা এর পক্ষে অবস্থান নেবেন, তারা হ্যাঁ ভোট দেবেন।
এদিকে গণভোটের ঘোষণা দেয়ার পরদিনই ইউরোপে সফরে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তার এই সফর উপলক্ষে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বৃহস্পতিবার বলেছেন, ক্যামেরন ইউরোপীয় নেতাদের জানাবেন যে, তারা তার প্রস্তাবিত সংস্কারে রাজি না হলে ইইউ ছেড়ে যাওয়ার পক্ষেই ভোট দেবেন।
হ্যামন্ড আরো বলেন, ক্যামেরন আত্মবিশ্বাসী যে, তিনি তার প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো পাস করতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দুই দিনের ইউরোপ সফরের প্রাক্কালে বুধবার ইইউ প্রশ্নে গণভোট করার সিদ্ধান্তের কথাটি জানায় ব্রিটেন সরকার। এ উপলক্ষে সরকার একটি আইনও পার্লামেন্টে তুলতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবারই এই আইন হাউস অব কমন্সে তোলার কথা ছিল।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে কনজারভেটিভ দল তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখল। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রচারণার সময় ক্যামেরন ইইউতে সংস্কার ও ইইউ প্রশ্নে ব্রিটেনে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই ঘোষণার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বেশ চাপে পড়ে গেলেন।
এদিকে, গণভোটের ঘোষণা দিয়েই দুই দিনের ইউরোপ সফরে বেরিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রথম দফায় তিনি নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স সফরে যাচ্ছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার প্রস্তাবিত ইইউ সংস্কার প্রশ্নে ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থন আদায় করা।
ইইউতে আসলে কী ধরনের সংস্কার চান ক্যামেরন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে তিনি অভিবাসী প্রশ্নে আরো কঠোর অবস্থান চান ইইউর। তবে তিনি ইইউর ঘনিষ্ঠতা নীতি থেকে লন্ডন নগরীকে পৃথক রেখে এর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার পক্ষে। এছাড়া ইইউ প্রস্তাবিত স্থায়ী ঘনিষ্ঠতা নীতি থেকেও ব্রিটেনকে রেহাই দেয়া হোক এটা চান ক্যামেরন।
অবশ্য ক্যামেরনের এই দাবি রাখতে গেলে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাকালীন কিছু চুক্তির বাইরে যেতে হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যামন্ড বৃহস্পতিবার জানান, এ ব্যাপারে তারা ইইউর পক্ষ থেকে আইনি পরামর্শও পেয়েছেন। বেশিরভাগ ইউরোপীয় নেতাই এই চুক্তিগুলোর সংশোধন করার বিপক্ষে। হ্যামন্ড জানান, ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ক্যামেরন স্পষ্ট বার্তাই দেবেন যে, ব্রিটেনের জনগণের যেসব বিষয় নিয়ে দাবি রয়েছে, তা পূরণ না করতে পারলে তারা গণভোটে জিতে ইইউতে থাকতে পারবেন না। তার অর্থ, ২০১৭ সালের মধ্যে ইইউ ব্রিটেন প্রস্তাবিত সংস্কার না মেনে নিলে ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট থেকে বেরিয়ে যাবে তার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তিই।
ইইউর পক্ষের দল হ্যাঁ
ইইউ প্রশ্নে গণভোট হলে ‘হ্যাঁ’ প্রচারণা কারা পাচ্ছে, তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা চলেছে এতদিন। অবশেষে সরকারি ঘোষণায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষের লোকজনকেই হ্যাঁ প্রচারণার অধিকার দেয়া হয়েছে। আর যারা বিপক্ষে, তারা প্রচারণা চালাবে ‘না’ এর পক্ষে। আগে থেকেই ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষের লোকজন এমনটাই দাবি করে আসছিলেন।
এ ব্যাপারে বিবিসির রাজনৈতিকবিষয়ক প্রতিনিধি রস হকিন্স বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, তা হলো_ (রানীর ভাষণে) আমরা প্রশ্নের চূড়ান্ত ধরনটা পাচ্ছি না। এটা নিয়ে আরো আলোচনা হতে পারে। তবে আমি যেটুকু বুঝতে পারছি, তা হলো ব্রিটেনের ইইউতে থাকা উচিত কি-না, এমন প্রশ্ন করা হতে পারে।’
হকিন্সের মতে, বিষয়টা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর ফলে ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষের লোকজন ‘হ্যাঁ’ প্রচারণা চালাতে পারবেন। সরকার ইচ্ছা করলে প্রশ্নটা ঘুরিয়ে দিতেও পারত। সে ক্ষেত্রে ইইউর পক্ষের লোকজনকে ‘না’ প্রচারণা চালাতে হতো। এতে তাদের ওপর একটা নেতিবাচকতার ছায়া পড়তে পারত। এর আগে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের সময় ব্রিটেন ভাগ হয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ গণভোটে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে হ্যাঁ ভোট হওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল সরকারি দল। আর এবার তাই ইইউতে থেকে যাওয়ার প্রশ্নে হ্যাঁ ইতিবাচক ভোট হওয়ায় খুশি ইইউপন্থীরা। তবে এই গণভোট হবে মোটা দাগে সাধারণ নির্বাচনের আদলেই। ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউভুক্ত বেশিরভাগ দেশের নাগরিকই এতে ভোট দিতে পারবেন না। তবে দেশটিতে বসবাসরত কমনওয়েলথভুক্ত দেশ এবং ইইউভুক্ত দুই দেশ মাল্টা ও সাইপ্রাসের নাগরিকরাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button