সিলেটের ঝরনা ছুঁতে পারা না পারা

Sylhetমেহেদী আকরাম: হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সিলেটে যাবো। যদিও এর আগে একবার সিলেটে গিয়েছিলাম বন্ধুদের নিয়ে আর এবার যাবো পরিবার নিয়ে। ৬ আগষ্ট হাসান আমার অফিসে আসলো এবং দুজনে সিলেট যাবার সিন্ধান্ত চুড়ান্ত করলাম যদিও বিছনাকান্দির ব্যাপারে প্রথমে আগ্রহ দেখিয়েছে দিশা ভাবি (হাসানের বউ)। যেহেতু আমরা হাসানের মাইক্রোবাস নিয়ে যাবো তাই আমাদের আরেক বন্ধু ইমরানকে মোবাইল করে বললাম আমরা তিন পরিবার সিলেটে বেড়াতে যাবো তুই ঢাকা আসার টিকিট আজ নিশ্চত কর, ইমরান খুলনাতে থাকে। রাতে ইমরান নিশ্চিত করলো যে ১৪ তারিখে সকালের ট্রেনে ঢাকা আসবে। এরপরে আমার বউকে আমি জানালাম আমরা ১৫ তারিখে সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছি ও তখন কুষ্টিয়াতে অবস্থান করছে, ঢাকা আসলো ৯ আগষ্ট। ১৪ তারিখ সন্ধায় ইমরান ভাবিকে নিয়ে ঢাকা আসলো, আমরা দুই বন্ধু রাতের বেশীর ভাগই গল্প করে কাটালাম।
১৫ আগষ্ট ভোর ৪টায় ইমরানকে বিছানা থেকে তুলে হাসানকে মোবাইল করে ঘুম ভাঙ্গালাম। ভোর ৫টায় হাসান মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা বাসার সামনে আসলো আমরা ৪জন মাইক্রোতে উঠলাম। হাসানের ২বছরের মেয়ে, গাড়ির ড্রাইভার এবং আমরা ৬জন রওনা দিলাম সিলেটের উদ্দ্যেশে। আগের রাতে বেশ ভারি বৃষ্টি হয়েছে এবং তখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, ওদেরকে আগেই বলছিলাম ছাতা নিতে কিন্তু পরে দেখলাম শুধু আমিই ছাতা নিয়েছি (পরে অবশ্য ওরা পথ থেকে ছাতা কিনেছে)। ১৫ তারিখ শুক্রবার আমরা শ্রীমঙ্গল-লাউয়াছড়া-মাধবকুন্ড হয়ে রাতে সিলেটে (হোটেল ডালাস, জেল রোড) পৌছালাম।
১৬ আগষ্ট ভোরে আমরা নাস্তা করে বিছনাকান্দির উদ্দ্যেশে রওনা হলাম। আমরা যানতাম শালুটিকর বাজার পার হয়ে ডানে যেতে হবে (সিলেট থেকে শালুটিকর ১৬ কিলোমিটার) আর গোয়াইনঘাটের পথে যেতে যেতে বঙ্গবীর মোড় এসে বাঁ দিকে মোড় নিতে হবে। শালুটিকর পার হবার কিছু পরেই রাস্তাটা যেন হঠাৎই নদীর মাঝে সেতুর মত রূপ পেল। দুই পাশে পানি আর পানি আর আমরা মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলছি। মাঝে মাঝে রাস্তা পার হয়ে ডান দিকের পানি বাম দিকে যাচ্ছে। এভাবে আমরা ২২ কিলোমিটার পথ চলে বেলা ১১টায় হাদারপার বাজারে পৌছালাম। আমাদের মিসেসগন কেউই বড় নৌকা ছাড়া উঠবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলো। আমরা হাদারপার ঘাটে গিয়ে বিছনাকন্দি, পান্তামাই এবং লক্ষণছড়ি নৌকাতে যাবো স্থির করে নৌকা ভাড়া করলাম ৩০০০ টাকায়। হাসানকে বললাম সাথে যদি কাউকে নেয়া যায় তাহলে খরচ কম হবে। নৌকা ভাড়া করার পরে আমি বাকি সবাইকে নিতে বাজারে আসলাম এসে দেখি হাসান ৭ জনের আরেক দলকে নৌকাতে উঠিয়েছে। আমরা রওনা দিলাম বিছনাকান্দির দিকে।
বিছনাকান্দি পৌছানোর আগেই আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে মেঘগুলো পাহাড়কে আলিঙ্গন করছে আর পাথরের পাহাড় ছুঁয়ে জল গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে বিছনাকান্দির পদদেশে। সেই পাথর ছোঁয়া জলে অপরূপ রূপ ধারণ করে আছে প্রকৃতির অপ্সরা বিছনাকান্দি। ডুবুডুবু পাথর আর জলখেলার দৃশ্যে এ অপ্সরা মুহূর্তেই মন কেড়ে নেবে যে কোনো সৌন্দর্য পিপাসুর।
দূরের চেরাপুঞ্জি আর কাছের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জল আর পাথুরে বিছানায় বিছনাকান্দির নিবাস। সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার সীমান্তে পাথর কোয়ারী হিসেবে পরিচিত বিছানাকান্দি। বছরই অনান্য সময়ের তুলনায় বিছনাকান্দি বর্ষাকালে তার আসল রূপ মেলে ধরে। বর্ষার ভরাট জলে তার মায়াজাল আরও বেশি বিস্তৃত হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button