স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা ব্রিটেনের জন্য হুমকি

Scotlandব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্স পার্টির নেতা নাইজেল ফ্যারেজ বলেছেন, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা ব্রিটেনের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে। এ জন্য রানীর উচিত নীরবতা ভেঙে সরব হওয়া। ব্রিটেনের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য স্কটল্যান্ড সফর করার সময় তিনি এ কথা বলেন।
ফ্যারেজ বলেন, স্কটল্যান্ডের ব্যাপারে কথা বলার দায়িত্ব রয়েছে রানীর। কেননা ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে রয়েছে। রানীর উচিত প্রথা ভাঙা ও হস্তক্ষেপ করা। লেবার ও কনজারভেটিভ দলের এমপিরা রানীকে ঐক্যবদ্ধ ব্রিটেনের পক্ষে কথা বলতে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এ সপ্তাহের শুরুতে এমপিদের ওই উদ্যোগের সমালোচনা করে বাকিংহাম প্যালেস। এক মুখপাত্র বলেন, রানী নিরপেক্ষ এবং রাজপরিবার যেহেতু রাজনীতির ঊর্ধ্বে, এ জন্য রাজনীতিকদের উচিত প্রতিষ্ঠানটিকে এমনই থাকতে দেয়া নিশ্চিত করা । কিন্তু নাইজেল ফ্যারেজ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রানীর উচিত ব্যতিক্রম করা। কেননা এখন ঝুঁকিটা অনেক বেশি। এ দিকে ইতিহাস সৃষ্টির অপোয় স্কটল্যান্ডবাসী।
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা বিষয়ে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে অংশ নিতে প্রায় ৪৩ লাখ লোক নিবন্ধিত হয়েছেন, যা ভোট প্রদানে যোগ্য ব্যক্তিদের ৯৭ শতাংশ। স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে এত বেশি লোকের অংশগ্রহণে আর কোনো নির্বাচন হয়নি।
সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ নাগরিক দেশটির স্বাধীনতার বিপক্ষে আর ৪৭ শতাংশ পক্ষে।
দেশটির চিফ কাউন্টিং অফিসার জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবারের গণভোটে অংশ নিতে ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৩২৩ জন নিবন্ধিত হয়েছেন, যা সেখানকার যেকোনো নির্বাচন বা গণভোটের চেয়ে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে আট লাখ ভোটার পোস্টাল ব্যালট ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ ইতোমধ্যেই তারা তাদের ভোট দিয়েছেন। এর আগে ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ২৫ লাখ ভোট পড়েছিল, যা মোট ভোটের ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্য দিকে ২০১১ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ৫০ দশমিক ৬ শতাংশ।
স্কটল্যান্ড যাতে শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনের সাথেই থাকে তার জন্য মরিয়া দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকরা। ‘না’ ভোটের পে প্রচারণা চালাতে সেখানে ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রধান দুই দলের অন্য নেতারাও ভোটারদেরকে বোঝাতে স্কটল্যান্ডে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্কটল্যান্ডের মানুষের উদ্দেশে আবেগপূর্ণ এক আবেদনে বলেছেন, ১৮ তারিখের গণভোট টোরি দলের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রকাশের কোনো ভোট নয়। এটা ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ অখণ্ডতার ওপর ভোট। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিপে ভোট দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার কাছে দেশ দলের ঊর্ধ্বে।
তিনি বলেন, এই গণভোট সাধারণ নির্বাচন নয় যে সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না হলে পাঁচ বছর পর তা আবার নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে বদলে ফেলা সম্ভব। একবার সিদ্ধান্ত নিলে তা পরবর্তী শতক পর্যন্ত চিরস্থায়ী হবে।
অন্য দিকে স্কটল্যান্ডবিষয়ক মন্ত্রী স্কটিশ ন্যাশানাল পার্টির অ্যালেক্স স্যামন্ড বলছেন, ‘না’ ভোটের পে সমর্থন ক্রমেই কমছে।
তিনি বলেন, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে ‘না’ ভোটের পে প্রচারণা সফল হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো কয়েক মাস আগে যা বলেছিল তাই এখন আবার নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে ওরা বলতে এসেছে। স্কটল্যান্ডের মানুষ তাদের মনস্থির করে ফেলেছে। এখন আর তাদের নতুন করে বোঝানোর রাস্তা নেই। মূল কথা হলো স্কটল্যান্ড চায় উন্নত অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা।
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতার স্কটল্যান্ডে প্রচারণা চালাতে ছুটে যাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে স্কটল্যান্ডকে ব্রিটেনের মধ্যে ধরে রাখতে ব্রিটিশ নেতারা এখন কতটা মরিয়া।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button