লন্ডনে জিয়াউর রহমান ওয়ে’র নামফলক হস্তান্তর

Tarequeআওয়ামী লীগকে ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আন্দোলন টের পেলে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। দলটির নেতা শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি, অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এসব সত্য কথা কেউ বললেই তাকে বিষোদগারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য তুলে ধরায় ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১১ জনের মধ্যে ৬ জন সেক্টর কমান্ডারকে আওয়ামী লীগ রাজাকার বানিয়েছে।
সোমবার রাত ১০টায় লন্ডনের ইয়র্ক হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও বিশ্বনেতা জিয়াউর রহমান : প্রেক্ষিক বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জিয়াউর রহমান ওয়ে‘র নামফলক হস্তান্তর’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ১৯৭৩ সালের দেয়া একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সমাবেশে সেলিম বলেন, ছাত্র হত্যার রক্তে শেখ মুজিবের হাত রঞ্জিত। ডাকসুর দেয়া খেতাব বঙ্গবন্ধু আজ তুলে নেয়া হলো। তাকে আর ’বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জাতির পিতা’ বলা যাবে না।
তারেক রহমান বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়ে ও স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর না করে শেখ মুজিব নিজেকে ‘পাকবন্ধু‘ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। ইতিমধ্যে হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার তার বইয়ে এমনটি উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, আর মুক্তিযুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি না নেয়ায় ৯ মাসের যুদ্ধে আমাদের এতোবেশি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসব মানুষের মৃত্যুর দায় শেখ মুজিবের। আর এ জন্য তাকে জাতির পিতা নয়, জাতির হত্যাকারী বলা যায় কিনা তা জাতি জানতে চায়।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরও শেখ মুজিব পাকিস্তানের পাসপোর্ট বহন করেছেন। তিনি ৭২’এর ১০ জানুয়ারি পাক পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। পাকিস্তানের পাসপোর্ট বহন করায় তিনি অবৈধ রাষ্ট্রপতি।
১ ঘণ্টা ১৭ মিনিটের বক্তৃতায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিব হত্যা, সিপাহী জনতার বিপ্লব, জিয়াউর রহমানের শাসনামল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনাসহ ঐতিহাসিক গবেষণার নানা তথ্যভিত্তিক চিত্র তুলে ধরেন।
জিয়াউর রহমান ওয়ে প্রতিষ্ঠার বিবরণ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন উদ্যোক্তা ইলিনয় রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জেসি হোয়াইটের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য শাহ মোজাম্মেল নান্টু, শিকাগোতে যোগদানকারী বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট জয়নাল আবেদিন, এডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা এম এ মালেক, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবদুল হাই ও রফিকউল্লাহ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে  বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, মতিয়া চৌধুরী ও রাশেদ খান মেনন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন। আর শেখ হাসিনা তাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির জনসম্পৃক্ততা ও সফলতার দৌড়ে কুলিয়ে উঠতে না পেরে শেখ হাসিনা এবার ভাড়া করা ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে গাট বেঁধেছেন। শেখ মুজিব ও খালেদ মোশাররফের হত্যার সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সম্পৃক্তার ইঙ্গিত করে তিনি এ বিষয়ে ইনুর রিমান্ড দাবি করেন।
ক্ষমতা স্থায়ী করতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে দেখানোর চক্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ এনে তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনা জুজুর ভয় দেখান। বাংলাদেশের মানুষকে জঙ্গি হিসেবে প্রমাণ করতে চান। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আমলেই জঙ্গির উত্থান হয়েছে। বিএনপি এসে তা দমন করে।
বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে শেখ হাসিনার সরকারকে সরাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সবাই দলমত নির্বিশেষে শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশকে জঙ্গিমুক্ত করা হবে।
শেখ হাসিনাকে ২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত রং হেডেড উপাধি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি যুক্তিতে নয়, পেশী শক্তিতে বিশ্বাসী। দুর্নীতিবাজ, খুনি, আর বেয়াদবিকে প্রশ্রয় দিতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন।
চলমান আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি নিজেদের কৌশলে আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করছে। এ আন্দোলন নাকি আওয়ামী লীগ টের পাচ্ছে না। সময়মতো আন্দোলনের কঠোরতা বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্দোলন যখন টের পাবে তখন আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট জয়নাল আবেদিন বলেন, মামলা-হামলা-গুম-হত্যার পথ পেরিয়ে আমাদের আন্দোলন চলছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এসব রুখে দিতে কঠোর আন্দোলন জরুরি।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। শত ষড়যন্ত্র করেও এই সত্য আটকে রাখা যাবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাস্তার নামকরণে আরেকবার প্রমাণিত হলো জিয়াউর রহমান একজন বিশ্বনেতা। এভাবে গুরুত্বপূর্ণ সব শহরে জিয়ার নামে সড়ক, পার্ক, লাইব্রেরীর নামকরণের মাধ্যমে জ্যোতির্ময় জিয়া ছড়িয়ে থাকবেন বিশ্বজুড়ে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির বলেন, জিয়াউর রহমান একটি চেতনার নাম। এই চেতনাকে ধারণ করেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমরা কেবল নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। অবৈধ সরকারকে সরিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার ডাক দিতে তিনি দলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ইলিনয় রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জেসি হোয়াইটের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য শাহ মোজাম্মেল নান্টু বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই যুক্তরাষ্ট্রে তার নামে রাস্তা করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের বাধা পেরিয়ে আমরা সফল হয়েছি।
তিনি জানান, ২০০৪ সালে শিকাগো সিটি কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ২৫ মার্চ জিয়াউর রহমান ডে পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ইলিনয় স্টেটও একই স্বীকৃতি দিয়েছে। সর্বশেষ জিয়াউর রহমান ওয়ে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানকে সম্মান জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে জিয়াউর রহমান ওয়ে‘র নামফলক হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button