চিকিৎসাসেবায় পছন্দের তালিকায় এগিয়ে মালয়েশিয়া

Malaysiaসালমান ফরিদ: এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ব্যয় কম। ঝক্কি-ঝামেলা দুর্ভোগও নেই। চিকিৎসা ভিসা নিতে সমস্যা হয় না। মুসলিম দেশ হওয়ায় হালাল খাবারের নিশ্চয়তাও আছে- এসব কারণে চিকিৎসাসেবায় বাংলাদেশীদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে মালয়েশিয়ার নাম। এখানে রোগীরা সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক থেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই দ্রুত বাড়ছে সেবাগ্রহীতার হার। আগে যারা ওইসব দেশে যেতেন- এখন তারা যাচ্ছেন কুয়ালালামপুরে। এক পরিসংখানে দেখা গেছে গত ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে কুয়ালালমপুরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি। আর এটি হচ্ছে মালয়েশিয়ার চিকিৎসা সেবার আমূল পরিবর্তনের কারণে। স্বাস্থ্যসেবার গুণগতমান, হালাল খাদ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে স্বাস্থ্য পর্যটনে সাফল্য অর্জন এগিয়ে দিয়েছে দেশটিকে। ফলে ভাল চিকিৎসার সন্ধানে প্রতিদিনই মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। এজন্য উন্নত বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার ৭২টি আন্তর্জাতিকমানের বিশেষায়িত হাসপাতালে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়া ছাড়াও দু’দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকা- একই। এজন্য দেশটির প্রতি ঝোঁক বেশি বাংলাদেশীদের। জানিয়েছেন সে দেশের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িতরা।
ঢাকায় অবস্থিত সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া হেলথ কেয়ারের সিইও ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. সঙ্কর চন্দ্র পোদ্দার বলেন, মালয়েশিয়ার চিকিৎসকরা অত্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করে থাকেন বলে প্রতিদিনই বাড়ছে বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবার রোগীদের ভিড়। তিনি জানান, খুব আশঙ্কাজনক রোগীদেরকে ভিসা ছাড়াও পাঠানো হয়। ওখানে তাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক হসপিটালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য অনেকে অনেক রোগী অন্য দেশে না গিয়ে প্রথমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে ৪,৫০০ রোগী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা নিতে যান। যা ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১১,৮০০ জনে। ২০১২ সালে এটি ছিল ১৩,০০০ কিন্তু ২০১৩ সালে গিয়ে তা পৌঁছে ১৫০০০-এর উপরে। মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার সার্ভিসেস (এমএইচএসএল) জানায়, উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসা সেবায় মালয়শিয়ায় প্রতিদিন ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার (বার্মা), ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা পর্যটকদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোগীদের বেশিরভাগকেই কুয়ালালামপুরের আশপাশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে বেশি পাঠানো হয়। বাংলাদেশের রোগীদের জন্য ওখানকার হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন সেবার উপরে রয়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ছাড়। এমনিতেই অন্য দেশগুলোর তুলনায় কুয়ালালামপুরের ব্যয় অনেক সাশ্রয়ী। সিএবিজি ট্রিটমেন্টের জন্য সিঙ্গাপুরে খরচ ৩২,০০০ মার্কিন ডলার, থাইল্যান্ডে ২৩,০০০ ডলার কিন্তু এর খরচ মালয়েশিয়ায় ২০,৮০০ ডলার। ভাল্‌ভ রিপ্লেসমেন্টে সিঙ্গাপুরের খরচ ২৯,৫০০ ডলার, থাইল্যান্ডে ২২,০০০ ডলার এবং মালয়েশিয়ায় ১৮,৫০০ ডলার। হিপ রিপ্লেসমেন্টে সিঙ্গাপুরের খরচ ১৭,০০০ ডলার, থাইল্যান্ডে ১৩,০০০ ডলার এবং মালয়েশিয়ায় ১২,৫০০ ডলার। এভাবে নী রিপ্লেসমেন্ট, স্পাইনাল ফিউশন, আইভিএফ সাইকেল, গ্যাস্ট্রিক বাইপাস, রিনোপ্লাস্টিসহ বিভিন্ন সেবায় থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে কম খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায়। মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার সার্ভিসেস (এমএইচএসএল) এর প্রধান নির্বাহী ডা. মেরি ওং লাই লিন বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে। কারণ এখানকার স্বাস্থ্য সেবা ও আতিথেয়তা মানুষ মুগ্ধ। এছাড়া এখানে মুসলমানদের জন্য হালাল খাবার ও আবাসনের সুব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ক্যানসার ও হার্টের বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনের সহায়তায় সাফল্যের সঙ্গে করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বাংলাদেশীরা মালয়েশিয়ার যে কোন হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে ১৬৩১২ নম্বরে ফোন দিয়ে এখন বিস্তারিত জানতেও পারছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button