ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে আমেরিকা

Americaভিক্টর ডেভিস হ্যানসন : অনুবাদ-মোহাম্মদ হাসান শরীফ
(আমেরিকান কংগ্রেস এখন রিপাবলিকানদের হাতে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কি গুণগত পরিবর্তন হবে? যুক্তরাষ্ট্র কি আবার বুশ আমলের যুদ্ধংদেহী অবস্থায় ফিরে যাবে? ওবামা কি তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন? তার ওপর এখন নানামুখী চাপ সৃষ্টি হবে। তা কেমন ধরনের হতে পারে, এর একটা আভাস দিয়েছেন আমেরিকান ইতিহাসবিদ, কলামিস্ট ও প্রাচীন সমর বিশারদ ভিক্টর ডেভিস হ্যানসন। এ লেখায়  অবশ্য তার রিপাবলিকান শিবিরে থাকার কিছু প্রভাব রয়েছে। জর্জ ওয়াকার বুশের সময় ২০০৭ সালে হ্যানসন ন্যাশনাল হিউমিনিটিজ মেডেল পেয়েছিলেন।)
ইবোলা সঙ্কট এবং তথাকথিত নিঃসঙ্গ ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের তৎপরতায় আতঙ্কে জমে যাওয়া ওবামার প্রতিক্রিয়া বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গেও গ্রহণ করা বিশেষ রাজনৈতিক কৌশলে মার্কিন বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মার্কিন সরকারকে যখন তার নিজেদের নাগরিকদের রার ব্যাপারে অনেক কম সচেতন এবং তার রাজনৈতিকভাবে নির্ভুল বহুসাংস্কৃতিক বিশ্বাসযোগ্যতা খোয়ানো নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে, তখন আমাদের বেশির ভাগ শত্র“ মনে করে (যদিও ভ্রান্তভাবে) যে তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা কোনো ক্রুদ্ধ, অজানা ও বিপর্যয়কর প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে না।
গতানুগতিক মামুলি বিষয়গুলো তখন স্থির বিষয়ে পরিণত হতে পারে : ওবামা একবার তেল আবিবের বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরে মার্কিন ভ্রমণ বন্ধ করে দেন, অথচ লাইবেরিয়া থেকে মার্কিন কানেকটিং ফাইট কমাননি। বিষয়টা অভিন্ন নিরাপত্তার চেয়ে বহু সাংস্কৃতিক রাজনীতি নিয়ে বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ঠিক যেমন ওবামা প্রশাসন ইসলামিক স্টেট (মাঝারি মানের থেকে ‘সমাধানযোগ্য সমস্যা’ কিংবা অস্তিত্বগত হুমকি পর্যন্ত নানা ভাবনা) নিয়ে বিভ্রান্ত, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (‘সৌখিন’ থেকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনীর কৌশলগত ভিত্তি পর্যন্ত) নিয়ে বিভ্রান্ত, আমেরিকান ইরাক-পরবর্তী (‘নিরাপদ,’ ‘স্থিতিশীল,’ ‘শ্রেষ্ঠতম অর্জন’) নিয়ে বিভ্রান্ত, এবং ইবোলা (যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের সামান্য আশঙ্কা, ফাইট বিধি নিষেধের কোনোই প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নির্দিষ্ট কিছু বিমানবন্দরের ব্যাপারে বিধি নিষেধ আরোপ, কিছু কোয়ারেন্টাইন করা ইত্যাদি) নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কারণে আমাদের শত্র“রাও বিশ্বাস করবে যে আমরা তাদের অভিপ্রায় ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্ত।
পরবর্তী দুই বছরে ইসলামি সন্ত্রাসের বিপদে ওমাবাকে হয়তো জোরালোভাবেই জবাব দিতে হতে পারে (হয়তো ভালোভাবেই দেবেন, রিপাবলিকান কংগ্রেস এবং ব্যাপক গণভাবাবেগের কারণে) কিন্তু তিনি অপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করে (মাপ্রার্থনামূলক সফর, ইসলাম সম্পর্কে মিথাশ্রয়ী বক্তব্য, ইসরাইলের ব্যাপারে তীব্র আপত্তি, জিহাদি সহিংসতা নিয়ে অবাস্তব কোমল আচরণ, সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনান এবং ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্যাপারের ইসলামবাদ সম্পর্কে অর্থহীন মন্তব্য, হামাসের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া) এই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি বোধগম্য সহিংসতা বিস্তারের ‘মূল কারণ’ চটজলদি বুঝে ফেলেছেন। এ ধরনের ধারণা, তা বৈধ বা অবৈধ যা-ই হোক না কেন, আগামী দুই বছরে সন্ত্রাসীদের আরো হামলা চালানোর চেষ্টাকেই উসকে দেবে। আর সেটা আরো ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার দাবি সৃষ্টি করবে, তা কেবল ড্রোন হামলার দিকে ওবামাকে ঠেলে দেবে।
ছয় বছর ধরে উন্মুক্ত সীমান্ত এবং বলপ্রয়োগের ভ্রান্ত পরিসংখ্যান আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমকে বদলে দিয়েছে। সব ধরনের বাস্তববাদী উদ্দেশ্যেই এখন আর নিরাপদ দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত বা মার্কিন নাগরিকত্বের সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। ওবামার কারণে আমরা স্বায়ত্তশাসিত অলঙ্ঘনীয় আইনগত ব্যবস্থা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা হারিয়ে ফেলেছি। মেক্সিকো যদি তার রোমান্স ঝেড়ে ফেলে তবে তারা আর বন্ধু থাকবে না, শত্রুতে পরিণত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এর নীতি সুস্পষ্টভাবে আমেরিকানবিরোধী : সীমান্ত দিয়ে দেশটি তার নিজের গরিব লোকদের মার্কিন আইনের বিরুদ্ধে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দিচ্ছে, আর এর মাধ্যমে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাগিয়ে নিচ্ছে, সামাজিক খাতের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মেক্সিকোপন্থী প্রবাসী এলাকা সৃষ্টি করছে এবং সম্ভাব্য ভিন্ন মতালম্বীদের আমেরিকায় পাঠিয়ে নিজ দেশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার এড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি অবৈধ অভিবাসন বন্ধ না করি, মানসম্পন্ন নীতি গ্রহণ না করি, জাতিগতভাবে অন্ধ থাকি এবং বৈধ অভিবাসন আরো সীমিত করার নীতি গ্রহণ করি এবং একীভূত করার নীতিতে ফিরে যাই, তবে এমন একটি সীমান্ত এলাকা গঠিত হবে যা মেক্সিকো বা আমেরিকা কাউকেই সন্তুষ্ট করবে না। সেটা বর্তমানের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তকে বদলে দেবে।
পরিশেষে, সাত ট্রিলিয়ন জাতীয় ঋণের বাইরে আরো ৬০০ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়া এবং সেই সাথে কর বৃদ্ধি ও আলাদা করে বরাদ্দ করার ফলে সৃষ্ট বাজেট ঘাটতি, অধিকার ও সরকারি বিধিবিধানের ফলে খরচ বৃদ্ধি, শূন্য সুদ হারের কাক্সিত সাফল্য পেতে ব্যর্থতা, বিশাল ঘাটতি এবং সরকারি সম্প্রসারণের বিষয়গুলো শত্রুকে এই ধারণাই দেবে যে, একটা পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও আর নিজের ইচ্ছামতো নিজেকে রা করতে পারবে না। নাকি পরিস্থিতির এর চেয়েও খারাপ হবে? প্রতিরা খাতে কম ব্যয়ের ইউরোপিয়ান সামাজিক গণতান্ত্রিক মডেলের দিকে যাওয়ার পদ্ধতি কি গ্রহণ করা হবে? ওবামার দৃষ্টিতে সেটা ভালো কাজ হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে সেটা ভালোই শোনায়। কিন্তু চীন, ইরান, জিহাদি, রাশিয়ার মতো কঠোর শক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ইইউ’র মতো নমনীয় শক্তিতে নেমে যাওয়ার ধারণাকে স্বাগত জানাবে।
নির্বাচনের পর আমরা ১৯৭০-এর দশকের পর মার্কিন পররাষ্ট্র সম্পর্কের সবচেয়ে বিপজ্জনক অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। সমস্যাটা কেবল এই নয় যে কোনো রোনাল্ড রিগানকে আর দৃশ্যপটে দেখা যাচ্ছে না, বরং এমনকি জিমি কার্টারকেও এখন ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button