বিদায় ২০১৪

Yearসাদেকুর রহমান: আহ্নিক গতি বার্ষিক গতির নিয়মে বছরের সূর্য ডুবি ডুবি। একই সূর্য বার বার পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে লালিমা ছড়িয়ে অস্ত যায়। মানব সভ্যতা একেই আবার বিভিন্ন বর্ষে চিহ্নিত করেছে নিজেদের প্রয়োজনে। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি এই তিনটি সালের হিসেব এখানে প্রচলিত। আমরা এখন ইংরেজি তথা ঈসায়ী সালের শেষ প্রান্তে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আশা-হতাশার খাতা নিয়ে হিসাব কষা চলছে। বিদায় ২০১৪। বছরটি একাধারে ঘটনাবহুল, বেদনাদায়ক, কৌতূহলোদ্দীপক ও হতাশাব্যঞ্জক। আর একদিন পরই এই পঞ্জিকাটি হবে পরিত্যক্ত। আজ বুধবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে গত এক বছর ধরে অপরিহার্য পঞ্জিকাটি স্বাভাবিক নিয়মেই অকার্যকর হয়ে পড়বে।
বছর ফুরালেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে বিদায়ী বছরের প্রভাব থেকে যাবে। এ বছরটি বাংলাদেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল। বছরের শুরুতেই একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীনরা জিতলেও, গণতন্ত্র পরাস্ত হয় বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেন। মানবাধিকার এখানে কেঁদে কেঁদে ফেরে। শিক্ষা ব্যবসথা নিয়েও সমালোচনার নতুন সূত্রপাত হয়েছে। সারা দেশ বিদ্যুৎহীন ছিল এ বছরেই। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি, বাড়েনি বিনিয়োগ। বাড়ছে বেকারত্ব। বিরোধী রাজনীতি এক রকম না থাকলেও সরকারি দলের রাজপথ ও বাগযুদ্ধে বেশ সরগরম ছিল বছরটি।
মানুষ খুন যেন মামুলি: মানুষ খুন যেন মামুলি এক ব্যাপার। এক সাথে ৬ জনকে হত্যা করলেও অপরাধীদের কিছু হচ্ছে না। খুনের শিকার হতভাগ্য ব্যক্তিদের মতো তাদের স্বজনরাও খুবই অসহায় একচোখা প্রশাসনের কাছে। প্রায় প্রতিদিনই খুনের ঘটনা ঘটছে। অথচ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাফাই বক্তব্য দিয়ে প্রকারান্তরে খুনিদেরই উৎসাহিত করছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মগবাজারের ত্রিপল মার্ডারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পরিকল্পিতভাবে দুটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কিছু নেই। প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথায় তাল মিলিয়ে পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, এমন হত্যাকান্ড বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তাই একে আইনশৃংখলার অবনতি বলা যাবে না। অথচ পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর মাস পর্যন্ত ৪ হাজার ১৮৫ জন খুন হয়েছেন।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘‘এত খুনের ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো তা কীভাবে বলা যায়? প্রতিবছর গড়ে তিন-চার হাজার মানুষ খুন হচ্ছেন। উল্টো স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইজিপি বলছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ নয়।’ তাদের কাছে প্রশ্ন করা উচিত আর কত মানুষ খুন হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হবে?’’
উচ্চ আদালতের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক কী অস্বাভাবিক তা পরিসংখ্যান দিয়ে পরিমাপ করা ঠিক হবে না। দেশে পর পর নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটছে। কোনো হত্যাকান্ডই স্বাভাবিক না। আমরা এ সব হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাই। যত দ্রুত সম্ভব হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।’
বিদায়ী বছরে দেশে কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বছরের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকান্ড হল নারায়ণগঞ্জে সাত খুন। এই হত্যাকান্ডের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে র‌্যাব-১০ জড়িত ছিল। এর মধ্যে র‌্যাব-১০ এর শীর্ষ তিন কর্মকর্তার নামও উঠে আসে। পরে তারা আদালতে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। র‌্যাব সদর দফতরের তদন্তেও বিষয়টি উঠে আসে। গত বছরের ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দী সাতটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির চন্দন সরকার ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও রয়েছেন। এই ঘটনার মূল হোতা বলে পরে প্রকাশ পায় নূর হোসেনের নাম। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। র‌্যাব এই ঘটনার পর বিষয়টি অস্বীকার করে এলেও গণমাধ্যমে বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে থাকলে র‌্যাব-১০ এর তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে প্রতিরক্ষা বিভাগ। এরা হলেন- তৎকালীন র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার এম এম রানা। এখন পর্যন্ত পুলিশ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেনি। বছরের আলোচিত হত্যাকা-গুলোর মধ্যে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা। গত ২০ মে একরামুলকে কুপিয়ে এবং পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুরো দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগের তীর উঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে। তবে এই ঘটনার পর নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে মাহাতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামী করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। বিহারী পল্লীতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগে ১০ জন নিহত হয়। আতশবাজি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিহারীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে বিহারী পল্লীতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে একই পরিবারের ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এই ঘটনার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ আছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার নির্দেশে পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা এই হামলা চালায়। তবে ইলিয়াস মোল্লা এবং পুলিশ এই ঘটনা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য এবং ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন পুলিশ মারমুখী অবস্থানে ছিল। এমনকি বিহারী পল্লী ভাঙচুরের সময় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। এ ছাড়াও রাজধানীতে আহলে সুন্নাতের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যা, কেরানীগঞ্জে চার খুন ও সুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে ১৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।
সারা দেশ বিদ্যুৎহীন: সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্প্রচারিক বিপ্লব ঘটানোর পরও গত ১ নবেম্বর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকেই দৈনিক সংগ্রামসহ গণমাধ্যম অফিসগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকার খবর আসতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দুপুরের পর থেকে একইভাবে ফোন আসতে থাকে সর্বশেষ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি জানতে। জরুরি সেবা বিঘ্নিত হয়। স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নজীরবিহীন এই বিদ্যুৎ দুর্যোগকালে মানুষ জীবনযাপন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছিল। ওই সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভারত থেকে ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে সেই লাইনটি ট্রিপ হয়ে যাওয়ার প্রভাবে এ বিপর্যয় হয়েছে বলেও জানালেও পরবর্তীতে বলা হয় ‘অভ্যন্তরীণ যান্ত্রিক ত্রুটির’ কারণে সেদিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। প্রকৃত কারণ আজো উদঘাটিত না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে।
আলোচনার কেন্দ্রে উচ্চ আদালত: বিগত বছরের ন্যায় ২০১৪ সালেও দেশের উচ্চ আদালত ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সুপ্রীমকোর্টের কোনো কোনো বিষয় দেশ বিদেশে সমানতালে আলোচনা হয়েছে। এ বছর দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলার আদেশ ও রায় হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজাদেশ। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা রিট আবেদন খারিজ করে গত ১৯ জুন রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে চলমান খালেদা জিয়ার মামলা বাতিলের আপিল খারিজ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ, সংবিধানের ১৬ তম সংশোধনী প্রশ্নে রুল জারি এবং চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা তদন্তে করতে হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে দেশব্যাপী বেশ আলোচনা উঠে আসে দেশের উচ্চ আদালত। আদালত অঙ্গনের যে বিষয়টির দিকে দেশের মানুষের নজর ছিল চোখে পড়ার মতো তা হলো একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান (৩ নবেম্বর) এবং আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর (১৭ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত রায় ঘোষণা। রায় ও আদেশ ছাড়াও নানা ঘটনার কারণে সুপ্রিমকোর্ট সরগরম ছিল। গত ৯ জুন এবিএম আলতাফ হোসেনকে বাদ দিয়ে পাঁচ বিচারপতিকে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া, বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদকে দিয়ে সংবিধানের ১৬ তম সংশোধনীকে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি, এক মাসের মধ্যে সকল প্রকার ইংরেজি বিজ্ঞাপন বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয়কে হাইকোর্টের নির্দেশ। বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানে রুল জারি, হাসপাতালগুলোকে ধূমপানমুক্ত করতে, প্রাইভেট গাড়িগুলোকে কালো গ্লাস মুক্ত করতে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সেশনচার্জ আদায়ে নীতিমালা করা, খাদ্য ভেজাল মুক্ত করতে ফরমালিন যন্ত্র পরীক্ষা করণ, খাদ্য দ্রব্যে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে এবং সর্ব শেষ ভারতীয় তিনটি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা কেন বন্ধ করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। যা দেশ এবং বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।
স্থবির অর্থনীতি, বাড়েনি বিনিয়োগ: বিদায়ী বছরটিতে বাংলাদেশে ‘কসমেটিক’ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি৷ যৌক্তিক কারণেই বিনিয়োগ বাড়েনি, বেড়েছে বেকারত্ব৷ জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার না কমলেও অর্থনৈতিক খাতে বড় কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ধস নেমেছে৷ বেড়েছে দুর্নীতি৷ বিদেশে জনশক্তি রফতানি গেল দু’ বছর অনেক কমে গেছে৷ তারপরও সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক আপাতদৃষ্টিতে ভালো থাকলেও, তার সুফল কিন্তু জনগণ পাচ্ছে না৷ শ্রমজীবী মানুষেরাই চালিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা৷ গণমাধ্যমের কাছে বিদায়ী বছরটির অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ৷
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২০১৪ সালটি রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণই ছিল৷ তাই সবার ধারণা ছিল এবার বিনিয়োগ বাড়বে৷ কিন্তু বছর শেষে যা দেখা যাচ্ছে যে, বিনিয়োগ সেভাবে বাড়েনি৷ ২০১৩ সালে বৃদ্ধির হার যা ছিল, ২০১৪ সালেও একই পরিস্থিতি৷ আসলে সরকারের তরফ থেকে অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক কোনো কার্যক্রম নেয়া হয়নি৷ ফলে যেটা হচ্ছে, রফতানি প্রবৃদ্ধি প্রথম ৫ মাসে দেখা গেল ১ শতাংশের মতো, যা আগের বছর ছিল ১২-১৩ শতাংশ৷ কিন্তু বছরশেষে রফতানি প্রবৃদ্ধি ১২/১৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কঠিন৷ কারণ তৈরি পোশাক খাতের অনেক ক্রেতা অন্য দেশে চলে গেছেন৷ আমাদের যেসব উদ্যোগ আছে তাতে তারা হয়ত আবার ফিরে আসবেন৷ ততদিনে কিন্তু আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমে যেতে পারে৷’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ লাখ শিক্ষিত মানুষ চাকরির বাজারে আসছে৷ এ সব শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা না করা গেলে শিক্ষিত বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই যাবে৷ আবার বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি অনেক কমে গেছে৷ এ বছর ৪ লাখের বেশি মানুষ বিদেশে পাঠানো যায়নি৷ আগের বছরও সংখ্যা একই ছিল৷ কিন্তু ২০১২ সালে বা তার আগে বিদেশে জনশক্তি গেছে ৬ থেকে ৮ লাখের মতো৷ ফলে দেশের চাকরির বাজারে এই মানুষগুলো ভিড় করছেন৷ ফলে চাকরির বাজার স্বাভাবিক রাখতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ড. মনসুর৷
দাতাদের প্রতিশ্রুতির খরা কাটছেই না: দাতাদের প্রতিশ্রুতির খরা কাটছেই না। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) দাতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৮৯ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অন্যদিক গত মাসে অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি ছিল ৬৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা গত অর্থবছরে অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ১৩২ কোটি ৬১ লাখ দশ হাজার ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতিশ্রুতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না আসলেও বেড়েছে অর্থছাড়ের পরিমাণ। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) দাতারা অর্থছাড় করেছে ৯০ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
গোপনাঙ্গে ইয়াবা বহন: নানা কারণে ‘ইয়াবা’ ঢুকছে বানের পানির মতো। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ী, পাচারকারী ও বহনকারীদের দেখে বোঝার উপায় নেই। শরীরে তল্লাশি করেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইয়াবা বহনের অভিনব কৌশল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কল্পনাকেও এখন হার মানাচ্ছে। গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে এক নারীর যৌনাঙ্গের ভেতর ৭শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধারের পরই নড়েচড়ে বসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিনব কৌশলেই লুকানো ছিল এসব ইয়াবা। মুক্তা বেগম (২৮) নামে ওই পাচারকারী বিশেষ পদ্ধতিতে কনডমের ভেতর লুকিয়ে আনেন ইয়াবা। দীর্ঘক্ষণ ট্রেনে থাকায় স্টেশনে নামার পর হাঁটায় একটু ব্যতিক্রম দেখলে সন্দেহ জাগে জিআরপির। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ। পরে নারী পুলিশ দিয়ে তল্লাশি। এ ঘটনার পর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ বলেন, কমলাপুর স্টেশনে যৌনাঙ্গের ভেতর কনডম দিয়ে মোড়ানো ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। এ ঘটনার পরই জিআরপি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে এক মাদক পাচারকারীর পায়ুপথ এবং আরেক মাদক পাচারকারীর অন্তর্বাসের ভেতর থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে জিআরপি।
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে তারা সংবেদনশীল অঙ্গকেই বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে ইয়াবা পাচারকারীরা নারীদের যৌনাঙ্গসহ সংবেদনশীল অঙ্গ, পুরুষরা পায়ুপথ ছাড়াও মাছ, চানাচুরের প্যাকেট, আসবাবপত্রের জয়েন্ট, মোটরসাইকেল, গাড়ির বিভিন্ন অংশ, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, সুপারি, ক্যামেরা, মোবাইল সেট, কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
যাদের হারিয়েছি: এ বছর আমরা হারিয়েছি বিচারপতি হারিবুর রহমান, শিক্ষাবিদ-রাজনীতি বিশ্লেষক ড. পিয়াস করিম, শিক্ষাবিদ ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী,শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীর মতো বৃক্ষসম ব্যক্তিত্বদের। গত ২৪ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একুশে পদকে ভূষিত প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমির ফেলো এখলাসউদ্দিন আহমদ ইন্তিকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে দেশ হারিয়েছে ২০১৪ সালে। বছরের শুরুতেই আমরা হারিয়েছি গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা মহম্মদ হান্নানকে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক এই সভাপতি ২১ জানুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাওয়ার পথে লঞ্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নন্দিত সঙ্গীতজ্ঞ বশির আহমেদ ১৯ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবর রোডের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯ সেপ্টেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মারা যান স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত নন্দিত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগম। ১৮ আগস্ট চিরবিদায় নেন গুণী চলচ্চিত্র পরিচালক বেলাল আহমেদ। ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক সহকারী সাধারণ সম্পাদক, সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিমকে। ৭ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খ্যাতিমান অভিনেতা খলিলুল্লাহ খান।
আওয়ামী মন্ত্রী-নেতাদের বেফাস মন্তব্য: সমালোচকরা বলে থাকে, বেফাস মন্তব্যের জন্য বরাবরই চ্যাম্পিয়ন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহাজোট সরকারের কিছু মন্ত্রী নানা সময়ই অশালীন ও অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিদায়ী বছরে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সংশোধনের পরিবর্তে আরো যেন বেপরোয়া হয়ে পড়ে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হজ্ব, হযরত মুহাম্মদ (সা.), জামায়াতে ইসলামী ও তাবলীগ জামাতকে নিয়ে কটূক্তি করে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তার ওই দিনের বক্তব্যে আক্রমণ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কেও। ফলে ওইদিন থেকে এখনো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। দেশে মামলা হয় বহু। লতিফ সিদ্দিকীকে মুরতাদ আখ্যা দেয় হেফাজতে ইসলাম। তার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট। আর ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (এ) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকে সরকার মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে। বর্তমানে লতিফ সিদ্দিকী কারাগারে রয়েছেন।
তবে শুধুমাত্র লতিফ সিদ্দিকীই নন। তার আগেও নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন মহাজোট সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। ধানমন্ডিতে এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ‘স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ বেয়াদব’ বলে আখ্যা দেন দলের ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতিকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সমালোচিত হন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এর কিছুদিন আগেই সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ‘খবিশ’সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। পরে তার ওই বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠলে ক্ষমা চেয়ে ওই যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। তবে আগেও এ মন্ত্রীর বেশ কিছু কর্মকান্ডে দলকে বিব্রত হতে হয়েছে একাধিকবার। যৌন কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আলেমদের শাস্তির কথা বলে এর আগেও রোষানলে পড়েন মহসীন আলী।
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, মানুষ বাপ-মার ঘরে জন্ম নিলে তার একটি জন্মদিন থাকে এবং মানুষ তা জানে। পক্ষান্তরে ডাস্টবিনে জন্ম নিলে তার জন্মদিন ৩/৪টা কেন আরো বেশিও থাকতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই।
তবে সবচেয়ে হাস্যরস বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গত ২০ জুলাই গাজায় হামলার ঘটনায় ইসরাইলী ইহুদিদের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা সদরের সরকারি পাবলিক মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। সে সময় জাতীয় সংসদের হুইপ বলেন, “ক্রেস্ট না, ক্যাশ চাই”। যদি কারো উপঢৌকন দেয়ার ইচ্ছা থাকে, দলীয় কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসবো। নিয়ে আসবেন। প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে তার বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য চিফ হুইপ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
বেফাস মন্তব্য থেকে বিরত নন সিনিয়র অনেক মন্ত্রীও। কথায় কথায় ‘স্টুপিড’, ‘বোগাস’ ‘ফটকাবাজ’ ও ‘রাবিশ’ উচ্চারণে অভ্যস্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও অনেক অনভিপ্রেত বক্তব্য রয়েছে। মন্ত্রী শেয়ারবাজারকে কখনো ‘দুষ্টু বাজার’, কখনো বিনিয়োগকারীদের ‘ফটকাবাজ’ মন্তব্য করেন। আর বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে শুধু সোনালী ব্যাংক থেকেই চার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলে অর্থমন্ত্রী বিষয়টিকে হালকা করে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। আর মাত্র চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তেমন কিছু নয়’।
পিতৃসংগঠনের মতো অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও কম যান না। বিএনপির বড় নেতাদের ‘নেড়ি কুত্তার’ মতো পেটানোর ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেসবুকে গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা ৪৮ মিনিটে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যম এ ঘোষণা দেন নাজমুল। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘তিন দিনের মধ্যে ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলার জবাব দিব। ডাক্তার বলছিল আরও কয়টাদিন থাকতে। আর থাকতে পারলাম না কুকুরদের ঘেউ ঘেউয়ের কারণে। নেড়ি কুত্তার মতো পিটামু বিএনপির বড় নেতাদের।’
উষ্ণতম বছর: ২০১৪ সালটি বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর ১০ মাসেই একুশ শতকের উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। নবেম্বর ও ডিসেম্বরে সাধারণ গড় তাপমাত্রা বজায় থাকলে তা এ পর্যন্ত রেকর্ড রাখা বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বছরের রেকর্ড গড়বে বলে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি গত ১ ডিসেম্বরেই খবর দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারেলিনার ন্যাশনাল ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার ইন আশেভিলের (এনওএএ) জলবায়ু পর্যবেক্ষণ বিভাগের প্রধান ডেক আর্নড নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলেন, চলতি বছর শেষ হলেই তা উষ্ণতম বছর হিসেবে রেকর্ড গড়বে।
সেলফির বছর: ২০১৪ সালকে ‘ইয়ার অব দ্য সেলফি’ বা ‘সেলফির বছর’ বলে আখ্যায়িত করেছে সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট টুইটার। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জায়গা বা পরিস্থিতিতে নিজের তোলা নিজের ছবিকে বলা হয় সেলফি এটা এখন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটে তুমুল জনপ্রিয় একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর এই ‘সেলফি’ পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় বা বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দে। শুধু টুইটারেই এই ‘সেলফি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৯ কোটি ২০ লাখবার, যা গত বছরের চেয়ে ১২ গুণ বেশি। বিবিসি ট্রেন্ডিং এক প্রতিবেদনে বলছে, বৈশ্বিক ‘ট্রেন্ড’ হিসেবেও সেলফি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সেলফির এখন নানা রকমভেদও তৈরি হয়ে গেছে। বিবিসি ট্রেন্ডিং বলছে, সবচেয়ে অভিনব কয়েকটির মধ্যে আছে ‘চুল-টানা-ভিডিও সেলফি’, ‘নো-মেকআপ’ অর্থাৎ মেকআপবিহীন অবস্থায় তোলা সেলফি, আর মিসরের বিক্ষোভকারীরা হোসনী মোবারকের সেলফির প্রতিক্রিয়ায় চালু করেছিলেন ‘সেলফির-জবাবে-সেলফি’!
প্রযুক্তির সেরা দশ: দ্রুত গড়াচ্ছে সময়, তার চেয়েও দ্রুত এগিয়ে চলেছে প্রযুক্তি। ২০১৪ সাল শেষান্তে। এখন বছরটির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব কষা চলছে। প্রযুক্তি কী দিয়েছে বছরটিকে, অথবা বছরটিইবা প্রযুক্তির কাছ থেকে কী নিতে পেরেছে। খ্যাতনামা প্রযুক্তিবিদদের বিশ্লেষণ পৃথকভাবে উপস্থাপন করছে বছরে প্রযুক্তির সেরা অবদানকে। প্রখ্যাত প্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে এ বছরের সেরা ১০ প্রযুক্তি পণ্যকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়াস এটি। এ বছর বেশ কিছু পণ্য এনেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পণ্য। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (সেপ্টেম্বর) আইফোন ৬ ছেড়ে প্রযুক্তিপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে উঠে আসে হ্যান্ডসেটটি। পছন্দের তালিকায় স্থান পায় স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি নোট ৪। হ্যান্ডসেট ছাড়াও প্রযুক্তিপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় ছিল ক্যামেরা, হেডফোন, ট্যাব, ব্লুটুথ ইত্যাদি। সেরা দশটি প্রযুক্তি পণ্য হলো স্মার্ট হেডফোন ‘ব্লুঅ্যান্ট পাম্প এইচডি’, ‘সনি এ ৬০০’ ক্যামেরা, অ্যাসার ক্রোমবুক ‘সি৭২০’, ব্লুটুথ স্পিকার ‘ডেনন এনভায়া ডিএসবি ২০০’, ‘এডোব ইঙ্ক এন্ড স্লাইড’, মাইক্রোসফট ট্যাব ‘সার্ফেস প্রো ৩’, অ্যাপল আইপ্যাড ‘এয়ার ২’, অ্যামাজন ‘কিন্ডেল ফায়ার’, স্যামসাং ‘গ্যালাক্সি নোট ৪’ এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট ‘ আইফোন ৬’। ২০১৪ সালে উল্লেখযোগ্য আরেকটি পণ্য হলো স্মার্টওয়াচ। ২০১৩ সালে বিশ্ববাসীর কাছে স্মার্টওয়াচের বার্তা পৌঁছালেও মূলত এর পূর্ণতা আসে এ বছরই। অ্যাপল তার আইফোন উন্মুক্তের সময় আইওয়াচ নামে একটি স্মার্টওয়াচও উন্মুক্ত করে। এছাড়া, ৩৬০ ডিগ্রি নামে একটি স্মার্টওয়াচ ছাড়ে মটোরোলা। চলতি বছরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামী ২০১৫ সাল প্রযুক্তিপ্রেমী বিশ্বকে কী উপহার দেয় এখন তা দেখার অপেক্ষায়!
এদিকে ২০১৪ সালের সেরা আবিষ্কার হচ্ছে মঙ্গলযান। টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বখ্যাত ২৫টি সেরা আবিষ্কারের মধ্যে নভোযান শীর্ষস্থানে রয়েছে। মঙ্গলযান সম্পর্কে টাইম জানায়, কেউই প্রথমবারের চেষ্টায় মঙ্গলে যেতে পারে নি। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেটা পারেনি সেটা ভারত পেরেছে। ভারতীয় নভোযানটি যখন লাল গ্রহের (মঙ্গল) কক্ষপথে পৌঁছায় তখন এশিয়ার অন্যান্য দেশ সাহসও দেখায়নি। উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মানুষবিহীন ভারতীয় নভোযান মঙ্গলযান মঙ্গলে পৌঁছায়। এর পেছনে খরচ হয় ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ফিরে দেখা বিশ্বচিত্র
এইতো সেদিন এয়ার এশিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান নিখোঁজ হলো। সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিনই শিরোনাম হচ্ছে এ ঘটনাটি। বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা থেকে শুরু করে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিনোদন জগতের অনেক প্রাপ্তি ও হারানোর বছর ছিলো ২০১৪। ্এর মধ্য থেকেই আলোড়িত ঘটনাসমূহের আলোকপাত করা হলো।
ইউক্রেন সমস্যা: বছরের শুরুর দিকেই ইউক্রেইনের রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। বছরব্যাপী ইউক্রেইন সমস্যা নিয়ে উত্তপ্ত ছিল বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গন। পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিপরীতে রাশিয়ার মধ্যে দেখা দেয় প্রবল বিরোধ। ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যাপক গণবিক্ষোভ ও শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর ইউক্রেনের পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে অপসারণের পক্ষে ভোট দেয়। অলেকসান্দার তুর্চিনোভ নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের রুশপন্থী অস্থিরতার সূচনা। ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করার রুশ তৎপরতা শুরু। এরই মধ্যে ইউক্রেইনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে রুশপন্থী বিদ্রোহ শুরু হয়। এর ধারাবহিকতায় ১৬ মার্চ ক্রিমিয়ায় গণভোট, রায় অনুযায়ী ইউক্রেনের এই এলাকাটির রুশ ফেডারেশনে যোগ দেয়। ২১ মার্চ রুশ প্রেসিডেন্ট মি. ভøাদিমির পুতিনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের অংশ ঘোষণা করা হয়। ২৪ মার্চ ক্রিমিয়াকে নিজের অংশ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াকে জি-৮ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
ভারতের নির্বাচন: ভারতের লোকসভা নির্বাচন ছিল এ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। ৭ এপ্রিল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু হয় দেশটিতে। ৯ পর্বে সমাপ্ত এ নির্বাচনে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনে প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেয় ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ভোটার। ইভিএম পদ্ধতিতে নয় লাখ ৩০ হাজার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। ৫০০টির বেশি রাজনৈতিক দলের প্রায় ১৫ হাজার প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ১২ মে শেষ পর্বের ভোট গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন শেষ হয়। ১৬ মে ২৮টি প্রদেশের সবগুলো আসনের ফল একযোগে প্রকাশ করা হয়। জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) অন্তর্গত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২৮২টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এনডিএ জোট ৩৩৯টি আসনে জয়ী হয়। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট মাত্র ৬০টি আসনে জয়ী হয়। আর অন্যান্য দলগুলো ১৫২ আসনে জয়ী হয়। ইতিহাস সৃষ্টি করে বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ‘চাদোকানী’ নরেন্দ্র মোদী ভারতের চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে সরকার গঠন করেন।
বোকো হারামের জঙ্গিপনা: বছরের প্রথমভাগে নাইজেরিয়ার ইসলামপন্থী কট্টর গোষ্ঠী বোকা হারাম দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে ২৭৬ জন হাইস্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে। দিনটি ছিল ১৪ এপ্রিল। এরপর বছরজুড়েই বিভিন্ন হামলা এবং এই অপহরণের ঘটনার বিভিন্ন সংবাদ পেতে থাকে বিশ্ববাসী। সংগঠনটির জঙ্গি তৎপরতার আরও একটি নজির স্থাপিত হয় ৫ মে। এইদিন নাইজেরিয়ার গাম্বোরন্ড নগলা এলাকায় বোকো হারাম জঙ্গিদের হামলায় একরাতে প্রায় ৩০০ জন নিহত হন। একই মাসের ২০ তারিখে নাইজেরিয়ার জোশ’এ সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত বোমা বিস্ফোরণে ১১৮ জন নিহত হন।
থাইল্যান্ডে আবার সামরিক শাসন: সাম্প্রতিক সময়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ডে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও তা দীর্ঘমেয়াদ পায়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। কিন্তু তাও টেকেনি। অবশেষে ২২ মে নিওয়াতথামরং বোনসংপাইসানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উৎখাত করে রাজকীয় সেনাবাহিনীর থাইল্যান্ডের ক্ষমতা দখল করে।
ইসলামিক স্টেটের উত্থান: বছরের মাঝামাঝি সময়ে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এন্ড লেভান্ত। পরবর্তী সময়ে এটি ইসলামিক স্টেট সংক্ষেপে ‘আইএস’ নাম ধারণ করে। গত ৫ জুন আইএস ইরাকের উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী বাগদাদ অভিমুখী অভিযান শুরু করে। তাদের উদ্দেশ বাগদাদ দখল করে ইরাকের শিয়া প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি’র শাসনে অবসান ঘটানো। পরবর্তী সময়ে সংগঠনটি ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করে ইসলামী খিলাফত বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। গত ৮ আগস্ট এই গোষ্ঠীটির অগ্রযাত্রা রুখতে ইরাকে গোষ্ঠীটির বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা শুরু করে। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর সিরিয়ায় এই গোষ্ঠীটির অবস্থান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সহযোগী আরব রাষ্ট্রগুলো বিমান হামলা শুরু করে।
ইসরাইলী দখলদারিত্ব: বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবারও আলোচনার শীর্ষে চলে আসে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ড দখলের ঘটনা। জুনে তিন ইসরাইলী কিশোরকে অপহরণ ও হত্যা এবং জুলাইয়ে এক ফিলিস্তিনী কিশোরের হত্যার জের ধরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গত ৮ জুলাই থেকে ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত ইসরাইলী সেনাবাহিনী ফিলিস্তিন নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ড দখল করে রাখে। ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও এক সপ্তাহ পর স্থল হামলার মধ্যদিয়ে গাজায় ইসরাইলী ত্রিমাত্রিক সামরিক অভিযান চালায়। ইসলাইল-হামাসের মধ্যে সাত সপ্তাহের লড়াইয়ে শিশুসহ ২১শ’ ফিলিস্তিনী (যাদের অধিকাংশই বেসামরিক) ও ৭১ ইসরাইলী (৬৭ জন সেনা সদস্য) নিহত হন। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ দেশে দেশে ইসরাইলী পণ্য বর্জনের ডাক দেয় মানবতাবাদী বিভিন্ন সংগঠন।
মালয়েশীয় বিমান ভূপাতিত: ইউক্রেন সমস্যার মধ্যে সংকট আরো ঘণীভূত হয়ে ওঠে ১৭ জুলাই। এদিন ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭ (বোয়িং ৭৭৭) বিধ্বস্ত হলে ১৫ ক্রু সদস্যসহ বিমানটির ২৯৮ আরোহীর সবাই মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয়: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের দু’কক্ষেই জয় পায় বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টি। ৪ নবেম্বর দেশটির মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশে, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের সবগুলোতে এবং ৫০টি রাজ্য গবর্নরের মধ্যে ৩৬টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরও ওবামার জনপ্রিয়তা ৪০ শতাংশে নেমে যাওয়ায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয় আগাম দেখছিলেন অনেক বিশ্লেষক। এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্রেট পার্টির কাছ থেকে রিপাবলিকানদের কাছে চলে আসে। প্রতিনিধি পরিষদসহ সিনেটেও রিপাবলিকানদের জয়ের ফলে ওবামার মেয়াদের শেষ দুই বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের সব সিদ্ধান্তে বাধ সাধার ক্ষমতা পেয়ে যায় বিরোধীরা। এতে কংগ্রেসে প্রস্তাব পাস করানোর ক্ষেত্রে ওবামাকে নিজ দলের দুর্বল অবস্থানের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
ইরাকের সংঘাত ও সহিংসতা: বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার নিহত ও ২২ হাজার আহত হয়েছেন। নবেম্বরে ইরাক জুড়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও সহিংসতার বলি হয়েছেন ১ হাজার ২৩২ জন মানুষ। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ২ হাজার ৪৩৪ জন। দেশটির আল আনবার প্রদেশে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এতে যথাক্রমে আছে বাগদাদ, সালাদিন প্রদেশ এবং দিয়ালা। আগে থেকেই ইরাকের ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত ছিলেন, নতুন করে ইসলামিক স্টেট’র (আইএস) অগ্রাসন ও উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাতে বিদায়ী বছরে নতুন করে আরো ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে এক লাখ ৯০ হাজার মানুষ নিরাপত্তার অভাবে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছেন।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ: প্রায় চার বছরের কাছাকাছি সময়েও থামেনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ২০১৪ সালে নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা বিদ্রোহীদের উগ্র রূপ এ বছর প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী ইরাকে আইএস’র বিরুদ্ধে চালানো মার্কিন বিমান হামলা সিরিয়াতেও সম্প্রসারণ করা হয়। সিরিয়ায় আইএস বিরোধী বিমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরব, জর্দানসহ চারটি আরব দেশ যোগ দেয়। সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তের কুর্দি শহর কোবানিতে আইএস’র অভিযান নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। কোবানির কুর্দিরা মরণপণ সংগ্রামে আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধ করে রাখে। পরে বিশ্ব জনমতের চাপে ইরাকের কুর্দি পেশমেরগা বাহিনীকে তুরস্ক তার ভূখ- ব্যবহার করে কোবানিতে প্রবেশ করতে দিলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আইএস আবরোধ মুক্ত হয় কোবানি। আইএস ছাড়াও সিরিয়ার অপর উগ্রপন্থী নুসরা ফ্রন্টও এ বছর বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার জন্ম দেয়। এর মধ্যে গোলান হাইটস থেকে জাতিসংঘ বাহিনীর সেনাদের অপহরণ ছিল অন্যতম।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের জয়: ১০ অগাস্ট ইতিহাসের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়িপ এরদোগান। ২৮ অগাস্ট তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এরদোগান নির্বাচনে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। জুলাইয়ের অনুষ্ঠিত ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জোকো উয়িদোদো ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন। জোকোউয়ি নামে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সী এই জনপ্রিয় নেতা ২০ অক্টোবর দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলন: চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন অবাধ করার দাবি কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দিলে গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের পট প্রস্তুত হয়। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং’কে ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকে “এক দেশ, দুই পদ্ধতি” ফর্মুলায় চীনের অধীনে প্রায় স্বায়ত্ব¡শাসন ভোগ করে আসছে হংকং। কিন্তু আগস্টে বেইজিং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে অঞ্চলটির পরবর্তী নেতা নির্বাচনের দাবি খারিজ করে দেয়। শুধু বেইজিংয়ের প্রতি অনুগত প্রার্থীদের মধ্যেই নির্বাচন সীমাবদ্ধ রাখতে চায় চীন। এতে গণতন্ত্রপন্থী ছাত্রদের গোষ্ঠী ‘স্কলারিজম’ ও বেনি টাইয়ের নেতৃত্বাধীন নাগরিক আন্দোলন ‘অকুপাই সেন্ট্রাল’ বেইজিংয়ের পরিকল্পনার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর কেন্দ্রস্থলে সরকারি সদর দফতরগুলোর সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর অবস্থান নেন। গণতন্ত্রপন্থী ছাত্ররা হংকংয়ের কেন্দ্রীয় এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সরকারি দফতরগুলো তছনছ করে। পিপার স্প্রে ঠেকাতে ছাতির নান্দনিক ব্যবহারে আন্দোলনটি “আমব্রেলা মুভমেন্ট” নামেও গণমাধ্যমে পরিচিত পায়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে আন্দোলকারীদের অবরোধ ভেঙে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে শুরু করে পুলিশ। নবেম্বরের শেষ দিকে মংকং এলাকা থেকে গণতন্ত্রপন্থীদের সরিয়ে দিয়ে তাদের শিবির পরিষ্কার করে ফেলে পুলিশ। পরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ নগরী থেকে গণতন্ত্রপন্থীদের সব অবস্থান তুলে দিয়ে শহরের নাগরিক জীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক করে ফেলে পুলিশ। এক সময় আন্দোলন প্রবল রূপ নিলেও কখনও নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেয়নি বেইজিং।
কিশোরী মালালার নোবেল জয়: শিশু ও তরুণদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তালেবান হামলায় বেঁচে যাওয়া পাকিস্তানী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই এবং ভারতের শিশু অধিকারকর্মী কৈলাস সত্যার্থী। ১৭ বছর বয়সী মালালা ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী, যিনি মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদ করে তালেবান হামলার মুখে পড়েন এবং গুলীবিদ্ধ হয়েও বেঁচে ফিরে এসে নারী শিক্ষার জন্যই কাজ করে চলেছেন। আর ৬০ বছর বয়সী কৈলাস গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন, গড়ে তুলেছেন ‘বাচপান বাঁচাও’ আন্দোলন।
পাকিস্তানে ১৩২ শিশু হত্যা: পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই তালেবান হামলা থেকে বেঁচে গিয়ে অর্জন করেন শান্তির নোবেল। সেই তালেবান গোষ্ঠীই চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঘটালো স্মরণকালের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম ঘটনা। যে শিশুরা যুদ্ধেও অবধ্য তাদেরই হত্যা করল তালেবানীরা। পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩২ শিশুসহ ১৪১ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তালেবান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী। তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই হত্যাকা- চালানো হয় বলে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীটি দাবি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর হত্যা: চলতি বছরের আগস্টে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন পুলিশের গুলীতে নিহত হয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকমাস ধরে বিক্ষোভ চলে। এরমধ্যে ২০ ডিসেম্বর নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে আত্মঘাতী অস্ত্রধারীর গুলীতে দু’শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান। ধারণা করা হয় কৃষ্ণাঙ্গ ব্রাউনের হত্যার জেরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে।
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার স্বপ্নভঙ্গ: সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রশ্নে আয়োজিত ওই গণভোটে ৫৫ শতাংশ ভোটার নেতিবাচক রায় দেয়। আর স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয় ৪৫ শতাংশ স্কটিশ। ফলে যুক্তরাজ্য থেকে বেরিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা ভেস্তে যায় স্কটল্যান্ডের। তবে গণভোটে স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বিচ্ছেদ থামাতে স্কটিশ ভোটারদেরকে নজিরবিহীন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যপন্থী নেতারা। ওই অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন ডেভিড ক্যামেরন।
প্রাণঘাতী ইবোলা: প্রাণঘাতী ভাইরাস ইবোলা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬ হাজার ৩৩৮ জনের মতো। এদের বেশির ভাগই লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং গিনির বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সম্প্রতি এ রোগে মানুষের মৃত্যুর হার প্রায় ৭০ শতাংশ। এ বছর টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছে ‘ইবোলা’ আক্রান্ত রোগীদেরকে সাহায্যে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়ে যাওয়া ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে এম্বুলেন্স চালক, এমনকি মারা যাওয়া রোগীদের সমাহিত করার কাজে নিয়োজিতদেরকেও এবার ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত করেছে টাইম ম্যাগাজিন।
খুন হলেন বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড নারী: শেষ পর্যন্ত খুন হলেন বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড নারী জঙ্গি ‘হোয়াইট উইডো’ কুখ্যাত সামান্থা লিউথওয়াট। দু’সপ্তাহ আগে ইউক্রেনের সড়কে মুখোশধারী এক রাশিয়ান স্নাইপারের গুলীতে প্রাক্তন এ ব্রিটিশ নারী সেনা নিহত হন বলে দাবি করছে মস্কোভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রেগনাম। এ খবরটি গত ১২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম মিরর জানায়, লিউথওয়াট দু’সপ্তাহ আগেই ইউক্রেনে এসেছিলেন। কিয়েভপন্থী গ্রুপ আইদার’র হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। সামান্থার হত্যাকারী রাশিয়ান স্নাইপারের মাথার দাম ছয় লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ঘোষণা করেছে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী। ২০১৩ সালে কেনিয়ার ওয়েস্টগেট শপিং মলে ৬৭ জনের প্রাণঘাতী হামলার পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন ‘সাদা বিধবা’ সামান্থা। তারও আগে বেশকিছু সন্ত্রাসী হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করে পরোয়ানা জারি করা হলে আত্মগোপন করেন এই সন্ত্রাসবাদী নারী।
সাংবাদিকদের জন্য ভয়াবহ একটি বছর: ২০১৪ সাল ছিল সাংবাদিকদের জন্য ভয়াবহ। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। সিপিজের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ স্থানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৬০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অনেকে। নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দু’সাংবাদিক রয়েছেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ইরাকে দুই মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলি ও স্টিভেন সটলফের শিরচ্ছেদ করা হয়। আফগানিস্তানে নির্বাচনের খবর সংগ্রহকালে এ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) জার্মান আলোকচিত্রী আনজা নিদ্রিংগাস পুলিশের গুলীতে নিহত হন। ইউক্রেনে চলতি বছর নিহত হন ৭ গণমাধ্যমকর্মী। সাংবাদিকদের এই নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, বিদায়ী বছরটি সারাবিশ্বের জন্যই ছিল সংঘাতপূর্ণ। বিদায়ী বছরেও ১৭ সাংবাদিক নিহত হওয়ার মধ্যদিয়ে সিরিয়া সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ নিয়ে পর পর তিন বছর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক নিহতের ঘটনা ঘটল।
ব্রাজিলে দু’ হাজার দম্পতির গণবিয়ে: রিও ডি জেনেরিও শহরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণবিয়ে হয়ে গেল। নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে শহরের ইনডোর স্টেডিয়ামে একসঙ্গে প্রায় ২ হাজার ব্রাজিলিয়ান দম্পতি বিয়েতে অংশগ্রহণ করেন। বিয়ের খরচ চালাতে অক্ষম এমন কম আয়ের মানুষের জন্য স্থানীয় প্রশাসন এই গণবিয়ের আয়োজন করে। কর্তৃপক্ষ দম্পতি ও তাদের অতিথিদের জন্য বিশেষ যাত্রীবাহী ট্রেনের ব্যবস্থা করে। মারাকানাজিনহো এলাকায় অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ১২ হাজারের মতো মানুষ অংশগ্রহণ করে। যেসব দম্পতির মাসিক আয় সর্বোচ্চ এক হাজার মার্কিন ডলার তারাই এ বিয়েতে অংশ নেন। অবশ্য এদের মধ্যে অনেকেই একসঙ্গে কয়েক বছর ধরে থাকছেন।
যুক্তরাজ্যে ছেলেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহাম্মদ: যুক্তরাজ্যে ছেলেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম হচ্ছে মুহাম্মদ। প্যারেন্টিং ও প্রেগনেন্সি ওয়েবসাইট বেবিসেন্টার এক জরিপে এমনটি দাবি করেছে। জরিপে বলা হয়, অলিভার ও জ্যাক এই দুই নামকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে মুহাম্মদ। অথচ গত বছরই মুহাম্মদের স্থান ছিল ২৭ নম্বরে। ১০০টি নামের ওপর জরিপটি চালানো হয়। বেবিসেন্টারের নির্বাহী সম্পাদক সারাহ রেডশো গার্ডিয়ানকে জানান, শীর্ষ ১০০ নামের মধ্যে আরবি নামার আসার অর্থই হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতিতে বৈচিত্র এসেছে। এর আগে ১৯৫০ সালে মুহাম্মদ নামটি শীর্ষস্থান দখল করেছিল। অন্যদিকে মেয়েদের নামের মধ্যে এগিয়ে আছে নূর নামটি। এর স্থান ২৯। মরিয়ম ৫৯ নম্বর থেকে ৩৫তম স্থানে চলে এসেছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, ব্রিটিশ রাজ পরিবারের নামগুলো দিনদিন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এদের মধ্যে চার্লি ও হ্যারির অবস্থান যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম। উইলিয়াম ও জর্জের স্থান ১২তম ও ১৮তম।
সর্বাধিক বয়সী যুগল: করম চাঁদ এবং কারতারি। এ বছর করম চাঁদ ১০৯ বছরে পা রাখলেন এবং কারতারি ১০২ বছরে। দু’জনের বয়স মিলিয়েই তারা ভাবেন ২১১ বছর কাটালেন পৃথিবীতে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বয়সী যুগল বলে মনে করা হয় তাদের। ইংল্যান্ডের পশ্চিম ইয়র্কসিয়ার অঞ্চলের ব্রাডফোর্ড অঞ্চলের চার প্রজন্ম ধরে তাদের জন্মবার্ষিকী পালিত হয়ে আসছে। নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে প্রতি বছর ২৩ নবেম্বর আট সন্তান এবং তাদের ঘরে ২৭ নাতি-পুতিদের অভ্যর্থনায় মুখরিত হয়ে ওঠে এই যুগলদের জন্মদিন। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। এ বছর বিয়ে বার্ষিকীতে তাদের ছেলে পল চাঁদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা গর্ব বোধ করি আমাদের বাবা-মাকে প্রায় শততম বিয়ে বার্ষিকী উদযাপন করতে দেখে। এটা আমাদের পরিবারের জন্য একটি বিশেষ দিন। এদিনে কেবল পরিবারের সদস্যরাই আমরা একত্রিত হই তা নয়, ভারত থেকেও আমাদের স্বজনরা এ আনন্দের অংশীদার হয়। চাঁদ বলেন, বৈবাহিক জীবনে ৮৬ বছরই আমাদের সোনালী সময় কেটেছে, তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি সময় আসামাত্র চলে যেতে। সব কিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছা, কিন্তু সত্যিই আমরা অনেক ভাল সময় কাটিয়েছি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button