বাংলাদেশে ইসলামবিরোধী তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে

সামছুল আরেফীন: রাসূল (সা.), হজ্ব ও তাবলিগ জামাত নিয়ে মন্তব্য করায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বাদ পড়ছেন। কিন্তু এর আগেও তিনি এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। শুধু তিনিই নয়, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও ইসলামবিরোধী মন্তব্য  করেছিলেন। ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন কর্মকা-ও হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয় অথবা নীরবতায় তা অব্যাহতভাবেই চলছে।
প্রধানমন্ত্রী: ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে দুর্গোৎসব উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জানি এবং শুনেছি আমার মা দুর্গা প্রত্যেক বছর  কোনো না  কোনো বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের  দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তা আমরা  দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে।  দেশের জিডিপি বৃদ্ধি  পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।’
সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা উঠিয়ে দেয়া: আওয়ামী লীগ সরকার ১৫তম সংশোধনীর সময় সংবিধানের ৮(১) ও ৮(১)(ক) ধারায় বর্ণিত সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের উপর আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি বাদ দেয়। এ ছাড়া বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কথাটিও অনুবাদ করে সংযোজন করা হয়। মূলত: আরবী বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এমনটা করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কুরআনের ভাষার বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয়া হয়।
মন্ত্রীদের কিছু বক্তব্য: জাতীয় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের  প্রেসিডিয়াম সদস্য  সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেছেন, সংবিধান  থেকে ধর্মের কালো বিধিকে মুছে  ফেলতে হবে।
২০১১ সালের ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন।
মেনন বলেছেন এদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদরাসা জন্মাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম আওয়ামী ওলামা লীগ আয়োজিত এক সভায় বলেন, দেশে ইসলাম টিকিয়ে  রেখেছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। আর এ ইসলামের প্রবর্তক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আরো বলেন, জামায়াত  নেতারা  রোজা রাখে ঠিকই, কিন্তু ইফতার করে হুইস্কি দিয়ে।
২০১০ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন আইনপ্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন,  “আল্লাহ যদি লাখ লাখ  কোটি  কোটি বছর পর বিচার করতে পারেন তাহলে আমরা  কেন ৪০ বছর পর বিচার করতে পারব না ?”
২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এক অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন,  “বিশ্বের অনেক স্থানের  চেয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা  বেশি ধর্মপরায়ণ।  শেখ মুজিব ও তার  মেয়ে  শেখ হাসিনাও ইসলামের অন্যতম  খেদমতকারী।” মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় অনেক কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে মদ, জুয়া হারাম করেছিলেন।” এ সময় ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতির  খেলা’ বন্ধ করতে মুসল্লিদর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন,  “ইসলাম পবিত্র ও  শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির  কোনো স্থান নেই। কুরআনে এ সম্পর্কে কোনো আয়াত নেই। রাসূল (সা.) ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পছন্দ করতেন না। তিনি এই কাজটি কখনো করেননি।”
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম! “ শেখ হাসিনার নির্দেশ মানা আলীগ ও ছাত্রলীগের জন্য ইবাদত” বলেছেন। (নয়াদিগন্ত, মে ৬, ২০১০)
২০১০ সালের ২৭ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক ওয়াক্ত নামায পড়েন না এবং এমন কোনো ইসলাম বিরোধী কাজ নেই যা তিনি করেন না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের নিয়ম-নীতি মেনে চলেন। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন প্রতিদিন তিনি নামায আদায় ও কোরআন তেলাওয়াত করেন।”
২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, কওমী মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপম-ূকতার সৃষ্টি করছে। ৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাৎ্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।
২০১০ সালে একটি সেমিনারে তৎকালীন ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী বলেন, কুৎসিত চেহারা ঢাকতেই মহিলারা বোরকা পড়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আগে নাকি মানে ছোটকালে তিনি বোরকা পরা নারী তেমন একটা চোখেই দেখতেন না। কিন্তু এখন নাকি তিনি বোরকা পরা মহিলা এত বেশি দেখেন যে উনার এজন্য অনেক কষ্ট হয়। এছাড়া তিনি গ্রামীণ নারীদের কটাক্ষ করে বলেন, গ্রামে বোরকা পরার হার বেশি, কারণ তারা কুৎসিত, তাই তারা তাদের কুৎসিত চেহারা ঢেকে রাখতে চায়।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বচন: রাসূল (সা:), হজ্ব ও তাবলিগ জামাত নিয়ে মন্তব্য করায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রী সভা ও দল থেকে বাদ পড়ছেন। কিন্তু তিনি এর আগেও এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ২০০৯ সালে পাটমন্ত্রী থাকাকালে তিনি বলেন, ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা। জয়পুরহাটের এক জনসভায় বলেছিলেন, মোল্লারা ভিক্ষা করে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সেখানে আযান দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করেন।
গত সংসদের বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আর কখনো নির্বাচন করবেন না জানিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নেন বিতর্কিত এ ব্যক্তি। কিন্তু সেই অঙ্গীকারেও তিনি অটল থাকতে পারেননি। ক্ষমতার লোভে এবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে দলের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে গত সরকারের সময় পাওয়া পাট মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় এবার তাকে সরিয়ে স্থানান্তর করা হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। সব কিছুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যেন ছিল এ মন্ত্রীর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তার লাগামহীন এসব কর্মকা- শুধু বিরোধী মতেরই নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও বিব্রত করেছে বারবার।
এর আগে গত বছর ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে এক সভায় লতিফ সিদ্দিকী জামায়াতের হরতালে দলীয় নেতাকর্মীদের তৎপর না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আর বসে থাকার সময় নেই। আর কেউ হরতাল করলে তাদের বাড়িতে ঢুকে হত্যা করতে হবে। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত হরতাল করে। আর রাস্তায় শুধু পুলিশ থাকে। আমাদের নেতাকর্মীরা নেতার হুকুমের অপোয় বসে থাকেন। তিনি বলেন, সব কিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগবে কেন? যখন বাড়ি-গাড়ি করেন তখন কোথায় থাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। আমি বলছি, এটিই আমার শেষ বক্তৃতা।
ওই মাসের শেষ সপ্তাহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। আমি যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতাম, তাহলে এত দিন তাকে (ড. ইউনূস) কারাগারে থাকতে হতো।
গত ২৮ মার্চ টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে পিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী পুনয় চন্দ্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গাজীপুরের হাইটেক পার্কের উপসহকারী প্রকৌশলীকে পানিতে ভিজিয়ে শাস্তি দেন এ বিতর্কিত মতাধর মন্ত্রী। চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী হাইটেক পার্কে প্রবেশের সময় ফোয়ারা অপরিষ্কার দেখেন। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য গাজীপুর হাইটেক পার্কের সামনে ফোয়ারা  তৈরি করা হলেও তা অপরিষ্কার থাকায় প্রকৌশলীকে পানিতে নামান মন্ত্রী। পরে ফোয়ারার পানিতে তাকে ভিজিয়ে শাস্তি দেন তিনি।
২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর যথাযথ মর্যাদা না দেয়ার অভিযোগ তুলে পাট নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আয়োজকদের কঠোর সমালোচনা করেন তখনকার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে লতিফ সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অর্থমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা। আর আমি কি উড়ে এসেছি?
এর কিছু দিন পরই খামারবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে কুরআন ও আযানের সমালোচনা করে বিতর্কিত এ মন্ত্রী বলেন, আযানের সময় মাইক বন্ধ রাখতে হবে কেন? আর কোনো অনুষ্ঠান কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করতে হবে কেন? কুরআন তিলাওয়াতের সাথে গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটকও পাঠ করতে হবে।
গত বছর ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় দাঁড়িয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে আর অংশ নেবো না। তবে দলীয় রাজনীতিতে শেখ হাসিনা যে নির্দেশ দেবেন, তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করব।
২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদের সমালোচনা করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, স্পিকার হচ্ছেন সংসদের সেবক। তিনি প্রভু নন। আবদুল হামিদকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, প্রতিভা ও প্রগল্ভতা এক নয়।
তবে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘চিনতে না পারলেও’ গত ১১ মার্চ ঢাকায় জয়ের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী জয়কে নিজের মাস্টার হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে জয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, তা পথপ্রদর্শক হবে। কারণ তিনি যার ( শেখ হাসিনা) উপদেষ্টা, তার সৃষ্টি মননশীল।
গত ৩১ আগস্ট সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে, তা শুনলে আমি হাসি। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি পড়েছেন কি না। তিনি কিন্তু পড়েননি। কেবল নীতিমালা পড়লেই হবে না, টেলিভিশনগুলো যেসব শর্তে লাইসেন্স পেয়েছে, সেগুলোও জানা থাকতে হবে। ওরা কী কী শর্তে দস্তখত করে লাইসেন্স নিয়েছে সেই শর্তটা একবার বের করে দেখুন। ওই কাবিননামায় দস্তখত করেই কিন্তু লাইসেন্স পেয়েছে।
চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমার স্বভাব খারাপ, এ জন্য মাঝে মধ্যে একটু লাঠিপেটা করি। সাপকে যদি মারতে হয়, তাহলে লাঠিপেটা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সাংবাদিকেরা আমার বিরুদ্ধে লাগে উক্তি করে সমালোচিত এই মন্ত্রী বলেন, এ দেশের ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, ব্যবসায়ী, কথিত সুশীলসমাজের সদস্যরা বেতনভুক ক্রীতদাস।
গত ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের  বৈঠকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রবীণ নেতা সংগঠনকে গতিশীল ও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। তাদের থামিয়ে দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, সংগঠন-টংগঠন দিয়ে কিছু হবে না নেত্রী। আপনি (শেখ হাসিনা) বেঁচে থাকলে সব ঠিক থাকবে। দল দিয়ে কিছু হয় না। আপনিই আমাদের সব।
এর আগে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ধানাইদহ ও লালপুর উপজেলার দাঁইড়পাড়া এলাকায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এক হাতে পিস্তল উঁচিয়ে ও অন্য হাতে দা নিয়ে সড়কে অবরোধকারীদের ফেলে রাখা গাছের ডালপালা কেটে গাছ সরান।
সজিব ওয়াজেদ জয়: ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী তনয় সজিব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিনে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বোরকার ব্যবহার ৪০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
কিছু শিক্ষকের বক্তব্য: ২০১১ সালের ১৪ জুলাই  টুঙ্গিপাড়ার জিটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাস নেয়ার সময় শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস মহানবী(সা.) সম্পর্কে কটাক্ষ করে দাড়ি রাখা নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে ছাগলের সঙ্গে তুলনা করে।
একই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষিকা নূপুর রায় ষষ্ঠ শ্রেণীর হিন্দু ধর্মের রাসূল (সা:) সম্পর্কে কটূক্তি করে বলে, “কাবাঘর থেকে মূর্তি ভাঙার কারণে মূর্তির অভিশাপে মহানবীর বংশ নির্বংশ হয়ে গেছে। তার কোনো বংশধর এখন বেঁচে নেই।”
ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস। ২০১১ সালের ২৬ জুলাই তার সহকর্মী শিক্ষকদের এক সভায় সে মন্তব্য করে, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মুহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানরা মুহাম্মদের হজ্ব করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ্ব না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িয়ে গিয়ে হজ্ব করলেই তো হয়।’
ইফার ডিজি: মন্ত্রীদের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজালের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যও ছিল আলোচনার বিষয়। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে (!)। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়। ইমামদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাসূল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর কদিন আগে তিনি বলেছিলেন, জিহাদ বিদায় করতে হবে।
ইফা ডিজি কর্তৃক ইমামদের যুগল বন্দী নাচ দেখতে বাধ্য করা।
বিশ্বকাপের উদ্বোধন উপলক্ষে জাতীয় মসজিদের আসর, মাগরিব ও এশা এই ৩ ওয়াক্তের আযানের সময় মাইক বন্ধ রেখে চরম হীনম্মন্যতার পরিচয় দেয় আওয়ামী লীগ। তাছাড়া মঙ্গলযাত্রা দেখানো হলেও পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত হয়নি।
পর্দানশীন নারীদের হয়রানি: ২০১২ সালের গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ শিক্ষার্থীসহ পর্দানশীন ২১ জনকে পুলিশ আটক করে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার স্ত্রীও ছিলেন। বাকি ২০ শিক্ষার্থী ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্য।
২০১২ সালের ২৩ মে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে তল্লাশি করে বিভিন্ন বিভাগের নয় মেধাবী ছাত্রীকে আটক করেছে ছাত্রলীগ ও প্রশাসন। হলের মাঠ, রুমে রুমে তল্লাশি চালিয়ে রাত পৌনে দশটার দিকে তাদের আটক করা হয়।
২০১২ সালের ২ জুলাই চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের ছাত্রীরা হিজাব পরতে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে । হিজাব পরা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষিকাদের নির্যাতনের পর থেকে তারা আন্দোলনে নেমেছে। ছাত্রীদের নামায পড়তে বাধা দেয়াসহ কর্তৃপক্ষ নামাযকক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখে। অঞ্জলি দেবী নামে এক শিক্ষিকা জুতা পরা অবস্থায় নামাযঘরে প্রবেশ করে তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নামাযঘরে জুতা নিয়ে ঢুকেছি, কই আল্লাহ আমাকে কী করেছে?’ ছাত্রীরা আরও অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ তাদের বলেছেন নার্সিং করলে নামায পড়তে হয় না।  (আমার দেশ-০৩-১২-১২)
বাদ যায়নি বিদেশী পর্যটকও। গত ১ অক্টোবর ২০১০ সাইপ্রাসের এক পর্যটক নারী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ছবি তুলতে গেলে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
২০০৯ সালের  ৩ জুলাই বোরকা পরার অপরাধে বরিশালের পিরোজপুরের তিন ছাত্রীকে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ। তাদের কাছে অবৈধ কোন কিছু না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় থানা পুলিশ। ৯ জুলাই কোন প্রকার অভিযোগ ছাড়াই তাদের বিরোদ্ধে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। জিয়ানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ওই তরুণীদের বোরকা খুলতে বাধ্য করে আদালতে সোপর্দ করে।
২০১০ সালের ৩ এপ্রিল সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয় যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি বিভাগীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়, তবে আমার ক্লাসে কোনো ছাত্রীকে আমি বোরকা পরতে দেব না।
বোরকা পরে এসেছিল বলে এক ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে দেননি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার গোলাম হোসেন সরকার। বোরকার কারণে আরো পাঁচ ছাত্রীকে কলেজের মেইন গেইটে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তিনি বোরকাকে ‘অড’ বা দৃষ্টিকটু ড্রেস হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ‘একটা মেয়ে পায়ের নখ পর্যন্ত বোরকা পরে এসেছে। এটা দৃষ্টিকটু। তার বোন এসেছিল সাথে-খুব গোঁড়া। সে বলছে, তার বোন এ বোরকাই পরে আসবে। আমরা এটা এলাউ করতে পারি না। তাই তাকে ক্লাশে ঢুকতে দেয়া হয়নি।’ সূত্র:  দৈনিক নয়া দিগন্ত- ২ মার্চ ২০১২।
ড. জাফর ইকবাল সরাসরি পর্দার বিরুদ্ধে কলাম লিখেছেন। তিনি লিখেছেন,  মেয়েদের ঘরের ভেতর আটকে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো। একান্তই যদি ঘরের ভেতর আটকে রাখা না যায় অন্তত বোরকার ভেতর আটকে রাখা যাক। তার মানে বোরকাকে তিনি নারীর জন্য জেলখানা বা বাধা হিসেবে বুঝাতে চেয়েছেন। সূত্র : প্রথম আলো- ০৪-১১-২০১১।
লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কার ধর্মের অবমাননার জন্য নয়: সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহীন মালিক বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য বহিষ্কার করা হচ্ছেনা, বরং তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে জয়-অনুভূতিতে আঘাত হানার অপরাধে। এটার জন্য যদি বহিষ্কার করা হতো তাহলে মন্ত্রী পরিষদের অনেককে বহিষ্কার করা হতো।
গত মঙ্গলবার মঞ্জুরুল আলম পান্নার উপস্থাপনায় একুশে টেলিভিশনে ‘একুশের রাত’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ও  দৈনিক সংবাদ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন।
তুহিন মালিক অভিযোগ করে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে আস্কারা দিয়ে দিয়ে এই জায়গায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী একা নয়, তার মত আরো অনেক লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিপরিষদে রয়ে গেছেন। তিনি তো এ সরকারের একটা রেপলিকা। সাম্প্রতিককালে  সৈয়দ আশরাফ বলেছেন তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন। সাজেদা চৌধুরী বলেছেন সংবিধান থেকে ধর্মের কালো বিধিকে মুছে ফেলতে হবে।
তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য বহিষ্কার করা হচ্ছেনা, বরং তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে জয়-অনুভূতিতে আঘাত হানার অপরাধে। এটার জন্য যদি বহিষ্কার করা হতো তাহলে মন্ত্রিপরিষদের অনেককে বহিষ্কার করা হতো। তুহিন মালিক বলেন, যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য তাকে বহিষ্কার করা হত, তাহলে মেনন-ইনুরা অনেক আগেই বহিষ্কার হয়ে যেতেন।
ড. তুহীন মালিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বলে কথা, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কোরবানির আগেই যদি মন্ত্রিপরিষদ থেকে বহিষ্কার হন তাহলে প্রধামন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে বহিষ্কার হবেন, আল্লাহর নামে নয়।
তুহিন মালিক বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে চার বছর আগে নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়ে ছিল। তখন মামলা করেছিল তরিকত ফেডারেশন, আজ সে তরিকত ফেডারেশন কোথায়?  আজকে সরকারের ভূমিকা কোথায়?

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button