ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন রেকর্ড সংখ্যক বিএমই প্রার্থী

তবারুকুল ইসলাম: ব্রিটেনের নির্বাচনী প্রচারণায়? ইমিগ্রেশন ইস্যুটি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সবসময় হাতিয়ার হিশেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এবারের নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রধান চারটি ইস্যুর শীর্ষেই আছে ইমিগ্রেশন। তা সত্ত্বেও ব্রিটেনে ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। এবার ব্রিটেনের প্রধান সাতটি দল থেকে ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটির (কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী বা বিএমই) মোট ১৬৭ জন এমপি পদে নতুন প্রার্থী হয়েছেন, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। এর মধ্যে এমপি ছিলেন এবং পুনরায় নির্বাচন করছেন এমন বিএমই প্রার্থীরা অন্তর্ভূক্ত নন।
অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দলগুলো বিজয়ের জন্য সম্ভাবনাময় আসনে বিএমই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয় না। তারপরও আগামী নির্বাচনে বিএমই এমপি’র সংখ্যা বেড়ে ৪৪-এ উন্নীত হবে বলে আভাস দিয়েছে ‘ব্রিটিশ ফিউচার প্রজেক্ট’ নামে একটি গবেষণা সংস্থা।
নতুন মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রয়েছেন ১১ জন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম এমপি রুশনারা আলীসহ এ সংখ্যা ১২। রুশনারা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচন করছেন।
আগামী ৭ মে ব্রিটেনে ৫৬তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো ধরনের ডামাডোল ছাড়াই গত ৯ এপ্রিল  বিকাল ৪টায় মনোনয়ন পত্র জমাদান শেষ হয়। একই দিন বিকাল ৫টার মধ্যে প্রকাশিত হয়ে যায় প্রতিটি আসনের আলাদা আলাদা প্রার্থী তালিকা। হাইজ অব কমন্সের ৬৫০টি আসনে এবার মোট প্রার্থী হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৩ জন। বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন এসব প্রার্থীদের নিয়ে নানা বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীল ভাবধারার কনজারভেটিভ দল ইমিগ্রেশনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সবসময়ই স্বরব। অথচ ‘ডেমোক্রেটিক অডিট ইউকে’র এক প্রতিবেদন বলছে, এবার বিএমই বা ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি থেকে প্রার্থী মনোনয়নে কনজারভেটিভই সবচেয়ে এগিয়ে। দলটি এবার ৪৮ জন নতুন বিএমই প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এরপরই আছে গত জোট সরকারের অংশিদার লিবারেল ডেমোক্র্যাটস। কোনো বিএমই এমপি না থাকায় সমালোচিত দলটি এবার অভিবাসী সম্প্রদায় (ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি)  থেকে ৪১ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। অভিবাসন বিষয়ে খানিকটা উদার লেবার পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে ৩৬ জন। কট্টর অভিবাসন বিরোধীতার জন্য হালে আলোচনায় আসা ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টিও (ইউকিপ) এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এই প্রথমবারের মতো দলটি অভিবাসী সম্প্রদায় থেকে ২৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া গ্রিন পার্টি ১৫ জন এবং স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) ও প্লেইড কিমরু একজন করে বিএমই প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।
দলগুলোর বিএমই প্রার্থী মনোনয়নের অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানিয়ে সমালোচকরা বলছেন- এদের মধ্যে কতজন বিজয়ী হয়ে ফিরবেন সেদিকেই এখন তাদের দৃষ্টি। সংশ্লিষ্টদের এমন সন্দেহের অবশ্য যুক্তিক কারণ রয়েছে। ১৯৭৯ সালে দেশটিতে ৩০জন বিএমই প্রার্থীর মধ্যে বিজয়ী হন ৪জন। ২০১০ সালে এসে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে ১৩১ হলেও এমপির সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২৭ জন। এদের মধ্যে লেবার দলীয় ১৬ জন এবং কনজারভেটিভ দলীয় ১১ জন। সর্বশেষ জনগননা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ। সেই হিসাবে সংসদে অভিবাসী সম্প্রদায়ের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য অন্তত ৯১ জন এমপি থাকা উচিত বলে সমালোচকরা মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুশনারা আলী এই প্রতিবেদনকে বলেন, সংসদে বিএমই প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তবে সেটা খুবই ধীর এবং কাঙ্খিত হারে নয়। তাঁর দল লেবার পার্টি এবার অনেকগুলো সম্ভাবনাময় আসনে বিএমই এবং নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে জানিয়ে রুশনারা বলেন, অভিবাসী সম্প্রদায়ের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য তিনি দলের প্রতি সব সময় চাপ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক দলের উচিৎ সংসদে বিএমই জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button