ডেভিড ক্যামেরনের নির্বাচনী ইশতেহার

Cameronআগামী ৭ মে অনুষ্ঠেয় ৫৬তম পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের নির্বাচনী সস্নোগান ‘সবার জন্য সুন্দর জীবন, যার জন্য কাজ করে যেতে চাই।’ আর এই নির্বাচনে বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করতে সম্প্রতি ঘোষিত ইশতেহারে শিশু স্বাস্থ্য, কর, স্বাস্থ্য, ক্রেতা অধিকার, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে সামনে রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এই পরিকল্পনা ব্রিটিশরা গ্রহণ করবে কিনা, এর ওপরই নির্ভর করছে দেশটির ভবিষ্যৎ সরকারের রূপায়ন।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, আগামী কনজারভেটিভ সরকার কর্মজীবী মায়ের জন্য চাইল্ডকেয়ার কর্মসূচির সেবা দ্বিগুণ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল থেকে কর্মজীবী নারীরা পাঁচ হাজার পাউন্ডের সমপরিমাণ খরচের শিশুসেবা সুবিধা পাবেন বিনামূল্যে। এ ছাড়া তারা সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের জন্য আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত আড়াই হাজার পাউন্ডের সমপরিমাণ সেবা প্রদান করবে। মধ্যবিত্ত নাগরিকদের আকর্ষণে বিশেষ কর কর্তনের সুবিধাও ঘোষণা করেছেন ক্যামেরন। দেশটির লাখ লাখ লোক এর আওতায় আসবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করা হলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে সরকার। একটি পৃথক হিসাবে দেখা গেছে, এসব কর কর্তন বাস্তবায়িত হলে সরকার বছরে ৫৫০ কোটি পাউন্ড রাজস্ব হারাবে।
স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে ক্যামেরনের ইশতেহারে। এতে দেখা যাচ্ছে, ৭৫ বছরের বেশি বয়সের অবসর ভাতাপ্রাপ্তরা যেদিন চাইবেন, সেদিনই পারিবারিক ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে পারবেন। উল্লেখ্য, এর আগে বয়স্করা এমন সুবিধা পেতেন না। ডাক্তারের পরামর্শের জন্য তাদের সিরিয়াল নিয়ে অপেক্ষা করতে হতো। এ ছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায়’ (এনএইচএস) ব্যয় নূ্যনতম ৮০০ কোটি পাউন্ড বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কনজারভেটিভদের এই উচ্চ অঙ্গীকারের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন বিরোধী লেবার পার্টির প্রার্থী এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ড। ক্ষমতাসীনরা আরো দাবি করছে, মিলিব্যান্ড নির্বাচিত হলে তিনি রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবেন। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সচিব জেরেমি হান্ট সতর্ক করে বলেন, খুব শিগগির বুড়িয়ে যাওয়া জনসংখ্যার ‘টাইম বোমার’ শিকার হবে ব্রিটেন। তাই আগে থেকেই প্রশাসনকে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এদিকে ক্রেতার সামর্থ্য অনুযায়ী, পণ্য ক্রয়ে কর কর্তনেরও সুবিধা (রাইট টু বাই) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ক্যামেরন। এই সুবিধার আওতায় নির্দিষ্ট অঙ্কের কম আয়ের ব্যক্তিরা শুল্ক ছাড়াই পণ্য কিনতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যামেরনের এই প্রচেষ্টা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের নীতির অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। এতে করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছাড়াও কনজারভেটিভদের সমর্থন দরিদ্র শ্রেণির মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, ৮০’র দশকে থ্যাচারের এই উদ্যোগ কনজারভেটিভদের বিজয়ের অন্যতম বড় কারণ ছিল। টোরিরা (কনজারভেটিভ) গৃহায়নের ক্ষেত্রেও রাইট টু বাই সুবিধা প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রধান বিরোধী প্রার্থী মিলিব্যান্ডের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে ব্রিটেনে ঘণ্টায় নূ্যনতম মজুরি ৮ পাউন্ড করার একটা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ক্যামেরনের এসব অঙ্গীকার দৃশ্যত লেবার পার্টির ভোটব্যাংকে বড় ধরনের আঘাত হানতে যাচ্ছে। ক্যামেরন বলেন, ‘আমাদের দেশে কাজের মূল্য নিশ্চিত করা হবে। সেটা শুধু বর্তমানের জন্য নয়; বরং সব সময়ের জন্যই। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এটা শ্রমিকদের দল। এটা করবর্জিত শ্রমিকদের দল।’
সামরিক খাতে নিজেদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে জাতীয় আয়ের দুই শতাংশ ব্যয় করার কথাও ছিল কনজারভেটিভ প্রশাসনের। কিন্তু সেটা অর্জনে তারা ব্যর্থ হলে দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধানরা বারবার সরকারের কাছে ধরনা দিতে থাকে। তবে এবারের ইশতেহারে নূ্যনতম এক শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি এবং রিজার্ভ সেনা বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে দলটির পক্ষ থেকে। এ ছাড়া আড়াই হাজার কোটি পাউন্ড খরচে চারটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন প্রতিস্থাপনেরও কথা রয়েছে।
শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য নতুন ৫০০ ফ্রি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত ২ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারবে। গত তিন বছর ধরে ব্রিটিশ সরকার ফ্রি স্কুলের সুবিধা দিয়ে আসছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে নাগরিকদের রক্ষায়ও বিশেষ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন ক্যামেরন। তাই, সব মিলিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি। তবে এর আগে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এবারের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button