কবি নজরুল আজো বৈপ্লবিক চেতনা ছড়াচ্ছেন

Nazrulবাংলা একাডেমি আয়োজিত বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, আগ্রাসন-উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবিস্তারী তৎপরতার বিরুদ্ধে কবি কাজী নজরুল ইসলাম আজো বৈপ্লবিক চেতনা ছড়াচ্ছেন। বর্তমানে ফিলিস্তিনের প্রতি সাম্রাজ্যবাদী ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেকের নীরব ভূমিকার প্রেক্ষিতে কাজী নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীর প্রাক্কালে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রবন্ধ পাঠ, বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা এ কথা বলেন। এতে ‘নজরুলকে আমরা যতটুকু জানি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল। নজরুল বিষয়ক বক্তৃতা  দেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরার কণ্ঠে উদ্বোধন সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, কাজী নজরুল ইসলামকে কেবল কিছু বিশেষ বিশেষণে বন্দি করে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। বরং তাঁকে বুঝতে হলে তাঁর সমগ্রতার স্বরূপ অন্বেষণ করতে হবে। ব্যক্তিগত আবেগকে শিল্পের মধ্য দিয়ে কী করে সমষ্টির অঙ্গীকারে রূপান্তর করা সম্ভব- বাংলা সাহিত্যে নজরুল তাঁর বিরল-ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে জনগণ মনচিত্তকে প্রবলভাবে আলোড়িত করার ক্ষেত্রে নজরুলের ভূমিকা এখনও বিস্ময়ের জন্ম দেয়।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ফিলিস্তিনের প্রতি সাম্রাজ্যবাদী ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেকের নীরব ভূমিকার প্রেক্ষিতে কাজী নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। নজরুল তাঁর সাহিত্যজীবনের শুরুতেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত, আরববিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বৈপ্লবিক উত্থান এবং সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনমানুষের সংগ্রামকে তাঁর কবিতা, গদ্য ও গানে ভাস্বর করেছেন অখন্ড মানবতার প্রতি গভীর বিশ্বাস, ভালোবাসা ও শিল্পিত অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, আগ্রাসন-উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবিস্তারী তৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলা সাহিত্যে বৈপ্লবিক চেতনা সঞ্চারে নজরুলের অবদান অসামান্য।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, নজরুলের গভীর স্বাদেশিক চেতনা, আন্তর্জাতিকতাবোধ ও সমন্বয়ধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। নজরুলকে বুঝতে হলে তাঁর বিচিত্রমাত্রিক সত্তার দিকে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে।
শামসুজ্জামান খান বলেন, স্বল্পতর সাহিত্য জীবনে নজরুলের বিচিত্র সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে গভীর বিস্ময়-উদ্রেকী ঘটনা। নানা মাত্রার নজরুলকে সঠিকভাবে চিনতে হলে নতুন করে নজরুল পাঠ ও চর্চা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, নজরুলকে চেনার মধ্য দিয়ে আমরা মূলত বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী-বর্ণিল অধ্যায়কেই অনুধাবন করতে সক্ষম হব।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী খালিদ হোসেন, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ইয়াকুব আলী খান এবং ফারহানা শিরিন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button