ইহুদিবাদী প্রচারনার নতুন লক্ষ্য

Yanbiমূল: ইয়াভনি রিডলি, অনুবাদ : হাসান শরীফ
[ ইয়াভনি রিডলি ব্রিটিশ সাংবাদিক। তিনি বৃটেনের সানডে টাইমস, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, দ্য অবজারভার, দ্য মিরর এবং নিউজ অব দ্য ওর্য়াল্ড পত্রিকার হয়ে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের পর সানডে একসপ্রেস পত্রিকার পক্ষে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আফগানিস্তান যান। সেখানে তিনি তালেবান যোদ্ধাদের হাতে আটক হন। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহন করেন। ইহুবাদী তৎপরতা ও পশ্চিমা গনমাধ্যমের ভুমিকা নিয়ে তিনি লিখে থাকেন।] ইসরাইলের প্রতি জনসমর্থন কমতে থাকায় ইহুদিবাদী প্রচারযন্ত্র ও প্রচারবিদরা এখন ব্রিটেনে তার বন্ধুদের এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন ফিরে পেতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে।
গাজায় নারী, শিশু ও হাসপাতালগুলো কেন ইসরাইলের বিধ্বংসী সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে? যেসব উপস্থাপক এই প্রশ্নটি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে এই বলে যে ‘তুমি কী করতে, তুমি যে শহরে বাস কর তা যদি আক্রান্ত হতো?’
আসলেই এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য খুবই সহজ পাল্টা প্রশ্ন। খুব বেশি দিন হয়নি, ব্রিটেনও আক্রান্ত হয়েছিলো। আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি বা আইআরএ’র ৩০ বছরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সময় বার্মিংহ্যাম, ম্যানচেস্টার, লন্ডন, ব্রাইটন, গিল্ডফোর্ডসহ বিভিন্ন নগরী আক্রান্ত হয়েছে। এসব হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ১৮ শ’ লোক। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা তথাকথিত ‘আইরিশ গোলযোগ’ মোকাবিলা করতে গিয়ে ওয়েস্টমিনিস্টার একবারের জন্যও বেলফাস্ট বা ডাবলিনের দিকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়েনি। আইআরএর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য কখনোই হেলিকপ্টার গানশিপ, যুদ্ধবিমান বা গানবোট পাঠিয়ে বেসামরিক লোকজনের ওপর গোলাবৃষ্টি বর্ষণ করা হয়নি।
অতি সম্প্রতি লন্ডনে ভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হয়েছে। সন্ত্রাসীরা ২০০৫ সালের ৭ জুলাই পাতাল ট্রেনে হামলা চালিয়ে নির্দোষ ৫২ বেসামরিক লোককে হত্যা এবং ৭০০ জনকে আহত করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের জবাব ছিল সংযত। ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের যেসব শহরে আত্মঘাতী বোমারুরা থাকে সেখানে ব্রিটিশ সরকার বোমা হামলা চালায়নি বা তাদের পরিবারগুলো যেসব বাড়িতে থাকে, সেগুলো গুঁড়িয়ে দেয়নি।
ওই প্রশ্নটি আরেকটু লম্বা করে কামকাতর ইসরাইলি অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী ন্যাফতালি বেনেট কথার ফুলঝুরি ফুটিয়ে স্কাই নিউজের উপস্থাপক সামান্থা সাইমন্ডসকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন ২০০টি রকেট আঘাত হানলে বৃটেন কী করত। হ্যাঁ, খুবই ভালো কথা। কিন্তু এমনটা কখনোই ঘটত না। কারণ ব্রিটেন কখনোই ১৫ লাখ উদ্বাস্তুকে দৈনন্দিন খাবার, পানি এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী ছাড়াই গাদাগাদি করে ছোট্ট কোনো এলাকায় আবদ্ধ করে রাখত না। বৃটেন কাউকেই ওই অবরুদ্ধ স্থানে যেতে বা ব্যবসা করতে বাধা দিত না। ইসরাইল ঠিক এই কাজটিই গাজার জনগণের সাথে করেছে এবং করে যাচ্ছে।
এ কারণেই গাজা উপত্যাকা নামের খোলা কারাগারটির জনসাধারণ বলে ওঠেছে, ‘অনেকে হয়েছে, আর নয়’। তারা এখন যার হাতে যা কিছু আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করেছে।
অবিচল মিজ সাইমন্ডস বিনীতভাবে মন্ত্রী মহোদয়ের (মন্ত্রী যতক্ষণ নিজেকে সংযত রাখতে পেরেছিলেন) কাছে জবাব পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ইসরাইলের মন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যর ছোট দেশ কাতারের দিকে হঠাৎ করেই যেনো স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লেন, সেটা যে আসছে, কেউ লক্ষ করেনি।
কাতার উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চুক্তির জন্য প্রণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তত এই একটি আরব দেশ বাস্তবসম্মত সমাধানের (যা হবে গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসা করার মতো) জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কাতারের এই প্রচেষ্টা সফল হবার নয়। বেনেট এবার ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল কাতারের আয়োজনের সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য বিশ্ব ফুটবলের পরিচালনা সংস্থা ফিফার প্রতি আহ্বান জানালেন।
‘আমাদেরকে বিষয়টি সেখানেই রাখা উচিত,’ মিজ সাইমন্ডস শান্তভাবে বললেন। ‘আপনাকে ধন্যবাদ মি. বেনেট।’
এমন ধরনের সংযম প্রশংসনীয়। তবে সাইমন্ডস এই প্রশ্নটি করেননি যে ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্থা উয়েফা যদি ফিলিস্তিনিদের প্রতি বর্ণবাদী নীতির কারণে ইসরাইলি জাতীয় দলকে বহিষ্কার করে, তবে তিনি কী বলবেন। সম্ভবত এই প্রশ্নটি না করেই তিনি ভালো করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button