বিশ্বায়নের সুফলের পাশাপাশি আছে মারাত্মক সমস্যাও

World Cupগত কয়েক দশকে বিশ্বায়ন ও নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে দ্রুততম সময়ে অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্ব যা আগে কখনও এ রকমটি দেখেনি। বিশ্বে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে। গড় আয়ু বেড়েছে। নতুন নতুন সম্পদের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যা ছিল অকল্পনায়। এগুলো হলো ভাল খবর। কিন্তু অনেক খারাপ খবরও আছে। তবে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বায়নের ফলে যে অগ্রগতি ও উন্নতি হয়েছে যেগুলো এখন হুমকির মুখে। বিশ্ব একই সঙ্গে যেমন বিশ্বায়নের ফলে উপকৃত হচ্ছে তেমনি আমাদের সমাজের সংহতি, আমাদের অর্থনীতি এবং আধুনিক সমাজের অবকাঠামোর আওতা বৃদ্ধির ফলে ভেতরগত যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত মোকাবিলা করতে বিশ্বায়ন ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বিপজ্জনকভাবে তা সীমান্ত পেরিয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে আমাদের বিপদের ঝুঁকি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এতে জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে ঐতিহ্যগতভাবে শিল্প ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যকার সীমারেখা মুছে যাওয়ার হুমকি দেখা দিয়েছে। একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পদ্ধতির প্রচারণা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংকটের সৃষ্টি করবে।
আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণ বিশ্বব্যাপী দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। কম্পিউটারে পরস্পরের যোগাযোগ সাইবার অপরাধের দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মিলিশিয়ারা তরুণ ইউরোপীয়দের দলে ভেড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে এবং গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে বিশ্বের আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। স্থানীয়ভাবে একটি অগ্নিকান্ডের ফলে অল্প জায়গা হয়তো পুড়তো এখন বিশ্বায়নের ফলে সারা বিশ্বে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ার হুমকি সব সময় থাকছে। এখানে আঞ্চলিক সীমানা অতিক্রম করে তা দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। সিটি অব লন্ডন ওয়াল স্ট্রীটে সর্বব্যাপকতা, বন্যা কিংবা সাইবার হামলা সমগ্র বিশ্বকে অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্বায়নের ফলে যদি অগ্রগতি হয় তাহলে এর সুফল ভাগাভাগি করে নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে উপকারভোগী দেশগুলোকে অবশ্য ব্যবস্থাপনার ঝুঁকির দায়িত্ব অবশ্যই ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সেটা যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মত শক্তিশালী সরকার হোক কিংবা ইরাক ও লাইবেরিয়ার মত দুর্বল সরকারই হোক। বিশ্বায়নের ফলে যে ঝুঁকির উদ্ভব হতে পারে তার সামান্য অংশের মোকাবিলা সত্যিকারভাবে সবাইকে মিলেই করতে হবে এবং কার্যকরভাবে তার সমাধান করতে হবে। হুমকি মোকাবিলায় সবাইর সাড়া দেয়াটা স্বাভাবিক হতে হবে।  অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষেত্রে যেসব দেশ এ বিপদে পড়েছে এবং যারা ঝুঁকির মুখে রয়েছে তাদেরকে সমর্থন যোগাতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিক বিপদ- যেমন আবহাওয়া পরিবর্তন বা নতুন অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে এক ডজন বা আরও বেশি রাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ভিত্তিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে। বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সময়ের ব্যবধানে এটা গভীর সংকটে রূপ নেয়। ফলে তা মোকাবিলার যে গতি প্রাথমিক নির্ধারণ করা হয় বাস্তবে তা অত্যন্ত হালকাভাবে নেয়া হয়। ফলে এক সময়ে তা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ইবোলা আক্রমণের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। প্রথমত এটা বিশ্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি হতে পারে এমন ধারণা করা করা হয়নি। ফলে এ বিষয়টাকে বিচ্ছিন্নভাবে মোকাবিলা করা হয়। এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় ইসলামিক স্টেট বা আইএসের দিকে। ফলে ইবোলা অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় ৫ হাজারের মত মানুষ এতে মারা যায়। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। ইসলামিক স্টেট, ইবোলা, অর্থনৈতিক সংকট, আবহাওয়া পরিবর্তন কিংবা ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক সংকটের অবশ্যই সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে আর তা না হলে গোটা পৃথিবীবাসীকে এক সময় পস্তাতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button