দেশব্যাপী গণসংযোগে নামছে ২০ দলীয় জোট

সরকার বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল পুনর্গঠন, আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখাসহ বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচিতে নামছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসেই তিন জেলায় সফর করবেন জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জেলা তিনটিতে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি।
এছাড়া চলতি মাস থেকেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা দেশব্যাপী ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন। এসময় বিভিন্ন উপজেলা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরসহ তৃণমূলে সভা-সমাবেশ করে দল পুনর্গঠন ও আন্দোলনে সাধারণ মানুষদের সম্পৃক্ততা কীভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনা দেবেন তারা। এছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করবেন। নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতার পাশাপাশি সরকারের নানা ব্যর্থতার দিকগুলোও তুলে ধরা হবে এসব গণসংযোগ কর্মসূচিতে।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে যে তিন জেলায় খালেদা জিয়া সফর করবেন তার মধ্যে রয়েছে— নীলফামারী, কুমিল্লা ও নাটোর। এর মধ্যে ২৩ অক্টোবর নীলফামারীতে জনসভার তারিখ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দিন নীলফামারীতে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত গুম-খুন, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং অবিলম্বে সংসদ বাতিল করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জনসভায় খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। এছাড়া কুমিল্লা ও নাটোরে জনসভা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
সূত্রটি আরও জানায়, শনিবার (১১ অক্টোবর ২০১৪) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে অফিস করবেন। সেখানেই কুমিল্লা ও নাটোরের সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গণসংযোগ কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তাদের আন্দোলন চলছে। ঈদের আগে জোটের বৈঠকে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সবাই ঈদের পর গণসংযোগের প্রতি জোর দেন। জনগণ ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে শিগগিরই কয়েকটি জেলা সফরে যাবেন দলের চেয়ারপারসন।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জোট নেতা খালেদা জিয়ার বৈঠকে ঈদের পর ঢাকার বাইরে দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। পরের দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ঈদের পর আন্দোলন হবে। আগেও আন্দোলন হয়েছে। এবার ঢাকায়ও হবে। সারা দেশেই আন্দোলন হবে। এজন্য তিনি বিএনপি ও ২০ দলের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দেন। এছাড়া ঈদের আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও জামালপুরে দুটি জনসভা করেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি ও জোটের একাধিক সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে গণসংযোগের পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক ও জনগণের সম্পৃক্ততা আছে এমন কর্মসূচি নিয়েই রাজপথে থাকার চিন্তাভাবনা করছে ২০ দলীয় জোট। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে ইতিমধ্যে গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর একটি আভাস দেয়া হয়েছে। সরকার এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রতিবাদে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকার বিরোধী এ জোটের। এছাড়া হজ ও মহানবীকে (সা.) নিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকায় একটি গণসমাবেশ করা হবে। দল ও জোটের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শিগগিরই এর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হতে পারে। গণসংযোগ ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি সংগঠন পুনর্গঠনেও মনোযোগ রয়েছে বিএনপির।
জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। ঢাকা মহানগর বিএনপির সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দ্রুত শেষ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শ্রমিক দলে ইতিমধ্যে বিদ্রোহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। এরপর থেকে ঝুলে আছে ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন। এরপর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলের কমিটি পুনর্গঠনে হাত দেবেন খালেদা জিয়া।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button