নব্বই বছরে পা দিয়েছেন ব্রিটেনের রানী

Raniএক সময় বলা হতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আজ মঙ্গলবার নব্বই বছরে পা দিয়েছেন ব্রিটেনের রানী। ১৯৫৩ সালে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। ২০১৩ সালে পালিত হয় তার সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্তি উৎসব। রানী ভিক্টোরিয়া কিংবা কুইন এলিজাবেথের মা এত বয়সে জবুথবু হয়ে গেলেও এলিজাবেথ বেঁচে আছেন দাপটে। নব্বই বছর বয়সেও পার্কে পার্কে বেড়াচ্ছেন। এ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি অতিক্রম করবেন রানী ভিক্টোরিয়ার দীর্ঘ সময় ধরে রানী হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকার রেকর্ড। ভিক্টোরিয়া ৬৩ বছর ২১৬ দিন রাজত্ব করেছিলেন। আর বয়সে তিনি ভিক্টোরিয়ার প্রায় ১০ বছরের ‘বড়’ হয়ে গেছেন এরই মধ্যে। এ বয়সেও রানী জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ ৬ দশকের রাজত্বকালে নিজের সংকল্পে অবিচল ছিলেন। কখনও বিশ্বাস হারাননি নিজর ওপর। একচুল আপস করেননি।
এত বয়সেও কর্মশক্তি হারাননি রানী। এখনও তার চমৎকার স্মরণশক্তি, প্রচুর উদ্যম আর প্রাণশক্তি। চলাফেরায় এখনও সাবলীল। কোনো কিছুতে হতাশা কিংবা দুঃখ নেই তার। সব কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পাওয়ার মতো অফুরান ক্ষমতা রয়েছে এই ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞীর। সাম্প্রতিক মাসগুলোতেও তাকে দেখা গেছে উইন্ডসরে নানা আয়োজন অনুষ্ঠানে তার সাবলীল ব্যস্ততা, অতিথিদের জন্য আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই তার। সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল আফগানিস্তানে নিহত সেনাদের স্মৃতিতে তর্পণ, কেন্টে ব্রিটিশ যুদ্ধবিষয়ক জাদুঘরের উদ্বোধন- এসব নিয়ে কর্মকাণ্ডের শেষ নেই। মোট কথা ব্রিটেনের রানী হিসেবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বগুলো পালন করছেন সমান আগ্রহে ও যত্নে।
ব্রিটেনের মতো গণতান্ত্রিক দেশে রাজতন্ত্র চালু রয়েছে এখনও। এটা অনেকটা অবাক করার মতো। ব্রিটিশ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার নির্বাচন করলেও নিজেদের পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে পরম আদরে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই রাজতন্ত্রের বিপক্ষেও অনেক কথাবার্তা বলা হয়েছে। রাজতন্ত্রের প্রয়োজন নেই বলেও সোচ্চার হয়েছেন অনেকে। রাজা ও রাজপরিবারকে অহেতুক পয়সা খরচ করে পুষতে হচ্ছে। কিন্তু ব্রিটিশদের রাজা বা রানী আইনত আলঙ্কারিক বিষয় হলেও তা উচ্ছেদ করার কোনো আগ্রহই নেই।
তবে এসব ব্যাপারে কখনও মাথা ঘামাননি রানী। নিজের কাজটা করে গেছেন নিয়ম মতো। যা করবেন ভেবেছেন, তাই করেছেন। কারও কোনো কথাতেই নিজের অবস্থান থেকে একবিন্দু নড়েননি।
১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রানী হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নিজের দীর্ঘ সময়ে অনেক প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন তিনি। প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আছেন ডেভিড ক্যামেরন। ক্যামেরনের জন্মই হয়েছে ১৯৬৬ সালে। হিদারডাউনে ক্যামেরনকে তিনি একটা স্কুলে খরগোশের সঙ্গে খেলা করতেও দেখেছেন।
শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আগ্রহের অভাব নেই রানীর। কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে যে কাজগুলো তিনি করে থাকেন, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের আগে তার উদ্বেগের শেষ ছিল না।
রানী এলিজাবেথ মূলত গ্রেট ব্রিটেন তথা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ঐক্যের প্রতীক হয়ে আছেন। রানীর জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন কমনওয়েলথ দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। গতকাল ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি রানীর সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button