আওয়ামীপন্থী জামায়াত বনাম বিএনপিপন্থী জামায়াত !

জ. হাসান:
আওয়ামী পন্থী জামায়াতকে ৫০ থেকে ১০০ টি সংসদীয় আসন দেওয়া হবে। সাথে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। জাপা স্টাইলের গৃহপালিত বিরোধীদল হতে না চাইলে মন্ত্রীর ক্ষমতা ও মর্যাদা সম্পন্ন ডজন খানেক বিশেষায়িত ব্যাক্তি সুযোগ সুবিধা পাবেন। মামলা কম হবে। প্রচলিত মামলার ব্যাপারে সরকার অনেক উদার থাকবে।
আর বিএনপি পন্থী হলে উপরের সুযোগ সুবিধার সম্ভাবনা উবে যাবে। তখন অসুস্থ থাকলেও রায় ঘোষনার বিষয়টিকে সরকার চিন্তাভাবনায় রাখবে। দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিবন্ধন বাতিল বহাল ও নিষিদ্ধকরন সবই চলবে।
বোনাস হিসাবে বিএনপির একদল “স্থায়ী” নিষ্কর্মা কর্তৃক সরকারের সাথে গোপন সমঝোতার প্রচারনা আতাতের বানী আকাশে বাতাসে তীব্র বেগে ছড়িয়ে পরবে।
উপরের প্রত্যেকটি মনোযোগ আকর্ষন করার মতো, কিংবা পিলে চমকানো তথ্য, সম্ভাবনা ও প্রচারনা গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যমে আসছে।
এমনকি অফিস ফেরত ক্লান্ত-অবসন্ন বাস যাত্রীরাও এ বিষয়টিতে আলোচনায় বেশ মজা পান।
মাওঃ আব্দুর রহীমের (মরহুম) সময়ে জামায়াতে ভাঙন ছাড়া আর কখনই জামায়াতে প্রকাশিত কোন ধারা লক্ষ্য করা যায়নি।
আবার ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে ৮০র দশকে যুবশিবির তৈরী হওয়া ছাড়া আর কোন খন্ডিত অংশ আসেনি। জামায়াতের আব্দুর রহীম ধারাটি কিংবা শিবিরের যুবশিবির ধারাটির এখন আর কোন অস্তিত্বই নেই। আর জামায়াত মাওঃ আব্দুর রহীমকে এখনও সেই আগের মতো সম্মান দেয়। উনার লেখা অনেক বই ও ইসলামী সাহিত্য জামায়াত-শিবিরের লোকদের অবশ্য পাঠ্য।
আজ জামায়াতে আওয়ামী পন্থি ও বিএনপি পন্থী দুটি ধারার কথা মিডিয়াতে বলা হলেও জামায়াতের ভীতরের লোকদের কথা “আমরা শুধুই জামায়াতে ইসলামী”। না আওয়ামী পন্থি না বিএনপি পন্থী জামায়াত।
তারপরেও চীর সংকটাপন্ন জামায়াত এক দারুন আত্মপরিচয় বিলুপ্তির সন্ধিঃক্ষণে দাড়িয়ে। জামায়াতের নামের সাথে সবসময় “জামায়াতে ইসলাম” বলা হলেও মিডিয়ার কল্যানে (?) এখন তা দুটি ধারায়ঃ আওয়ামী পন্থী জামায়াত বনাম বিএনপি পন্থী জামায়াত।
জামায়াত নেতা কর্মীরা শুরুতে প্রচারণাটিকে উপভোগ করলেও হাল আমলে তাদের কাছে বিষয়টি বিব্রতকর বলে ঠেকছে।
সঙ্গী হলে জামায়াত জঙ্গি হয়না“ – এট বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ক্ষেত্রে অতীতে প্রমানিত সত্য ছিলো।
এরশাদ উত্তর আ’লীগ প্রথমবার জামায়াত সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের বিরুদ্ধে “জঙ্গী” জাতীয় খেতাব যোগ হয়নি। তখন জামায়াত বিএনপির রোষানলে পড়ে।
আবার জামায়াত যখন বিএনপির সাথে গত দেড়যুগের লোকসানী হিসাবী সম্পর্ক গড়ে তুলে তখন জামায়াতের অতীতের সকল অতীত সামনে চলে আসে।
যাদের সঙ্গী জামায়াত, দুর্বলতা আর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একের পর এক পরীক্ষায় ফেলতে থাকে তারা। তবে জামায়াত আস্থাশীল হয়ে উঠতে পারে নি বিএনপির সাথে।
জোটের নামে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জামায়াত দেখেছে “যার বিয়ে তার খবর নেই”। অর্থাৎ জামায়াতকে মাঠে নামিয়ে এক পর্যায়ে বিএনপি ঢুকে গিয়েছিলো প্রেসক্লাব, নয়াপল্টন আর গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে।
গুলি আর টিয়ারশেলের মোকাবেলায় কয়েকশ লোকের জীবনহানীর পরও জামায়াত হয়ে যায় জঙ্গী।
জামায়াত নিজেরা আওয়ামী পন্থী বা বিএনপি পন্থী না হলেও প্রচারনায় মানুষের একটা আগ্রহ কিন্তু সত্যিই তৈরী হয়েছে।
বিগত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের বিস্ময়কর সাফল্য বরাবর নির্বাচনে অনিচ্ছুক দলটিকে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি  নির্বাচনে আগ্রহী করে ‍তুলেছে। এটা দেখে ফেসবুকে একজন লিখেছেনঃ
নির্বাচনের সময় তাদের প্রচারনায় সাধারন নারী পুরুষ ও অংশ নিয়েছে। মিছিলে লুঙ্গী পড়া মানুষ দেখে মনে হচ্ছে এই হরতালে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। যে আন্দোলনে জনতার সায় থাকে তা সফল হতে বাধ্য। জামায়াত-শিবিরের চলমান আন্দোলনে কেবলমাত্র গণমানুষের সায় নয় প্রবল অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। দেশের কিছু কিছু এলাকায় জামায়াতের ভালো নেতৃত্ব থাকায় সেখানকার মানুষ সংগঠিত হবার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেক এলাকায় স্থানীয় নেতৃত্ব দুর্বল হওয়ায় জনসমর্থন থাকার পরও সংগঠিত প্রতিবাদ খুব প্রবল নয়। জামায়াত যে জামায়াত এই বিষয়টি জামায়াত বুঝতে পারলো এক বছর আগে। তারা এটা বিশ্বাস করতে পারলো যে জামায়াত একাই হরতালের মতো কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারে। জামায়াতের এই উত্থান আগামী দিনের বাংলাদেশকে একটি বড় পরিবর্তনের মুখোমুখী করবে বলে আমার বিশ্বাস। জামায়াত হলো সেই সিংহ শাবক যে ছোট বেলায় ভেড়ার দলে মিশে তার আত্নপরিচয় ভুলে গিয়েছিল।”
তুরস্কের নতুন নির্বাচনী ফলাফল, পশ্চিমা বিশ্বে জামায়াতের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রমবর্ধমান সমর্থন, দলীয় নেতৃত্বে ছাত্রশিবির থেকে উঠে আসা একঝাক মেধাবী নেতৃত্ব জামায়াতকে মূলধারায় ই রাখবে। জামায়াতের নেতা কর্মীরা এমনটাই মনে করেন।
সমঝোতার প্রচারনা সত্য হউক কিংবা মিথ্যা, জামায়াত যে এ মুহুর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম “ফিয়ার ফ্যাক্টর” তা বলাই যায়।
জামায়াত যখন বিএনপি পন্থী হয়, তখন আ’লীগ নতুন করে হিসেব কষে। আর জামায়াত কখন ২০-দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যায়, এ আশংকায় সময় কাটে অনেক বিএনপি নেতার।
দেখে শুনে অপেক্ষা করতে হবে নিদেন পক্ষে আরও একটি আগত “ঈদের পরের আন্দোলনের” সত্যতার উপর।
লেখকঃ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button